ছাদবাগান করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন গৃহিণী তনিমা

ফুলের মধ্যে অন্যতম বিভিন্ন ধরনের গোলাপ, ক্যামেলিয়া, জবা, এ্যাডেনিয়াম, জুই, করবী, বেলি, হাসনাহেনা, ব্লেডিং হার্ট, কৃষ্ণচুড়া, মালঞ্চ, কালঞ্চ, শাপলা, শিউলি, কাটা মুকুট, নন্দিনী, রঙ্গন, গ্রাউন্ড অর্কিডসহ নানা জাতের ঋতু ভিত্তিক ফুল।

সবজির মধ্যে রয়েছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, কালো টমেটোসহ পাঁচ জাতের টমেটো, করলা, লাল শাক, সবুজ শাক, ডাটা, লাউ, সিম, মিষ্টি কুমড়া, আলু, ধনেপাতা, বারোমাসি সজনে। মশলার মধ্যে রয়েছে পিয়াজ, রসুন, আদা, চুইঝাল, তেজপাতা, আলু বোখরা, লবঙ্গ, গোলমরিচ ও পাঁচ জাতের মরিচ ইত্যাদি।

ওষুধি গাছের মধ্যে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক ননী ফল, আদা, তুলসী, বাসক,  নীম, অ্যালোবেরা, শ্বেতচন্দন, পুদিনা পাতা, লজ্জাবতী, ধুতরা, থানকুনি, স্বর্ণলতা, অর্জুন, পাথরকুচি। শোভাবর্ধনের জন্য রয়েছে সাইক্রাস, বিভিন্ন জাতের  মানিপ্লান্ট, পাতাবাহার, ইঞ্চি প্লান্ট, স্নেক প্লান্ট, ঝাউগাছ, পাটট্রি ইত্যাদি।

গাছগুলো কলমের হওয়ায় একেবারেই ছোট অবস্থায় এবং অল্পদিনে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফুল ও ফল ধরছে। দৃষ্টি নন্দন আদর্শ ছাদ বাগানের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে সম্পূর্ণরূপেই কীটনাশক মুক্ত পদ্ধতিতে চাষাবাদ।

তনিমা আফরিনের দুই মেয়ে প্রিয়ন্তি ও রুপন্তি ঢাকা মেইলকে বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি বাগানে এসে গাছ ফুল-ফলের যত্ন নেই, মাছদের খাবার দেই। আমাদের বন্ধুরা আমাদের বাগান দেখতে আসে। বাগানে হাঁটাহাঁটি করতে থাকতে খুব ভালো লাগে।মন খারাপ থাকলেও ভালো হয়ে যায়।

বাগান দেখতে এসে কয়েকজন ঢাকা মেইলকে জানান, ছাদবাগানটা অনেক সুন্দর। অনেক গাছের সমারোহ। ছাদবাগানটা যেমন সুন্দর ওনার মনটা ও তেমনি অনেক ভাল। তনিমা আপুর বাগানে আমরা প্রায় আসি, এখানে আসলে মনটা অনেক ভাল হয়ে যায়।

ছাদ বাগানি তনিমা আফরিন ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার আম্মা তহমিনা হুসাইন একজন কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা। মায়ের থেকে দেখে ছোটবেলা থেকেই গাছের প্রতি একটা গভীর ভালবাসার সৃষ্টি হয়। প্রথমে শখের বসে ছাদে সৌন্দর্য বর্ধন ও সময় কাটানোর জন্য ছাদে ফুল গাছ লাগাই। পরে আম্মার উৎসাহ, সহযোগিতা ও পরামর্শে নানা ধরনের ফল, সবজি ও ওষুধি গাছ লাগাই। পরবর্তীতে এ ছাদবাগান সমৃদ্ধ করার ব্যাপারে আমাকে বড় ধরনের সহযোগিতা ও উৎসাহ দেন এক বড়ভাই।

ছাদ বাগানের আয় ব্যয় সম্পর্কে তিনি বলেন, শখ থেকে নেশা এবং পরবর্তীতে পেশায় রুপ নিয়েছে আমার এই ছাদ বাগান। সারাদেশে অনলাইনের মাধ্যমে শুধু কলম চারা বিক্রি করে বাৎসরিক দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা উপার্জন হয় এই বাগান থেকে। ফল ও সবজি বিলিয়ে বেশি আত্মতৃপ্তি পাই।

তিনি জানান, কাজের অনুপ্রেরণা ও স্বীকৃতি স্বরুপ বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২৬ এ ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছি গত বছরের ১২ অক্টোবর। এটা আমার জন্য অনেক গর্বের বিষয়। সেজন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই প্রধানমন্ত্রীসহ পদক সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি। আমার স্বামী, সন্তান, আম্মা, আমার প্রতিবেশীরাসহ ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপের উৎসাহ, অনুপ্রেরণা ও সার্বিক সহযোগিতায় বাগানটা সুন্দর করে সাজাতে পেরেছি।

তিনি আরও বলেন, অন্যদের বাগান করার ব্যাপারেও পরামর্শ ও কলম চারা বিনামূল্যে দিয়ে থাকি। আমি চাই সকলে ছাদ বাগানে উৎসাহিত হোক। অলস সময় পার না করে ছাদ বাগানের মাধ্যমে যেমন অর্থ উপার্জন হবে অন্যদিকে নিজেদের বিষমুক্ত ফল ও সবজির চাহিদা ও পূরণ হবে।

নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় ঢাকা মেইলকে বলেন, বিশেষ করে কৃষিতে নারীর ভূমিকা শীর্ষক অবদান রাখায় তনিমা আফরিন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পেয়েছেন। তার দেখাদেখি এলাকায় ছাদবাগান সম্প্রসারিত হচ্ছে। ছাদবাগান মূলত অবসর সময়ে বিনোদনের একটি উপায়।

তিনি আরও বলেন, ছাদবাগান থেকে আর্থ সামাজিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। পাশাপাশি ছাদবাগানে উৎসাহিত করতে ইতোমধ্যে প্রায় শতাধিক পরিবারের কৃষক কৃষাণীদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করছি। যার মাধ্যমে এই লাভজনক কৃষি ব্যবসা যেন তাদের আর্থ সামাজিক অবস্থা উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।

টিবি