কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে যৌতুকের টাকার জন্য রিপা আক্তার (৩১) নামের এক গৃহবধূকে গলা টিপে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামী শাহ আলমের বিরুদ্ধে।
শনিবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে হত্যার ঘটনাটি ঘটে রিপা আক্তারের শ্বশুরবাড়ি উপজেলার পূর্ব জাওয়ার কান্দাপাড়া এলাকায়।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয়রা খবর দিলে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য জেলা সদরের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
রোববার (২৭ আগস্ট) বিকালে রিপা আক্তারের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
রিপা আক্তার কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার রশিদাবাদ ইউনিয়নের মাখরাউন্দ গ্রামের ফিরোজ মিয়ার মেয়ে। রিপা তিনবোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় । চার ও দেড় বছরের দুটি মেয়ে সন্তান রয়েছে রিপা আক্তারের।
ভুক্তভোগীর পরিবার ঢাকা মেইলকে জানায়, গত ১০ বছর আগে তাড়াইল উপজেলার জাওয়ার ইউনিয়নের কান্দাপাড়া এলাকার আতাবুরের ছেলে শাহ আলম (৩৫) সঙ্গে পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয় রিপা আক্তারের। শাহ আলম পেশায় একজন কৃষক। বিয়ের সময় তাদের দাবী অনুযায়ী যৌতুকের নগদ চার লাখ টাকা ও একাধিক স্বর্নালঙ্কার প্রদান করা হয়। কিন্তু তারপরও বিভিন্ন অজুহাতে যৌতুকের আরও টাকার জন্য অত্যাচার করত রিপা আক্তারকে। পরে তাদের দাবির প্রেক্ষিতে কয়েক ধাপে শাহ আলমকে দুই একর জমি ফসলি জমি বন্ধক রেখে দেওয়া হয় রিপার পরিবারের পক্ষ থেকে।
বিজ্ঞাপন
এর কিছুদিন পর মাছ চাষের ব্যবসা শুরু করবে বলে আবার ৫ লাখ টাকা দাবি করে। তখন চাপ প্রয়োগ করলে আবারও আড়াই লাখ টাকা দেওয়া হয়। পরে বাকি টাকা দেওয়ার জন্য গত বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) রিপা আক্তারকে মারধর শুরু করলে এক পর্যায়ে তার গলা চেপে ধরে এবং তলপেঠে লাথি মারে। পরদিন স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
কিন্তু রিপার স্বামী ও তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে এভাবেই ফেলে রেখে চলে যায়। পরে গত শনিবার (২৬ আগস্ট) স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে রিপা আক্তারের শ্বশুরবাড়ি থেকে তার মরদেহটি উদ্ধার করে।
এদিকে পুলিশ যখন লাশ উদ্ধার করে তখন বাড়িতে থাকা একমাত্র শাহ আলমের ছোটবোনকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে গেলে রোববার (২৭ আগস্ট) বিকেলে থানায় এসে আত্মসমর্পণ করে রিপা আক্তারের স্বামী শাহ আলম। বাড়ির অন্য সদস্যরা গা ঢাকা দিয়েছে বলে স্থানীয়রা জানায়।
নিহত রিপার ছোটবোন ইতি আক্তার ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার বোনরে শুক্রবারে গলায় টিপে অর্ধেক মাইরা রাখছে। পরের দিন তারা হাসপাতাল ঠিকই নিয়ে গেছে কিন্তু ভালোভাবে চিকিৎসা করে নাই। আমাদেরকেও কিছু জানায় নাই। তাই পরের দিন আমার বোন মারা গেছে। আমরা এর বিচার চাই, আমরা হত্যাকারীর ফাঁসি চাই।
তার ছোট ভাই জুনায়েদ পেশায় একজন প্রাইভেটকার চালক। বোনের মৃত্যুর খবর পেয়ে ছুটে এসেছে কর্মস্থল রাজধানী থেকে। ঢাকা মেইলকে জুনায়েদ বলেন, আমার বোনকে তারা দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচার করতেছে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো তাকে তার চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু বোনজামাইয়ের চাহিদা শেষ হয় না। আজ আমার বোনকে তারা অত্যাচার করতে করতে লাশ বানিয়ে ফেলেছে। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যেন আর কেউ এমন কাজ করার সাহস না পায়।
তাড়াইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর আলী আরিফ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাদী পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে আইনানুগ সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও জানান, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসলে মুল রহস্য উদঘাটন করা যাবে। তবে মৃতের স্বামী তাকে আঘাত করার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
অপরদিকে নিহত রিপা আক্তারের স্বামী শাহ আলম পুলিশ হেফাজতে ও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা পলাতক থাকায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
প্রতিনিধি/এসএস