কুমিল্লার দেবীদ্বারে ছয় সন্তান নিয়ে উপজেলার পোমকাড়া গ্রামে অন্যের বাড়িতে দরজা জানালাবিহীন ভাঙা ঘরে বসবাস করা মামুন-নিলুফা দম্পতিকে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর উপহার দেওয়া হয়েছে। রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) ‘৬ সন্তান নিয়ে পরিত্যক্ত বাড়িতে জীবন কাটছে মামুনের’ শিরোনামে ঢাকা মেইলে সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি জেলা প্রশাসকের নজরে আসে।
সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মু. মুশফিকুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, নিউজটা নজরে আসার পর আমি দেবিদ্বার উপজেলার ইউএনও নিগার সুলতানাকে ওই পরিবারকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। তিনি তৎক্ষণাৎ দেবিদ্বার সহকারী ভূমি কমিশনার রায়হানুল ইসলামকে জানালে তিনি তাকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেন। আপনারা সাংবাদিকরা এরকম প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি পরিবারের কথা তুলে ধরেছেন, যার দরুণ জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়েছে। ফলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পেরেছি। আপনারা সাংবাদিকরা এরকম মানবিক স্টোরি তুলে ধরলে সমাজ উপকৃত হবে।
বিজ্ঞাপন
এক ঘণ্টার মধ্যে ঘটনাস্থলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রায়হানুল ইসলামকে পাঠিয়ে ওই অসহায় পরিবারটিকে উপজেলার সুবিল ইউনিয়নের বুড়িরপার উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘরের ব্যবস্থা করে দেন জেলা প্রশাসক। এসময় বুড়িরপার ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার সোহেল নেয়ামতসহ এলাকার গণ্যমান্য লোকজনের উপস্থিতিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের চাবি ওই পরিবারের কর্তা মামুন মিয়ার হাতে তুলে দেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রায়হানুল ইসলাম।
এমন সংবাদে অসহায় পরিবারের কাছে খাবার নিয়ে ছুটে আসেন উপজেলার পৌর ভূষনা গ্রামের ব্যবসায়ী মো. সোহেল মিয়া। সোমবার বিকেলে এক মাস চলার মতো খাদ্যসামগ্রী, চাল, ডাল, তেল, আটা, মাছসহ যাবতীয় মসলা সামগ্রী নিয়ে বুড়িরপার প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে ওই পরিবারের হাতে তুলে দেন তিনি। এসময় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক সাংবাদিক এবিএম আতিকুর রহমান বাশার, কমিউনিস্ট পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড পরেশ কর, সুবিল ইউপি চেয়ারম্যান গেলাম সারোয়ার মুকুল ভূইয়া, নিজেরা করি জেলা সংগঠক আব্দুল জব্বার প্রমুখ।
সোহেল মিয়া বলেন, খাদ্যসামগ্রী নিয়ে অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে পেরে আমার খুবই ভালো লাগছে। তাদের দুটি ফ্যান ও থাকার বিছানাপত্র ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।
বিজ্ঞাপন
সোমবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়ে স্বামী-সন্তানদের নিয়ে আনন্দে আত্মহারা ছয় সন্তানের মা নিলুফা আক্তার। এসময় তিনি বলেন, সাংবাদিকদের ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারব না। আপনাদের সহযোগিতার কারণেই স্বামী-সন্তান নিয়ে একটি মাথা গুজার ঠাঁই পেলাম। এখন বৃষ্টি এলে আর হাড়ি পাতিল নিয়ে দিকবিদিক দৌড়াতে হবে না। এখন কোনোরকম ডাল ভাত খেয়ে সন্তানদের মানুষ করে মরতে পারলেই হয়।
এবিষয়ে দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিগার সুলতানা ঢাকা মেইলকে বলেন, সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসক স্যারের সাথে কথা বলে অসহায় পরিবারটিকে বুড়িরপার আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। খুব দ্রুতই তাদের নামে কাগজপত্র তৈরি করে দেওয়া হবে। এছাড়া ওই পরিবারটি যেন সব ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা পায় তা নিশ্চিত করা হবে।
প্রতিনিধি/জেবি

