সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কলা গাছের সুতা দিয়ে এবার তৈরি হচ্ছে বানানা সিল্ক শাড়ি 

সুফল চাকমা
প্রকাশিত: ১৭ জুন ২০২৩, ০৩:৩৯ পিএম

শেয়ার করুন:

কলা গাছের সুতা দিয়ে এবার তৈরি হচ্ছে বানানা সিল্ক শাড়ি 
ছবি : ঢাকা মেইল

বান্দরবানে কলা গাছের সুতা থেকে বাহারি ডিজাইনের দৃষ্টিনন্দন শাড়ি ও বিভিন্ন হস্তশিল্প তৈরি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে পিছিয়ে পড়া নারীরা। এবার তারা তৈরি করছেন কলা গাছের সুতা থেকে ‘বানানা সিল্কি শাড়ি’। জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির প্রচেষ্টায় প্রথমে কলা গাছের বাকল বা তন্তু থেকে সুতা তৈরি করেন, সেই সুতা থেকে শাড়ি তৈরির মতো কঠিন কাজ করে চমক লাগিয়ে দিয়েছেন পশ্চাৎপদ পাহাড়ের পিছিয়ে পড়া পাহাড়ি নারীরা। এতে তারা যেমন আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে তারা অর্থনৈতিকভাবেও স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন।

নারী উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির প্রচেষ্টা ও সহযোগিতায় পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় উদ্যোক্তা সংস্থা পিস নারী কল্যাণ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক সাইং সাইং উ তাঁতের শাড়ি বুননের কাজ হাতে নেন। তার সঙ্গে স্থানীয় পাহাড়ি নারীদের পাশাপাশি কাজ করছেন প্রশিক্ষক ও মণিপুরি বুননশিল্পী (কারিগর) কবিতা দেবী। 


বিজ্ঞাপন


মণিপুরী (কারিগর) রাধাবতী দেবীর মাধ্যমে কলাবতী শাড়ি তৈরি করে সফলতার পর তারা নতুন ডিজাইনের বানানা সিল্কি শাড়ি বুননের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম কলাবতী শাড়ি বুননের মণিপুরী শিল্পী (কারিগর) রাধাবতী দেবী অসুস্থতার কারণে এবারে আসতে পারেননি। বর্তমানে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের দত্ত সিংহ নামের একজন পুরুষ শিল্পী (কারিগর) পাহাড়ি নারীদের প্রশিক্ষণ ও শাড়ি তৈরির কাজ সহযোগিতা করছেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বান্দরবান শহরের কালাঘাটা ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বড়ুয়ারটেক এলাকায় জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির উদ্যোগে নারীদের দক্ষ ও স্বাবলম্বী করার লক্ষে একটি পাইলট প্রকল্প নেন। এ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত কয়েকটি ধাপে প্রায় সাড়ে ৪শ স্থানীয় নারীদের সিলেটের মৌলভীবাজারের মণিপুরী দক্ষ প্রশিক্ষক এনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এছাড়াও তাদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিভিন্ন হস্তশিল্প তৈরির কাজে লাগানো হয়। এ কাজের বিনিময়ে প্রশিক্ষণার্থীদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত ভাতা দেওয়া হয়। এ কারণে পিছিয়ে পড়া পাহাড়ের নারীরা ইতোমধ্যে অনেকটা হস্তশিল্প কাজে আগ্রহী ও তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে। তারা সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতা পেলে আরো স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে উঠবে। তবে স্থানীয়ভাবে বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন এ নিয়ে সমীক্ষা করছে বলে জানা যায়।

