সরকারি চাকরি ছেড়ে তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মংশিতু চৌধুরী বিদেশি জাতের আম চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। বর্তমানে তার বাগানে পাঁচশ থেকে ছয়শ বিদেশি জাতের গাছ আছে। এর মধ্যে ৪২টি প্রজাতির বিদেশি জাতের আমের গাছের মধ্যে ২২টিতে ফলন এসেছে।
খাগড়াছড়ি শহর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে ভুয়াছড়ি নতুনপাড়া এলাকায় মংশিতু চৌধুরীর এই বাগান। তার সংগ্রহে রয়েছে— ব্লাক মেটান, হানিভিউ, আর টু ইটু, রেড এমপেরর, রেড আইভেরি, আমেরিকান কেন্ট, ইটালিয়ান অস্টিন, কেইট, পালমার, মহাচনক, কেষর, পুষা, পুসা সুরিয়া, অরুণিমা, পুষা অরুনিকা, তোতাপুরি, কাটিমন, আমেরিকান পারমাল, ব্যানানা ম্যাংগো, অস্ট্রেলিয়ান কেনসিংটন প্রাইড, টমি অ্যাটকিন্স, আলফানসো, বেইলি মার্বেল, ভ্যালোন্সিয়া প্রাইড, অষিটন গোল, মিয়াজাকি, নাম ডক মাই, থ্রি-টেষ্ট, মায়া, থাই কাচাঁমিটা, আমেরিকান কেইন, কিউজাই, হেভেন কারাবাও।
বিজ্ঞাপন
বাগান মালিক মংশিতু চৌধুরী জানায়, সরকারি চাকরি যখন করতাম, ছুটিতে বাড়িতে আসলে ঘুরাঘুরি করতাম। মায়ের অনুপ্রেরণায় বাগান তৈরির ইচ্ছে জাগে। ২০২২ সালে চাকরি ছেড়ে বাগান করি। বিদেশি জাতের চারাগুলো বন্ধুদের মাধ্যমে জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করেছি। এতে কয়েকগুণ বেশি খরচ হয়েছে আর অনেক সময়ও লেগেছে। পরিশ্রমও হয়েছে বেশি।
ত্রিশ একরের মতো জায়গা নিয়ে এই বাগান তৈরি করি। পাহাড়ের মাটির উর্বরতা, গুণাগুণ ভালো। তাই ভালো ফসল হয়। এখন বাগান করা নেশায় পরিণত হয়েছে। বাগানে প্রতিদিন সাত জন শ্রমিক কাজ করে। এ বছর বাগানে প্রচুর ফল এসেছে। আমি যদি সরকারি চাকরি করতাম বাৎসরিক ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা পেতাম। এ বাগান থেকে বছরে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা আয় হয় এবং ১৭ লাখ টাকা খরচ হয় বলে জানান নবীন এই বাগানি।
তরুণ কৃষি উদ্যেক্তা মংশিতু চৌধুরী বলেন, আমার বাগানে ওয়ার্ল্ডের র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর আলফানসো, দ্বিতীয় আমেরিকার ভ্যালোন্সিয়া প্রাইডসহ ৪২টি বিদেশি জাতের আমের গাছ আছে। তারমধ্যে ২২টি জাতে ফলন হয়েছে। পাঁচশ থেকে ছয়শ বিদেশি জাতের গাছ আছে। বিদেশি জাতের মধ্যে রেড আইভেরি, মিয়াজাকি জাতগুলো খুব ভালো ফলন হয় আর লাভজনকও। সব জাতগুলো বাণিজ্যিকভাবে করা যাবে না। শখের বসে সংগ্রহ করা। তবে যে জাতগুলো বাণিজ্যিকভাবে করতে পারব, ভবিষৎতে আরও বাড়ানোর চেষ্টা করব। সরকার যদি সহযোগিতা করে, তাহলে আম বিদেশে রফতানি করব।
মংশিতু চৌধুরীর মা খুইম্রাংসং মারমা বলেন, ছেলে এখন বাগান নিয়ে ব্যস্ত থাকে। বিদেশি চারা সংগ্রহ করে রোপণ করছে। এখন প্রায় গাছে ফল এসেছে। জেলার মানুষরা বিদেশি আম দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছে। এ বাগান করে সে যেন দাঁড়াতে পারে এই কামনা করি।
বিজ্ঞাপন
রোওয়াসায়াপাড়া এলাকার আম বাগান মালিক উমংচিং মারমা বলেন, মংশিতু চৌধুরীর বাগানে নতুন বিদেশি জাতের আম এসেছে। পাঁচ-ছয়টি জাতের গাছে খুব ভালো ফলন এসেছে। এ দেখে আমিও বাগান করেছি। সূর্যডিম, আমেরিকান পারমাল, ব্যানানা ম্যাংগো, নাম ডক মাই, রেড আইভেরিসহ বিদেশি দশ জাতের আম গাছ লাগিয়েছি।
খাগড়াছড়ি খেজুরবাগান হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-সহকারী কর্মকর্তা সুজন চাকমা বলেন, মংশিতু অনেক রঙিন জাতের আম চাষবাদ করছেন। এই বছর অত্যন্ত ভালো ফলন দেখা গেছে। ভোক্তাদের কাছে বেশ আকর্ষন করছে আমগুলো। এগুলো খেতে খুব সুস্বাদু। বিদেশি জাতগুলো পাহাড়ে চাষাবাদের উপযোগী। ভালো পরিচর্যা করতে পারলে ভালো ফলন দেয়, লাভ হয়। বিদেশি জাতের আম পরীক্ষামূলকভাবে যারা চাষাবাদ করেছেন অত্যন্ত ভালো ফল পেয়েছেন।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, মংশিতু চৌধুরী বিজিবির চাকরি ছেড়ে দিয়ে আম বাগানে মনোনিবেশ করেন। তার বাগানে ৪০ থেকে ৪৫টি বিদেশি জাতের আম চাষ করেছেন। এই আমের বাজারমূল্য অনেক বেশি। তিনি অনলাইনে আম প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকাতে বিক্রি করেন। তার আমগুলো খাগড়াছড়ির বাহিরে চলে যায়। বিদেশি জাতের আম চাষ খাগড়াছড়ির জন্য একটা আশাব্যঞ্জক।
পাহাড়ি কৃষি গবেষণাকেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলতাফ হোসেন বলেন, রঙিন আম বাংলাদেশে বেশ কিছু দিন ধরে চাষ হয়ে আসছে। এখন খাগড়াছড়িতেও হচ্ছে। পুষ্টিমান বিবেচনায় এই আম সুস্বাদু এবং মিষ্টি। তাই এটা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করলে লাভবান হওয়া যায়।
টিবি

