সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

প্রকৌশলী জসিমের তথ্য ১৭ দিনেও দুদককে দেয়নি চসিক

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:৪৮ পিএম

শেয়ার করুন:

প্রকৌশলী জসিমের তথ্য ১৭ দিনেও দুদককে দেয়নি চসিক

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জসিম উদ্দিনের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ২৪ আগস্ট অনুসন্ধান সংক্রান্ত একটি চিঠি চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠায় দুদক। 

দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক অংটি চৌধুরী স্বাক্ষরিত এই চিঠি পাওয়ার সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রকৌশলী জসিম উদ্দিনের রেকর্ডপত্র দুদককে দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু গত ১৭ দিনেও দুদককে এ তথ্য দেয়নি চসিক। কবে নাগাদ দিবে সে বিষয়েও সুনির্দিষ্টভাবে কিছুই বলতে পারছেন না চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।


বিজ্ঞাপন


সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, দুদক থেকে চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জসিম উদ্দিন সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছে। যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে তা এক জায়গায় নেই। কিছু তথ্য প্রকৌশল বিভাগ থেকে আর কিছু হিসাব শাখা থেকে সংগ্রহ করতে হচ্ছে। সব তথ্য সংগ্রহ করে দুদক কার্যালয়ে পাঠানো হবে। তবে কবে পাঠানো হবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছুই বলা যাচ্ছে না।

চিঠিতে বলা হয়, চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম করে ফ্ল্যাট ও অবৈধ স¤পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের সুষ্ঠ অনুসন্ধানের স্বার্থে নি¤œবর্ণিত রেকর্ডপত্র ও তথ্যাদি পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। চিঠি পাওয়ার সাত কার্যদিবসের মধ্যে রেকর্ডপত্র দুদককে দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।

চিঠিতে চসিকের চাকরিতে জসিম উদ্দীনের যোগদানের শুরু থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত বেতন-বোনাস ও বিলের বিবরণ চাওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফাহিম কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী সাইফুল ইসলামকে চসিক থেকে যেসব কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে তার রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়েছে। 

পাশাপাশি চসিকের জন্য আমিন ইনফ্রাস্ট্রাকচারের স্বত্বাধিকারী দিদারুল ইসলাম থেকে যেসব মালামাল কেনা হয়েছে তারও রেকর্ডপত্র চেয়েছে। দুদক যে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স¤পর্কে তথ্য চেয়েছে সেগুলো প্রকৌশলী জসিমের ভাইয়ের বলে অভিযোগ আছে। 


বিজ্ঞাপন


দুদকের তথ্য চাওয়ার পর অভিযুক্ত জসিম উদ্দিন চিকিৎসার জন্য ছুটি নিয়ে দেশের বাইরে চলে যান বলে জানান চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। এ কারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সূত্র মতে, ২০০৬ সালে আট হাজার টাকা বেতনে চসিকের সড়ক পরিদর্শক পদে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ পান মো. জসিম উদ্দিন। এরপর ২০০৯ সালে বিভাগের ১১ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে পেছনে ফেলে বাগিয়ে নেন নির্বাহী প্রকৌশলীর পদ। বর্তমানে পুরকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

এছাড়া তার পরিবারের সদস্য ও ভাইকে দিয়ে গড়ে তুলেছেন ঠিকাদারি ব্যবসা। আড়ালে থেকে ভাই ও পরিবারের সদস্যদের দিয়ে সুকৌশলে বাগিয়ে নেন সিটি করপোরেশনের কাজও। এমনকি চসিকের নিজস্ব এ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট থাকা সত্ত্বেও মাল কেনা হতো জসিম উদ্দিনের নিজস্ব কারখানা থেকে।

এছাড়া জসিম উদ্দিন চসিকের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্প বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পে উপপরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেন। প্রকল্পটি ছিল দুই হাজার ৪৯০ কোটি ৯৬ লাখ ৬৯ হাজার টাকার।

দুদকের তথ্যমতে, চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ এলাকার আল-ফালাহ গলিতে আইএস অবকাশ নামের একটি ভবনে অন্তত ৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জসিম উদ্দিনের। প্রতিটি ফ্ল্যাটের মূল্য প্রায় কোটি টাকার বেশি। নগরের খুলশি এলাকায় ১২ কাঠা জায়গার ওপরে নির্মাণাধীন রয়েছে তার ১০তলার একটি বহুতল ভবন। যার বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা। তার রয়েছে একাধিক দামি প্রাইভেট গাড়িও, হাতে পরেন ২০ লাখ টাকার রোলেক্স ঘড়ি।

এছাড়া নগরীর পাঁচলাইশের হামজারবাগ হামজার খাঁ লেনের শাহ আমানত আবাসিকে স্ত্রী ও শ্যালিকার নামে রয়েছে চার কাঠা করে আট কাঠার দুটি প্লট। সেখানে একটি প্লটে আট তলার বহুতল ভবন উঠছে। আরেকটিতে সেমিপাকা ঘর রয়েছে। স্থানীয়দের মতে, নির্মাণাধীন ভবন ও জায়গার বর্তমান বাজারমূল্য ১৫ কোটি টাকা। এই আবাসিকের প্রায় ২৮টি ভবনের নেতৃত্ব জসিমের হাতে।

আরও জানা গেছে, চাকরির পাশাপাশি তথ্য গোপন করে ছোট ভাই সাইফুল ইসলামকে দিয়ে চসিকের ঠিকাদারি কাজ করিয়ে যাচ্ছেন প্রকৌশলী মো. জসিম উদ্দিন। তার ভাইয়ের প্রতিষ্ঠানের নাম ফাহিম কনস্ট্রাকশন।

একইসঙ্গে নগরীর সাগরিকা রোডে আমিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার এ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট নামে কারখানা রয়েছে জসিম উদ্দিনের। যেটির পরিচালনা করছেন তার ভাই দিদারুল ইসলাম। যদিও কাগজে-কলমে ওই কারখানার মালিক দেখানো হয়েছে নুরুল আমিন নামের এক ব্যক্তিকে।

আইনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) ২০০৯ আইন অনুযায়ী, করপোরেশনের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক স্বজ্ঞানে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, স্বয়ং বা কোনো অংশীদার মারফত কর্পোরেশনের কোনো ঠিকাদারিত্বে স্বত্ব বা অংশ নেওয়া বেআইনি।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর