বিমান শিশুর জন্ম। প্রায়ই এমন খবর শিরোনাম হয়। প্রশ্ন উঠেছে আকাশে জন্ম নেয়া সদ্যোজাত কোন দেশের নাগরিক হবে? তার জন্ম সনদে জন্মস্থানই বা কী লেখা হবে? এর সমাধান মেলা দুষ্কর। কেননা, এই পৃথিবীর আলো যখন দেখল শিশুটি, সে তখন মাঝ আকাশে।
বিমানে জন্ম নেয়া শিশুর নাগরিকত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বের সমাধান চান অনেকেই। তাই এই প্রশ্ন অনেকেরই মনে থাকে- যদি একটি শিশু একটি ফ্লাইটে জন্ম নেয়? যদিও এটি একটি খুব অদ্ভুত পরিস্থিতির মত শোনাতে পারে, যদিও এই ঘটনায় একাধিকবার ঘটেছে মাঝ আকাশে উড়ানের সময়।
বিজ্ঞাপন
বিষয়টি নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠে এসেছে। যেমন, শিশুটির নাগরিকত্বের প্রশ্ন।
ধরা যাক বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উড়ে যাচ্ছে বিমান, সেই সময় কোনও গর্ভবতী মহিলার সন্তান প্রসব হল মাঝ আকাশে। তখন শিশুটি কি বাংলাদেশ না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হবে, তা নিয়ে বিস্তর ধোঁয়াশা থেকে যায়।
মাঝ আকাশে সন্তান প্রসব বিরল
এমন ঘটনা হাতেগোনা বা বিক্ষিপ্ত। দেখা যাক এমন কত ঘটনা ঘটেছে! একটি প্রতিবেদনে পরিসংখ্যান দিয়ে বলা হয়েছে, ২৬ মিলিয়ন যাত্রীর মধ্যে একজনের এমন ঘটনা ঘটে। অর্থাৎ, ফ্লাইটে ভ্রমণ করার সময় বাচ্চা হয়। এই ঘটনাগুলো এতই বিরল যে, সংবাদ সংস্থাগুলো তাদের প্রধান ফিচারে এই খবরগুলো প্রকাশ করে৷
বিজ্ঞাপন
আরেকটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, শিশু জন্মের সংখ্যার হিসেবে ৩ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৪ লাখ শিশুর জন্মের মধ্যে সাধারণত ৫০ জন শিশু আকাশজাত হয়। অর্থাৎ বিমানে ভ্রমণকালে মাঝ আকাশে তাদের জন্ম হয়। যে সমস্ত শিশুরা সময়ের আগেই ভূমিষ্ঠ হয়, তারাই মাঝ আকাশে জন্ম নেয়। যদিও বিমান সংস্থাগুলো তাদের নীতির মাধ্যমে এই ঘটনাগুলো কমানোর চেষ্টা করে, তবুও এটি ঘটে যায় প্রাকৃতিক নিয়মে। বেশিরভাগ এয়ারলাইন্সের নিয়ম অনুযায়ী, গর্ভবতী নারীদের গর্ভধারণের ৩৬ সপ্তাহ হবার আগে পর্যন্ত তাদের বিমানে চড়তে কোনও বাধা নেই।
বিরল তবে ব্যতিক্রম নয়
যদিও ঘটনাটি বিরল। তবু আকাশজাতদের খবর পাওয়া মাঝেমধ্যেই। এমন কি বিমানে কোনো গর্ভবতী থাকলে বিমানবালারা তাকে সেবা যত্ন করেন। বিমানে সন্তান জন্ম হলে প্রসূতির যত্ন নেন তারা। বিমানে যদি কোন চিকিৎসক থাকেন তাদের সাহায্য নেন বিমান সেবিকারা। এর মধ্যে কিছু পরিস্থিতিতে বিশেষ করে প্রসূতির জরুরী বা আপৎকালীন অবস্থা হলে সংশ্লিষ্ট বিমানটিকে দ্রুত অবতরণ বা যাত্রাপথ পরিবর্তন করানো হয়। যাতে গর্ভবতী মহিলা প্রয়োজনীয় সহায়তা পেতে পারেন।
বিষয়টিকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করার জন্য একটি ঘটনার উল্লেখ করা যেতে পারে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের একটি ঘটনা দেখলে আরও ভালোভাবে বোঝা যায় যখন বিমানে মাঝ আকাশে শিশুর জন্ম হয়েছিল।
ব্যাংককগামী কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটকে শিশুর জন্মের সময়ের আগেই অর্থাৎ জন্ম হলে তাৎক্ষণিক সহায়তা পেতে কলকাতায় অবতরণের রুট পরিবর্তন করতে হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে সুস্থভাবে যাতে শিশুটিকে ভূমিষ্ঠ করা যায় তার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রয়োজন। কারণ অপরিণত শিশু জন্ম হতে পারে এই সময়।
শিশুটির নাগরিকত্ব কোন দেশের হবে?