হস্তশিল্প প্রশিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কলাগাছের তন্তুকে মণ্ডে (পাল্প) পরিণত করে স্পিনিং মেশিনে সূক্ষ্ম ও মসৃণ সুতা পাওয়া যায়। সেই সুতায় উন্নত মানের যেকোনো কাপড় বানানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষে প্রথমে কলা গাছের তন্তু থেকে সুতা ও সেই সুতা থেকে ১৫ দিনের প্রচেষ্টায় সিলেট এর মণিপুরী কারিগর রাধাবতী দেবী একটি শাড়ি তৈরি করেন। পরে সেই কলাগাছের সুতায় আরও একটি উন্নত মানের বানানা সিল্কি শাড়ি তৈরি করা হচ্ছে, এ জন্য  নারী কারিগররা চরকায় সুতা কেটে শুরু করেছেন বানানা সিল্কি শাড়ি বুননের কাজ। এ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। শাড়িটি বুনন শেষ হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা।

এদিকে সম্প্রতি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে অতিরিক্ত সচিব মোস্তফা কামাল মজুমদারে নেতৃত্বে একটি দল কলাগাছের তন্তু দিয়ে শাড়িসহ বিভিন্ন হস্তশিল্পজাত পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে পরিদর্শন করেছেন। মোস্তফা কামাল মজুমদার ভবিষ্যতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ঋণ ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে এই খাত অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলেও আশ্বস্ত করেন বলে জানা গেছে।


বিজ্ঞাপন


এ বিষয়ে প্রশিক্ষণরত হস্তশিল্প শিক্ষার্থী উসিং ওয়াই মারমা ও মিথুই প্রু মারমা বলেন, আমরা লেখাপড়ার পাশাপাশি এই হস্তশিল্পের কাজ শিখছি। এতে করে আমরা একদিকে হাতের কাজ শিখতে পারছি। অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছি এবং আমরা ইতোমধ্যে হস্তশিল্পের অনেকগুলো আইটেম তৈরি করতে পারেন বলে জানান তারা। 

এ কাজে সম্পৃক্ত উদ্যোক্তা সংস্থা পিস নারী কল্যাণ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) ও বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক সাইং সাইং উ মারমা বলেন, জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির দূরদর্শী চিন্তার ফসল এই কলাগাছের সুতা থেকে তৈরি দৃষ্টিনন্দন পরিবেশবান্ধব শাড়ি ও হস্তশিল্পজাতের বিভিন্ন পণ্যগুলো। 

তিনি আরও বলেন, এটি একটি উদ্ভাবনীমূলক প্রকল্প। জেলা প্রশাসকের উৎসাহে ও সহযোগিতায় কলাগাছের তন্তু দিয়ে পণ্য উৎপাদনে পাহাড়ি নারী কর্মীরা কাজ করছেন। হাতের তৈরি সুতায় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়ার জন্য একটি শাড়ি বুননের কাজ চলছে। জেলা প্রশাসক প্রায় সময় এসে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। ভবিষ্যতে স্পিনিং মেশিন (সুতা কাটার যন্ত্র) স্থাপনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ শাড়ি ও হস্তশিল্প গুলি তৈরির মাধ্যমে পাহাড়ের নারীরা আরো স্বাবলম্বী হবে বলে আমরা আশাবাদী। 

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, বান্দরবানের নারীরা কলা গাছের সুতা দিয়ে কলম দানি, ফাইল ফোল্ডার, টেবিল মেট, পাপোস, শোপিস, কানের দুলসহ বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব হস্তশিল্প তৈরি করছে। এছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্পের সৌখিন জিনিসপত্র তৈরি করছে নারীরা। আর এগুলো ইতিমধ্যে ভালো দামে বিক্রিও হচ্ছে।
 
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, আমরা কলাগাছের সুতা থেকে একটি দৃষ্টিনন্দন শাড়ি তৈরি করতে পেরেছি। এটি দেখতে যেমন সুন্দর ও তেমন আকর্ষণীয়। এই শাড়িটি দেশে প্রথম কলাগাছের সুতা থেকে তৈরি হয়েছে। আমরা কলাবতী শাড়ি তৈরির পর এবার তৈরি করছি নতুন ডিজাইনের বানানা সিল্কি শাড়ি। বান্দরবান জেলার সাত উপজেলার হস্তশিল্পে আগ্রহী নারীদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

প্রতিনিধি/এইচই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর