সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

অসহায় মানুষের মুখে ইফতার তুলে দিচ্ছে ‘প্রজ্বলিত গোপালগঞ্জ’

সুকান্ত কুমার সরকার
প্রকাশিত: ১৯ এপ্রিল ২০২২, ০৯:৩৬ এএম

শেয়ার করুন:

অসহায় মানুষের মুখে ইফতার তুলে দিচ্ছে ‘প্রজ্বলিত গোপালগঞ্জ’

দুপুরের কাঠ ফাঁটা রোদের তেজ একটু কমে এলেই শুরু হয়ে যায় তাদের কর্মব্যস্ততা। নিজ হাতে চাল ধুয়ে, মাংস বেছে রান্নার জন্য প্রস্তুত করেন বড় পাত্র। এরপর তাতে রান্না শুরু করে দেন গোপালগঞ্জের সদর উপজেলার একদল তরুণ-তরুণী। রান্না শেষে পরমযত্নে তা প্যাকেট করে নিয়ে রওনা হন গোপালগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায়। হাসিমাখা মুখ নিয়ে খাবারের প্যাকেটগুলো তুলে দেন রোজা রাখা পরিশ্রান্ত, ক্লান্ত মানুষের হাতে। খাবারের প্যাকেট হাতে পেয়ে তৃপ্তির হাসি দেখা যায় মানুষগুলোর মুখে।

প্রতিদিন এমন করেই সুবিধাবঞ্চিত পথচারী, হাসপাতালে থাকা রোগী, রিকশাচালক, ইজিবাইক চালক, এতিম, অসহায় রোজাদারদের মুখে ইফতার তুলে দিচ্ছে ‘প্রজ্বলিত গোপালগঞ্জ’ নামের একটি মানবিক সংগঠন। বিনামূল্যে ইফতার পেয়ে খুশি হন মুসল্লিরা। অনেকেই দোয়া করেন সংগঠনের সেচ্ছাসেবীদেরকে।


বিজ্ঞাপন


সদর উপজেলার কুয়াডাঙ্গা গ্রামরর হানিফ মিয়া একজন ভ্যানচালক। ইফতার পেয়ে তিনি বলেন, ‘এই ইফতার পেয়ে অনেক খুশি হয়েছি। তাদের এমন খাবার দেওয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধি পাক, তাদের ভালো হোক।’

gopalgang

বাগেরহাটের মোল্লাহাট গ্রামে লতিফা বেগম শাশুড়িকে চিকিৎসার জন্যে ভর্তি করেছিলেন গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। রোজা থেকে ইফতারের আগে খাবার নিতে বাইরে এলে তার হাতে খাবারের প্যাকেট তুলে দেয় সংগঠনটির সেচ্ছাসেবীরা। এসময় তিনি বলেন, ‘আমরা এসেছি অনেক দূর থেকে। হাসপাতালে খাবার আনা অনেক কষ্টের। এই খাবার পেয়ে খুশি হয়েছি।’

মো. নাজিম নামে এক রিকশা চালক বলেন, ‘সারাদিন রোজা রেখে দিন শেষে কোনো রকমে ইফতার করি। যা আয় করি, তাতে ভালো খাবারের কথা চিন্তাই করা যায় না। আজকে এরকম ইফতার করতে পারবো, ভেবেই অনেক ভালো লাগছে।’


বিজ্ঞাপন


gopalgang

সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবক ও সদস্য মো. রেজোয়ান আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমি বিগত চার বছর ধরে প্রজ্বলিত গোপালগঞ্জ সংগঠনে কাজ করছি। গত বছরের মতো এবছরও রমজানে ত্রিশ দিন ইফতার কার্যক্রম চালু রেখেছি। সংগঠনের সদস্যরা নিজ হাতে বাজার করাসহ রান্না ও ইফতার বিতরণ করে থাকে। অসহায় মানুষের সেবায় যেন নিজেদের উৎসর্গ করতে পারি মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই নিবেদন।’

সংগঠনের আরেক স্বেচ্ছাসেবী বলেন, ‘আমরা রোজা রেখে অসহায় মানুষদের জন্য ইফতারি নিয়ে আসি এবং বিতরণ করি। এতে এক ধরনের আত্মতৃপ্তি পাই।’

সদর উপজেলার ইসলামপাড়ার জোবায়ের রহমান রহিম ঢাকা মেইলকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে প্রজ্বলিত গোপালগঞ্জ মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। এরা অসহায় মানুষদের নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি রক্তদান, শীতের সময় বস্ত্রদানসহ বিভিন্ন ভালো কাজ করে। এটা খুব ভালো। এই প্রজন্মের তরুণরা এভাবে ভালো কাজে এগিয়ে আসলে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে।

gopalgang

‘জ্বলে ওঠো মানুষের কল্যাণে’ স্লোগানকে সামনে রেখে ২০১৭ সালে যাত্রা শুরু করে গড়ে ওঠে এই সংগঠন। রাজিব মিয়া এই সংগঠনের প্রধান উদ্যোক্তা। মাত্র দশ সদস্য নিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে শিক্ষার্থী, আইনজীবী, শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার সাড়ে তিনশর অধিক সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে এই সংগঠনে।

রাজিব মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সমাজের সুবিধাবঞ্চিত, অসহায় ও পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাদের জন্য একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা প্রতিবছরের মতো এবারো ইফতার বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছি।’

gopalgang

রাজিব মিয়া জানান, ইফতার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মূলত সংগঠনের সদস্যদের কাছ থেকে সংগ্রহীত চাঁদা এবং অনুদানের অর্থ দিয়েই ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়। চাল, তেল, মসলা, মাংস ইত্যাদি ক্রয়সহ একদিনের ইফতার প্রস্তুতে আনুমানিক আট হাজার টাকা খরচ হয়। দৈনিক ৫০ থেকে ১৫০ জনের ইফতার তৈরি করা হয়।

গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা ঢাকা মেইলকে বলেন, প্রজ্বলিত গোপালগঞ্জ নামে সংগঠনটি বিভিন্ন সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে ও সেবামূলক কাজ করেছে। আমাদের তরুন প্রজন্ম এসব কাজ করছে—এটি নিঃসন্দেহে প্রসংশনীয় কাজ। মানবসেবায় যে সকল সংগঠন কাজ করে এবং করবে জেলা প্রশাসন সব সময় তাদের পাশে থাকবে। এসকল মানবিক সংগঠনের সঙ্গে সঙ্গে সমাজের বিত্তবান মানুষদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর