সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বাঁশখালীতে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ১৩ চেয়ারম্যানের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:২৯ পিএম

শেয়ার করুন:

বাঁশখালীতে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ১৩ চেয়ারম্যানের অভিযোগ

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সদ্য প্রয়াত অধ্যাপক তাজুল ইসলামের মৃত্যু পরবর্তী এক সাংবাদিকের দেওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্ট্যাটাসটি দেওয়ার পর বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় তোলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্টদাতা উজ্জ্বল বিশ্বাস বাঁশখালী পৌরসভার দক্ষিণ জলদি এলাকার মৃত নির্মল কান্তি বিশ্বাসের ছেলে। তিনি দৈনিক কালের কন্ঠ ও সুপ্রভাত বাংলাদেশ নামক দুটি পত্রিকার বাঁশখালী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।


বিজ্ঞাপন


অধ্যাপক তাজুল ইসলামের মৃত্যু পরবর্তী সাংবাদিক উজ্জ্বল বিশ্বাস তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে লিখেন, ‘মৃত্যুটা কিন্তু নিশ্চিত জানতাম!! মৃত্যুর দুইদিন আগেও বেয়াদবি করেছিল, জঘন্য একটা স্বাস্থ্য কমিটি দিয়ে!! হে মৃত মানব তারপরও তোমার জন্য শোকাহত!!’

এ ঘটনায় সাংবাদিক উজ্জ্বল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন আক্তার বরাবর অভিযোগ দিয়েছে বাঁশখালী চেয়ারম্যান সমিতি। বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত অভিযোগ ইউএনওর কাছে দেন সংগঠনের সভাপতি আ ন ম শাহাদাত আলম ও সেক্রেটারি মুজিবুল হক চৌধুরী।

অভিযোগদাতা চেয়ারম্যানরা হলেন—পুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিন, সাধনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কে এম সালাহউদ্দিন কামাল, খানখানাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন হায়দার, বাহারছড়া ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. ইউসুফ, কালীপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও বাঁশখালী চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আ ন ম শাহাদাত আলম, কাথরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ইবনে আমিন, সরল ইউপি চেয়ারম্যান রশিদ আহমদ চৌধুরী, বৈলছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন, শীলকূপ ইউপি চেয়ারম্যান কায়েস সরওয়ার সুমন, চাম্বল ইউপি চেয়ারম্যান ও বাঁশখালী চেয়ারম্যান সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হক চৌধুরী, পুঁইছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান তারেকুর রহমান, শেখেরখীল ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা মোরশেদুল ইসলাম ফারুকী ও ছনুয়া ইউপি চেয়ারম্যান এম হারুনুর রশীদ।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাজুল ইসলাম ইন্তেকাল করেন। তাজুল ইসলাম দ্বিতীয় বারের ন্যায় বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বাঁশখালী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও পশ্চিম বাঁশখালী স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি এবং বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য সহ অসংখ্য শিক্ষা, সামাজিক, ধর্মীয় ও ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে আমৃত্যু সমাজের জন্য কাজ করে গেছেন। জানাজায় হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে তাজুল ইসলামের জনপ্রিয়তা এবং এলাকার মানুষের আন্তরিকতা ও ভালোবাসা ছিল।


বিজ্ঞাপন


এ বিষয়ে বাঁশখালী চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি ও কালীপুর ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আ. ন. শাহাদত আলম বলেন, তাজুল ইসলাম আমাদের সহকর্মী। তিনি মৃত্যুর দুইদিন আগেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় হাজির হয়েছিলেন। জীবদ্দশায় তিনি সবসময় সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার চেষ্টা করতেন। স্থানীয় সরকারের একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির মৃত্যু পরবর্তী একজন সাংবাদিকের এরকম পোস্ট প্রদান ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার পাশাপাশি আমাদেরকে খুবই মর্মাহত করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা ইউএনও মহোদয় বরাবর অভিযোগ প্রদান করেছি।

বাঁশখালী চেয়ারম্যান সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও চাম্বল ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী বলেন,  আমাদের সহকর্মী বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক তাজুল ইসলামের মৃত্যু পরবর্তী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কুরুচিপূর্ণ, আপত্তিজনক, মানহানিকর ও বিকৃত মানসিকতার পোস্ট প্রদানকারী উজ্জ্বল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইউএনও মহোদয়ের কাছে বিনীত আবেদন জানাচ্ছি। আমরা আজকে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি তুলে ধরেছি।

অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংবাদিক উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, স্ট্যাটাসে কোন ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ করিনি, এটা একান্তই আমার আত্মীয়গত বিষয়। কাকতালীয়ভাবে তাজুল ভাইয়ের মৃত্যুর সাথে সম্পর্কিত হতে পারে বা কেউ ধারণা করতে পারে বলে বিষয়টি  আমাকে কিছু লোক জানালে আমি ভাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাৎক্ষণিক মুছে দিই। ওই পোস্টের আগের ও পরের পোস্টগুলো এখনও আছে। যা তাজুল ভাইয়ের প্রতি অশ্রদ্ধা বা ঘৃণা জানানোর কোন দৃষ্টিকটু ইঙ্গিত বহন করে না। তাজুল ভাই যেখানেই দেখতেন ভাই সম্বোধন করে মতো বিনিময় করতাম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন আক্তার বলেন, চেয়ারম্যান সাহেবরা একটি অভিযোগ দিয়েছেন।  অভিযোগটি শুধু আমাকে নয়, এমপি স্যারকেও দিয়েছেন। আমরা সবাই মিলে ডিসিশন নেব কি করা যায়।

প্রতিনিধি/এইচই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর