রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বগুড়ায় বট-পাকুড়ের বিয়ে, খাওয়ানো হলো ৫ শ’ মানুষকে

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:১২ এএম

শেয়ার করুন:

বগুড়ায় বট-পাকুড়ের বিয়ে, খাওয়ানো হলো ৫ শ’ মানুষকে
বট-পাকুড়ের বিয়ে | ছবি : ঢাকা মেইল

গোধুলী লগ্নে দৃষ্টিনন্দন বাতিতে আলো জ্বলমলে বগুড়ার মগলিসপুর হিন্দু পাড়ার শ্মশানঘাট। ভেসে আসছে ঢাকঢোল আর সানাইয়ের সুর। আত্মীয়-স্বজন আর অতিথিদের সরগরমে উৎসবমুখর পরিবেশ পুরো এলাকাজুড়ে। সাজানো হয়েছে বর-কনে। কন্যা সম্প্রদানের জন্য প্রস্তুত পরিবারের লোকজন। বিয়ে সম্পন্ন করতে ডেকে আনা হয়েছে পুরাহিতকে। 

নিমন্ত্রণ করা হয়েছে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পাঁচ শতাধিক মানুষকে। অতিথিদের প্রীতিভোজের জন্য বাড়িতেই চলছে রান্নাবান্না। ছিল অতিথিদের বসার ব্যবস্থাও। অপেক্ষা শুধু শুভলগ্নের। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘনিয়ে এলো সেই লগ্ন। বিয় পড়ানো হলো হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী। হলো শুভদৃষ্টিও। কন্যা সম্পাদন করলেন বাবা সুশীল চন্দ্র দাস। আদরের মেয়েকে বিদায় দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন মা প্রতিভা রানী। বট-পাকুড়ের বিয়েতে শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) এমন পরিবেশ সৃষ্টি হয় বগুড়া শহরের মগলিসপুর হিন্দু পাড়ার শ্মশান ঘাটে।


বিজ্ঞাপন


bot-pakurজানা যায়, হিন্দু সম্প্রদায়কে অমঙ্গল থেকে রক্ষায় বিয়ে দেওয়া হয় বট-পাকুড়ের। বর বট গাছ। তার নাম রাখা হয় অন্তর। কনে পাকুড়ের নাম রাখা হয় রূপালী। বাবা নাথুরাম সরকার ও মা চপলা রানী বিয়ে দেন ছেলে অন্তরকে।

মগলিসপুর সার্বজনীন করতোয়া শ্মশান ঘাট কমিটির প্রচার সম্পাদক পার্থ প্রতীম মহন্ত বলেন, দেশ স্বাধীনের আগে এই এলাকায় একবার ধুমধাম করে বট-পাকুড়ের বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী এই গাছ এক সাথে থাকলে বিয়ে দিতে হয়। হিন্দু ধর্মীয় রীতি মেনে তাদের বিয়ে না দিয়ে গ্রামের মানুষের অমঙ্গল হয়। ১৬ বছর আগে শ্মশানঘাটে লাগানো এই গাছের বিয়ের বয়স হওয়া তাদের বিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া গীতাতেও বট-পাকুড়ের বিয়ের কথা উল্লেখ রয়েছে বলেও জানান তিনি।

bot-pakur2এ দিন বিয়ে উপলক্ষে রং বে রংয়ের কাগজে দিয়ে সাজানো হয় পুরো শ্মশান ঘাট। হিন্দু রীতি অনুসারে কলাগাছ দিয়ে সাজানো হয়েছিল বিয়ের আসর। বর-কনেকে সাজানো হয় নতুন পোশাকে। চলে গান বাজনা। দুপুরে নারায়ণ পূজার  পর জমে ওঠে অনুষ্ঠান। বিয়ে দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে সমবেত হয় শতশত মানুষ।

বট গাছের মা’র ভূমিকায় থাকা চপলা রানী বলেন, শ্মশান কমিটির মাধ্যমে দুই মাস আগে তিনি বটের মা হওয়ার সিদ্ধান্ত পান। মূলত ছেলের বিয়ে দেওয়া উপলক্ষেই তিনি মা হয়েছেন। গাছের মা হওয়া এবং ধুমধাম করে বিয়ে দেওয়ায় তিনি বেশ আনন্দিত।


বিজ্ঞাপন


বট গাছের বাবা শ্রী নাথুরাম সরকার বলেন, ‘আমরা গাছ দু’টি লাগিয়েছি। আমরা এক দিন থাকবো না, কিন্তু গাছ দু’টি থাকবে বহু বছর, আমাদের স্মৃতির সাক্ষী হয়ে।’

bot-pakur3পাকুড়ের বাবা শ্রী সুশীল চন্দ্র দাস বলেন, বাবার দায়িত্ব পালন করতে পেরে বেশ খুশি হয়েছি। বিয়েটা বট-পাকুড়ের মধ্যে হলেও আমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট থাকবে। 

তিনি আরও বলেন, এটা হিন্দু ধর্মের পুরনো রীতি ও বিশ্বাস। বটগাছ ও পাকুড়গাছ একসঙ্গে থাকলে বিয়ে দিতে হয়। সেজন্যই এক সাথে বেড়ে ওঠা গাছগুলোর বিয়ের আয়োজন করা হয়। 

বগুড়া পৌরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাজু হোসেন পাইকাড় বলেন, বট-পাকুড়ের বিয়ের বিষয়টি আমাকে ক’দিন আগে জানানো হয়। ব্যাপক উৎসাহের মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী বিয়ে দিয়েছে। আমি নিজেও উপস্থিত থেকে বিয়ের অনুষ্ঠান উপভোগ করেছি।

এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর