রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

দখল-দূষণ আর কচুরিপানায় গিলে খাচ্ছে কুমার নদ

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৭ জুন ২০২৩, ০৯:৩৯ এএম

শেয়ার করুন:

দখল-দূষণ আর কচুরিপানায় গিলে খাচ্ছে কুমার নদ

ফরিদপুরের কুমার নদটি দখল-দূষণ আর কচুরিপানায় গিলে খাচ্ছে। পদ্মা থেকে একটি শাখা বের হয়ে সৃষ্টি হওয়া কুমার নদ তার ইতিহাস ঐতিহ্য হারাতে চলেছে। সকল প্রকার দখল-দূষণ আর কচুরিপানা পরিষ্কার করে কুমার নদকে ব্যবহার উপযোগী করার দাবি শহরবাসীর।

কুমার নদটি ফরিদপুর সদর উপজেলার পৌরসভার পাশ দিয়ে প্রবহমান পদ্মা নদী থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। এর পর নদটি গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলায় রাগদি ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে মাদারীপুর বিলরুট নদীতে পতিত হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে এর দৈর্ঘ ৭৯ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৪৪ মিটার। যার অধিকাংশ জাগাতে এই নদের ঐতিহ্য হারাতে চলেছে। যে নদীটি দিয়ে একসময় লঞ্চ, ষ্টিমার, বড় বড় নৌকা চলত। বর্তমানে এই নদীর চিত্র দেখলে তা যেন বর্তমান প্রজন্মের কাছে কাল্পনিক গল্প মনে হবে।

এর মধ্যে ফরিদপুর শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার অদূরে শহরের সিঅ্যান্ডবি ঘাটের মদনখালী নামক স্থান থেকে কুমার নদ শুরু হয়ে শহর, বন্দর, গ্রাম, মাঠ-ঘাটের মধ্য দিয়ে আকাঁবাকা পথ পাড়ি দিয়েছে। কিন্তু আজ সে নদের প্রবেশ দ্বার থেকে শুরু করে ফরিদপুর শহরের বিভিন্ন জায়গায় মরা খালে পরিণত হয়েছে।

ফরিদপুর শহরের চরকমলাপুরের বাসিন্দা মিরাজ শেখ বলেন, শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কুমার নদের বুকে কচুরিপানার কারণে নদীর পানি দেখা যায় না। কুমার নদের পানি ব্যবহার করাও দায়। নদী সংলগ্ন বাজার-ঘাট, বাসাবাড়ির ময়লা, আবর্র্জনাসহ পৌরসভার ড্রেনের কারণে কুমার নদের পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে।

শহরের আলিপুর ব্রিজ, শরিয়াতুল্লাহ বাজার এলাকায় কচুরিপানা ছাড়াও জমে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য। শহরের সব ড্রেনগুলো এসে মিশেছে নদীতে।


বিজ্ঞাপন


সাংবাদিক শেখ মনির হোসেন বলেন, কুমার নদের পানি দূষিত ও বিষাক্ত হয়ে গেছে। এই পানি ব্যবহার করলে মানুষের শরীর চুলকায়। কেউ কেউ অনেকটা বাধ্য হয়ে এই নদীতে গোসল ও কাপড়চোপড় কাচার কাজে কিছুটা ব্যবহার করা হয়। এই শহরকে টিকিয়ে রাখতে হলে কুমার নদকে বাঁচিয়ে তুলতে হবে। এজন্য কচুরিপানা অপসারণসহ কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন তিনি।

শহরের পৌরসভার অংশেই বেশি দখল আর দূষনে ভরা। যে যার মতো দখল করে নিচ্ছে নদীর পাড়। বাসাবাড়ির রান্নাঘরের আবর্জনা ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন পণ্যের কার্টন, পলিথিন এমনকি মলমুত্র। হাজি শরিয়তুল্লাহ বাজারের সমস্ত বর্জ্য ফেলা হয় নদীটিতে।

শরিয়াতুল্লা বাজারে ব্যবসায়ী হাবিব বলেন, এতো বড় বাজারে মাত্র ছোট একটি ডাস্টবিন। বাজারে পর্যপ্ত ডাস্টবিন না থাকায় বাধ্য হয়ে নদীতে বর্জ ফেলে বাজারের লোকজন। ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করলে নদীতে কিছুটা ময়লা আবর্জনা কম ফেলবে।

রাসিনের নির্বাহী পরিচালক আসমা আক্তার মুক্তা বলেন, ঢাকার হাতির ঝিলের মতো পরিবেশ হওয়া দরকার। এ জন্য নদীর দুই পার দখল মুক্ত করে হাটাচলার পথসহ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হলে কুমার নদটির ঐতিহ্য কিছুটা ফিরে পারে। এছাড়া টেপাখোলার সুইস গেট খোলা থাকলে বা পানির প্রবাহ বেশি থাকলে কচুরিপানা জমা হতো না।

ফরিদপুর পৌর মেয়র অমিতাভ বোস বলেন, কুমার নদ ফরিদপুর শহরের প্রাণ। কিছু অসচেতন মানুষ কুমার নদকে খোলা ডাস্টবিন মনে করে দূষিত করছে। তাই আগামী ১৭ জুন থেকে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদারের নেতৃত্বে ফরিদপুর পৌরসভারসহ সবার সহযোগিতায় কুমার নদীতে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে কচুরিপানা পরিষ্কার অভিযান শুরু হবে। শহরের ড্রেনের মুখে যদি উন্নত প্রযুক্তি সুবিধার মাধ্যমে পানি পরিষ্কারের ব্যবস্থা করে যেত, তাহলেও নদীর পানির দূষণ রোধ করা যেত।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, কুমার নদের পাড়ে বিভিন্ন অবকাঠামো থাকায় শহরের মধ্যকার দুই কিলোমিটার পুনঃখনন করা সম্ভব হয়নি। তবে এখানে নদীর যে নাব্যতা থাকার কথা তা রয়েছে। নদীর পানির দূষণের ব্যাপারে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, কুমার নদকে রক্ষা করতে হলে এই জনপদের মানুষকে সচেতন হতে হবে। আমরা সবাইকে নিয়ে নদীটির কয়েক কিলোমিটার অংশে কচুরিপানা ও বর্জ্য অপসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই কার্যক্রম সবার মধ্যে কুমার নদের প্রাণ ফিরে পেতে উৎসাহ জোগাবে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর