মাদারীপুরের পালপাড়ায় এখন নেই সেই প্রাণচাঞ্চল্য। শত বছরের পুরনো মৃৎশিল্পও জৌলুস হারিয়েছে। যে পহেলা বৈশাখকে ঘিরেই টিকে রয়েছে পালপাড়াগুলো, সেই পালপাড়ার মৃৎশিল্পীদের পরিবারে এবার পহেলা বৈশাখ এসেছে বিষাদের কালো ছায়া নিয়ে। একসময় এ মৃৎপাড়া বৈশাখী মেলাকে সামনে রেখে, চৈত্র মাসের পুরোটা সময় জুড়ে বিভিন্ন খেলনা বানাতে ব্যস্ত থাকতো। চাহিদা না থাকায় ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসেছে তাদের ব্যস্ততা।
বাঙালির অন্যতম ঐতিহ্য মৃৎশিল্প। এই শিল্পের চাহিদা বছরের অন্যসব সময়ে না থাকলেও পহেলা বৈশাখে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা ছিলো প্রচুর। গেল করোনায় থমকে গিয়েছে তাদের এই মৃৎশিল্পের কারুকার্য। তাই বৈশাখকে উপলক্ষ করে এ বছর আর বানানো হয়নি কোনো খেলনা।
বিজ্ঞাপন

জানা যায়, পহেলা বৈশাখে মাদারীপুরের বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হতো। মেলার চাহিদা মেটাতে ও মাটির তৈরি জিনিসপত্র বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে দিন-রাত ব্যস্ত সময় কাটাতে হতো জেলার ৭টি গ্রামের পালপাড়ার মৃৎশিল্পীদের। করোনা ভাইরাসের কারণে দুই বছর হয় নি বৈশাখী মেলা। তাছাড়া আগের মতো মাটির তৈরি জিনিসের কদর না থাকায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্প।
সম্প্রতি মাদারীপুর সিদ্দিকখোলা এলাকার পালপাড়ায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল একটি উঠানো মাটির তৈরি বিভিন্ন আকারের দইয়ের হাড়ি বানানো শেষে রোদে শুকানো হচ্ছে। সামনে একটি একচালা পাটখড়ির ছাউনি দেওয়া ছোট্ট ঘরে আপন মনে চাকার সাহায্যে মাটি দিয়ে পাত্র তৈরি করে চলছেন বৃদ্ধবয়সী এক মৃৎশিল্পী। তার সামনেই উঠোনে বসে ২জন পালপাড়ার বধূ রৌদ্রে রাখা দইয়ের হাড়িগুলোকে ফিনিশিং দিচ্ছে।
বৈশাখী মেলা উপলক্ষে এবার কোনো মাটির তৈরি খেলনা বা তৈজসপত্র বানানো হয় নি।
বিজ্ঞাপন
সেখানে গিয়ে কথা হলো মৃৎশিল্পী জিতেন পাল (৭০) এর সঙ্গে।
তিনি জানান, দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে আছেন এই পেশায়। তার বয়স যখন ২০ বছর তখন থেকেই বাবার হাত ধরে এই পেশায় এসেছেন।
জিতেন পাল বললেন, 'এখন আর মাটির তৈরি জিনিস চলে না। করোনার কারণে ২ বছর কিছুই বেঁচতে পারি নাই। এখন দইয়ের হাঁড়ি বেঁচে কোনো রকমে চলতাছি।’
মৃৎশিল্পী গোপাল পাল বলেন, ‘দুই বছর আগে মেলার জন্য কিছু মাল বানাইছিলাম। করোনার জন্য ২ বছর তো মেলা হইলো না। দেখি এইবার মেলা হইলে বিক্রি করতে পারি কি না। বর্তমানে বাজারে প্লাস্টিকের জিনিস চলে আসায় মাটির তৈরি কোনো কিছুই এখন আর আগের মতো চলে না।’
তিনি বলেন, ‘মাটির বাসনকোসনের বেশ কদর ছিল। মাটির কাজ নিয়ে কোলাহলে মুখর ছিল এ পাড়া। এখন তো আমাগো জীবনই বাঁচে না, শিল্প বাঁচামু ক্যামনে।’
এই ব্যাপারে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. রহিমা খাতুন বলেন, 'আমরা মৃৎশিল্পীদের নিয়ে একটা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। তারা যে কাজটি করে, তাদের সেইকাজে আরও দক্ষ করার জন্য। তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মাটির তৈরি জিনিসগুলো এমনভাবে তৈরি করবো যেটা বাহিরের দেশেও রফতানি করা যায়।’
এইচই

