মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ: সেপ্টেম্বরেই খুলছে বাণিজ্যের নতুন দুয়ার

আশিকুর রহমান মিঠু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশিত: ২৯ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৪৬ পিএম

শেয়ার করুন:

আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ: সেপ্টেম্বরেই খুলছে বাণিজ্যের নতুন দুয়ার

আগামী সেপ্টেম্বরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের আরও একটি দুয়ার খুলতে যাচ্ছে। সড়ক পথের পর এবার রেলপথে দুই দেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রফতানি বাণিজ্য হবে আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলপথ দিয়ে।

চলতি মাসের শেষ দিকে বহুল কাঙ্ক্ষিত এই রেলপথে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। আর রেলপথে পণ্য পরিবহন খরচ কম হওয়ায় আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য আরও চাঙ্গা হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।


বিজ্ঞাপন


সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে ভারতের আগরতলার নিশ্চিন্তপুর পর্যন্ত ১২ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। রেলপথটির ৬ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার পড়েছে বাংলাদেশ অংশে। এ কাজটি করছে ভারতের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। প্রকল্পের কাজ দেড় বছরের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও করোনা মহামারিসহ নানা সংকটের কারণে নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

কয়েক দফায় বাড়ানো প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত জুন মাসে। বাংলাদেশ অংশের সাড়ে ৬ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ২৪১ কোটি টাকা। এই রেলপথটি উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করবে বাংলাদেশকে। ফলে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে বাণিজ্য আরও বিস্তৃত হবে বলে আশা বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের।

সরেজমিন আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলপথ প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাংলাদেশ অংশের সম্পূর্ণ রেলপথে রেললাইন বসানো শেষ। এছাড়া প্রকল্পের ১৬টি সেতু ও কালভার্টের সবকটির কাজই শেষ হয়েছে ইতোমধ্যে। আর ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস ভবনের নির্মাণ ৯৫ ভাগ শেষ হয়েছে।


বিজ্ঞাপন



 

·     প্রকল্পের ৯৫ ভাগ কাজ শেষ, চলতি আগস্টেই পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল।

·     রেলপথে পণ্য পরিবহন নিরাপদ ও সাশ্রয়ী, তাই বাড়বে বাণিজ্য।

·     উত্তর-পূর্ব ভারতে বাণিজ্য বিস্তৃতি হওয়ার আশা ব্যবসায়ীদের।

·     এই রেলপথে কলকাতার সাথে আগরতলার দূরত্ব কমবে ১১০০ কিলোমিটার।

·     সেপ্টেম্বরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী রেলপথটি উদ্বোধন করবেন।

 


আখাউড়া-আগরতলা রেলপথটি কলকাতার সঙ্গে আগরতলার দূরত্ব কমাবে প্রায় ১১০০ কিলোমিটার। প্রথমে এই রেলপথে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করবে। পরবর্তীতে শুরু হবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল। এই রেলপথটি চালু হলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আরও বাড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে রফতানি হওয়া পণ্য আগরতলা থেকে সরবরাহ হয় পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোতে।

আখাউড়া স্থলবন্দরের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, আমদানি খরচ বৃদ্ধিসহ নানা কারণে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে এখন ভারত থেকে পণ্য আমদানি হচ্ছে না। এছাড়া একই সংকটে ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিচ্ছেন কম। তবে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথটি চালু হলে সড়কপথের তুলনায় কম খরচে পণ্য পরিবহন করতে পারবেন। এতে দুই দেশের ব্যবসায়ীরাই লাভবান হবে। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাইরের অনেক ব্যবসায়ী এই রেলপথে বাণিজ্যে আগ্রহী হবেন।

আরও পড়ুনঃ ছয় লেন হচ্ছে যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়ক, ব্যয় আড়াই হাজার কোটি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আজিজুল হক বলেন, রেলপথে পণ্য পরিবহন অনেক বেশি নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী। আখাউড়া-আগরতলা রেলপথটি চালু হলে উল্লেখযোগ্যভাবে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বিস্তৃত হবে বলে আশা করছি। আমদানি খরচ যখন কম হবে, তখন ভোক্তা পর্যায়ে কম মূল্যে পণ্য পৌঁছে দেওয়া যাবে। ফলে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এই রেলপথটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ভাস্কর বকশি বলেন, প্রকল্পের ভবনগুলোর নির্মাণ কাজ ৯৫ ভাগ শেষ হয়েছে। যেহেতু রেললাইন বসানোর কাজ প্রায় শেষ- তাই পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলে কোনো সমস্যা হবে না। চলতি আগস্ট মাসের শেষ দিকে পরীক্ষামূলকভাবে আখাউড়া থেকে আগরতলা ঢুকবে ট্রেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলপথ প্রকল্পের পরিচালক (বাংলাদেশ অংশ) আবু জাফর মিয়া বলেন, পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে চলতি মাসেই এই রেলপথে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল করানোর। এরপর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী রেলপথটির উদ্বোধন করবেন বলে আশা করছি। প্রথমে পণ্যবাহী এবং পরবর্তীতে যাত্রী নিয়ে ট্রেন ছুটবে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর