রাজনীতির মাঠে প্রিয় দলের জন্য অনেকেই ত্যাগ স্বীকার করেন—করেন নানামুখী প্রতিবাদ। তেমনি একটি গল্প কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার রামদী ইউনিয়নের পশ্চিম জগৎচর গ্রামের মৃত সুলায়মান মিয়ার ছেলে ইনু মিয়ার। যিনি এখন বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। রাজপথে আন্দোলনের সামনের সারিতে দাঁড়াতে না পারলেও ১৪ বছর ধরে মৌন প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন ৭৬ বছর বয়সী এ বিএনপি সমর্থক।
দল ক্ষমতায় না এলে আমরণ চলবে তার এই ব্রত। প্রিয় দলের প্রতীকে ভোট দিতে না পেরে ভাত খাওয়া বাদ দিয়েছেন তিনি। এখন খাচ্ছেন কলা, রুটি, বিস্কুটসহ শুকনো খাবার। এগুলো খেয়েই কাটিয়ে দিয়েছেন ১৪ বছরেরও বেশি সময়।
ইনু মিয়া তিন সন্তানের জনক। পরিবারে আছে স্ত্রী জোছনা খাতুন। বড় ছেলে ইকবাল হোসেন। তিনি সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালান। ছোট ছেলে জাকির হোসেন জুতা তৈরির দোকানে কাজ করেন। মেয়ে মার্জিয়া খাতুনকে বিয়ে দিয়েছেন বহুদিন আগেই।
বিজ্ঞাপন
ইনু মিয়া একসময় কৃষিশ্রমিক হিসেবে অন্যের জমিতে কাজ করতেন। কিছুদিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় বাম পায়ে ব্যথা পান তিনি। এতে লাঠি ভর করে খুঁড়িয়ে চলতে হয় তাকে। এখন কাজ করতে পারেন না, শুয়ে-বসেই দিন কাটছে তার।
এলাকাবাসী জানান, বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দলের একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে নিবেদিত ইনু মিয়া। ২০০৮ সালের নির্বাচনে পশ্চিম জগৎচার প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। সেখানে আওয়ামী লীগের কর্মীরা তাকে লাঞ্ছিত করেন। এরপর থেকেই তার এই প্রতিজ্ঞা। যতদিন না বিএনপি ক্ষমতায় আসবে, ততদিন তিনি ভাত খাবেন না।
স্থানীয়রা জানান, কেবল পরিবারের ভেতরেই নয়, সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও তাকে ভাত খেতে দেখা যায় না। তার জন্য শুকনো খাবার পরিবেশন করতে হয়।
স্বজনরা জানিয়েছেন, গত ১৪ বছরে নানাভাবে চেষ্টা করেও তাকে ভাত খাওয়ানো যায়নি। তার একই কথা—যতদিন না বিএনপি ক্ষমতায় আসবে, ততদিন ভাত স্পর্শ করবেন না। বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা রয়েছে বলে ঢাকা মেইলকে জানিয়েছেন তিনি।
ইনু মিয়া বলেন, জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম আমাকে আশা দিয়েছেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার ব্যবস্থা করে দেবেন তিনি। আমি তার সঙ্গে দেখা করতে চাই। দুঃখ-কষ্টগুলো খুলে বলতে চাই।
বিজ্ঞাপন
ইনু মিয়ার স্ত্রী জোছনা খাতুন বলেন, উনাকে অনেক চেষ্টা করেছি ভাত খাওয়ানোর জন্য, পারিনি। আত্মীয়-স্বজনদেরকে বাড়িতে নিয়ে এসেও ভাত খাওয়াতে পারিনি। রুটি, পুরি, বিস্কুট, চা এগুলো খেয়েই বেঁচে আছেন। আমাদের একমাত্র মেয়ে মার্জিয়া খাতুনের বাড়ি গেলেও তাকে ভাত খাওয়ানো যায় না।
রামদী ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক জুয়েল মিয়া বলেন, ইনু মিয়া একজন বিএনপিপ্রেমী মানুষ। তিনি বিএনপিকে ভালোবাসেন।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম বলেন, যে ব্যক্তি দলকে ভালোবেসে এতো বড় ত্যাগ করতে পারেন, আমাদের উচিত তার পাশে থাকা। ভাত না খেয়ে পাড়াগাঁয়ের বয়োবৃদ্ধ ইনু মিয়া প্রতীকী প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন। আমরা দলীয় নেতাকর্মীরা তার যেকোনো প্রয়োজনে পাশে থাকব।
প্রতিনিধি/এইচই