এয়ারলাইনগুলো সাধারণত নবজাতকের জন্মের পর নানাবিধ সুবিধা প্রদান করে এবং শিশুটির জন্ম মুহূর্তটিকে আড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপন করে। বিমান সংস্থাগুলো আপাতভাবে সদ্যজাতর নাগরিকত্বের বিষয়েও বিভ্রান্ত হয়। যদিও কিন্তু কিছু নিয়ম বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির সমাধান করে।
মাঝ আকাশে জন্ম হলে, জন্মের সময় ফ্লাইটটি যে দেশের আকাশসীমা বা পিতামাতার জাতীয়তার কথা মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় শিশুটির নাগরিকত্ব সম্পর্কে। যদি এই উভয় কারণই শিশুটির নাগরিকত্বের বিষয়টি সম্পর্কে সমাধান না করে, তখন বিমানটি যে দেশে নিবন্ধিত হয়েছে তা পরীক্ষা করার পরে নাগরিকত্ব প্রদান করা হয় সংশ্লিষ্ট শিশুর।
ফ্রি আকাশ ভ্রমণ
মধ্য আকাশে জন্ম নেওয়া শিশুটির আজীবন বিনামূল্যে আকাশ ভ্রমণ করার স্বীকৃতি দেয় বিমান সংস্থাগুলো। মাঝ আকাশে শিশুর জন্ম হওয়া নিয়ে বিমানকর্মীরা যে ভাবে আনন্দ করেন, তার ছবি ও ভিডিও এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় হামেশাই ভাইরাল হয়। এমন ঘটনা নিয়ে বিমান সংস্থা, কর্মী এবং চিকিৎসকদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সকলেই।
বিমানে যে এক শিশুর জন্ম হয়েছে, সেই খবর আগেই পৌঁছে যায় সংশ্লিষ্ট বিমানবন্দরে। ফলে সেখানে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেন কর্মীরা। করতালি আর মুহুর্মুহু ক্যামেরার ফ্ল্যাশের মধ্যে হুইল চেয়ারে বসা মায়ের কোলে শুয়ে মাটিতে নেমে আসে আকাশে জন্ম নেওয়া শিশু।
তবে এই ঘটনা নতুন নয়। ২০১৭ সালে সৌদি আরব থেকে ভারতে আসার একটি বিমানে এক মহিলা কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। জেট এয়ারওয়েজ তার সারাজীবনের বিমানের টিকিটের দায়িত্ব নিয়েছিল। এমন ঘটনা আরও আছে। ২০০৯ সালে এয়ার এশিয়া একজন মালয়েশিয়ান মা ও তার ছেলেকে গোটা জীবনের বিমানের টিকিট উপহার দিয়েছিল। একটি ফিলিপাইনের এয়ারলাইন সংস্থা বিমানে জন্মানো শিশু কন্যাকে বিনামূল্যে ১ মিলিয়ন এয়ার মাইল ভ্রমণের উপহার দিয়েছিল।
গর্ভবতীদের বিমান ভ্রমণে কড়াকড়ি
যদিও এখন কিছুটা সঙ্কুচিত মনোভাব হয়েছে এয়ারলাইনগুলোর। সংস্থাগুলো নিজেরাও এই উটকো ঝামেলায় জড়াতে চায় না। অনেক এয়ারলাইনই সন্তানসম্ভবা(Baby Born Mid Air) নারীদের ভ্রমণের ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করে।
আরব আমিরাতের এতিহাদ, কাতারের কাতার এয়ারওয়েজ, তুরস্কের টার্কিশ এয়ারওয়েজ সহ বিশ্বের অধিকাংশ এয়ারলাইনই ৩৬ সপ্তাহের বেশি সময়ের গর্ভবতী নারীদেরকে প্লেনে চড়ার অনুমতি দেয় না। অনেক এয়ারলাইন ২৬ কিংবা ২৮ সপ্তাহের পর থেকেই ডাক্তারের সার্টিফিকেট চেয়ে বসে। এছাড়াও এক সন্তান, যমজ সন্তান প্রভৃতির জন্যও এয়ারলাইনগুলো ভিন্ন ভিন্ন শর্ত রাখে।
ঘটে দুর্ঘটনাও
তার পরেও মাঝে মাঝে দুর্ঘটনা ঘটে যায়। অনেক সময়ই নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই অনেক নারীর প্রসব বেদনা উঠতে পারে। ২০১৫ সালে এরকম একটি ঘটনাও ঘটেছিল, যেখানে এয়ার কানাডার একটি ফ্লাইটে প্রসব বেদনা ওঠার পূর্ব পর্যন্ত অ্যাডাগুয়ানের কোনও ধারণাই ছিল না যে, তিনি গর্ভবতী! তার প্রেগন্যান্সি টেস্টে একাধিকবার ভুল ফলাফল এসেছিল, ফলে তার ধারণা ছিল এমনিতেই তার ওজন বৃ্দ্ধি পাচ্ছে।
এজেড