ফেনীর সোনাগাজীতে অভাবের সংসারের হাল ধরতে তিন বছর আগে সৌদি আরবে পাড়ি দেন আমির হোসেন মাসুদ (৩৫)। তিনি রিয়াদে একটি রেঁস্তোরায় কাজ করতেন। তার ও বড় ভাইয়ের আয়েই চলতো বয়স্ক মা ও পরিবারের জীবন-জীবিকা। আমির হোসেনকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন তার মা-স্ত্রী ও ভাইয়েরা। কিন্তু মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর দেশে ফেরা ও পরিবারের সদস্যদের সেই স্বপ্ন নিমেষেই শেষ হয়ে যায়।
বাংলাদেশ সময় শুক্রবার (২২ ) সন্ধ্যায় সৌদি আরবের রিয়াদ শহরে সড়ক পারাপারের সময় একটি গাড়ি তাকে ধাক্কা দেয়। এতে আমির হোসেন সড়কে ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলে নিহত হন। তার বাড়ি সোনাগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নে ছাড়াইতকান্দি এলাকায়। তিনি ওই গ্রামের মো. আবুল হাসেমের ছেলে। ছয় ভাইয়ের মধ্যে আমির হোসেন পঞ্চম।
বিজ্ঞাপন
নিহত আমির হোসেনের পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমির হোসেনের বড়ভাই নুরুল আফসার দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে থাকেন। বড় সংসার হওয়ায় বিয়ের পর আমির হোসেনও পরিবারের হাল ধরতে ২০২০ সালের শেষের দিকে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। তাঁর চার বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তাঁর স্ত্রী বাড়িতে মাকে দেখাশোনা করেন। বিদেশে যাওয়ার পর তাঁর টাকা যোগ হওয়ায় সুন্দর ভাবে চলছিল তাদের সংসার। হঠাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় সংসারের সবচেয়ে কর্মঠ ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ মা। সৌদি আরবের রিয়াদে একটি রেস্তোরায় কাজ করতেন আমির হোসেন।
তার ভাই রাশেদুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আমির হোসেন অসুস্থ ছিল। সুস্থ্য হয়ে শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় তার সঙ্গে শেষ কথা হয়। যাওয়ার পথে সড়ক পার হওয়ার সময় একটি গাড়ির ধাক্কায় তাঁর ভাইয়ের মৃত্যু হয়।
তিনি বলেন, সৌদিআরবে থাকা আমিরকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। সে তাদের পরিবারে একজন আদর্শ ছিল। কখনও কারও সঙ্গে ঝগড়া করত না। গত তিনমাস আগে তার আকামার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। মালিক আকামার মেয়াদ বাড়াতে রাজি না হওয়ায় আগামী মাসে দেশে এসে পুনরায় আরেকটি ভিসা নিয়ে আবারও সৌদি আরব যাওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। তার আগেই এভাবে চলে গেল। কোনোভাবেই সহ্য করতে পারছি না।
রাশেদুল ইসলাম বলেন, সৌদি আরব থেকে আমির হোসেনের লাশ দেশে ফেরত আনা নিয়ে তারা চিন্তিত। এরপরও বড় ভাই নুরুল আফসার ছোট ভাইয়ের লাশ দেশে আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা কীভাবে কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সহযোগিতা কামনা করেছেন আমির হোসেনের পরিবার।
বিজ্ঞাপন
সোনাগাজী সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান উম্মে রুমা বলেন, আমির হোসেন সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। ওই দেশে থাকা তাদের এলাকার লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কীভাবে তার লাশ দেশে আনা হবে, সে বিষয়েও আলোচনা চলছে।
প্রতিনিধি/ এজে

