শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ঢাকা-টরন্টো রুট: বিমানের সেবায় ‘সন্তুষ্ট’ যাত্রীরা

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ১০ আগস্ট ২০২২, ০৪:১১ পিএম

শেয়ার করুন:

ঢাকা-টরন্টো রুট: বিমানের সেবায় ‘সন্তুষ্ট’ যাত্রীরা

‘বিমানের সার্ভিসের মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার বেশি ভালো লেগেছে তারমধ্যে আতিথেয়তা এবং কেবিন ক্রুদের প্রফেশনালিজম (নিজেদের দেশের যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা বোঝার জন্য), বিজনেস ক্লাসের সিট অনেক বেশি সুপরিসর। যেহেতু বিমানটি এক বছরেরও কম সময়ের বোয়িং ড্রিমলাইনার শ্রেণির, এর ইকোনমিক ক্লাস এবং প্রিমিয়াম ইকোনোমিও যথেষ্ট ভালো।’

ঢাকা-টরন্টো রুটে বাংলাদেশ বিমানে যাত্রার কথা বলতে গিয়ে এভাবেই নিজের অনুভূতির কথা জানান যাত্রী নুরুল আহাদ চৌধুরী। কানাডায় আইটি পেশায় কাজ করা নুরুলের সঙ্গে সোমবার সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগ হলে তিনি বিমান বাংলাদেশের সেবা সম্পর্কে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন।


বিজ্ঞাপন


নুরুল আহাদ চৌধুরী বলেন, গত ২৭ জুলাই প্রথম ফ্লাইটে আমি বিজনেস ক্লাসের যাত্রী ছিলাম। আগস্ট ৬ তারিখে প্রিমিয়াম ইকোনমি ক্লাসের যাত্রী হিসেবে ঢাকা থেকে টরন্টো ফিরি। এটি আমার জন্য একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।

তিনি বলেন, টরন্টো যাত্রায় বিমানের ভালো দিক ছিল- উড্ডয়ন এবং অবতরণের সময় ঝাঁকুনি কম। এছাড়া খাবারের মান যথেষ্ট ভালো (প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য মিলিয়ে)। আর সত্যি বলতে কি ১৫ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট বিরতিহীন যাত্রায় খুব সময় বাঁচিয়ে দেশে যাওয়ার আনন্দটাই আলাদা। সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো, যেকোনো ক্লাসের ভাড়া, এমিরেটস/কাতার এয়ারলাইন্স এর চেয়ে অনেক কম। এই গ্রীষ্মে, একটি এয়ারলাইন্স যেখানে এই রুটে তিন হাজার ডলার ইকোনমি ক্লাসে অফার করেছে, এখানে বিমান অফার করেছে ১৭৮০ ডলার! এখনো পর্যন্ত বিমান সিডিউল মেইনটেইন করতে পেরেছে এবং আশা করি পারবে ইনশাআল্লাহ।

biman

শুধু নুরুল আহাদ চৌধুরীই নন, তার মতো এই রুটে যাত্রা করা অনেক বাংলাদেশির অনুভূতি এমনই। অথচ বিমান সম্পর্কে একসময় প্রবাসী বাঙালিদের নেতিবাচক মনোভাব ছিল। টাকা-টরন্টো রুটের বিমান সার্ভিস বদলে দিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।


বিজ্ঞাপন


‘অন্যদের কাছ থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সেবা নিয়ে অবমূল্যায়িত হওয়ার কথা শুনেছিলাম। বিমানে ভ্রমণ করতে ভয় পেতাম। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ। অসীমের শক্তিতে আমার যাত্রা সেরা ছিল। বিমানের ক্রুরা আমাদের প্রতি যথেষ্ঠ বন্ধুত্বপূর্ণ। তারা যত্নশীলও বটে (কিছু বিরক্তিকর যাত্রীদের জন্য নয়)।’ ঢাকা টু টরন্টো রুটে বিমানে যাত্রার পর বিমানের সেবা নিয়ে কানাডায় বসবাসরতদের নিয়ে একটি সামাজিক মাধ্যমে খোলা গ্রুপে (বিসিসিবি নামে) এমনভাবে মূল্যায়ন তুলে ধরেছেন এক যাত্রী। তাদের এমন মূল্যায়ন বলে দেয় এই রুটে যাত্রা করে যাত্রীদের সন্তুষ্টির কথা।

কানাডায় বসবাসরতদের ফেসবুক গ্রুপটিতে সেই যাত্রী স্টাটাসে লিখেছেন, যারা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে ঘৃণা করেন বা এখনও ঘৃণা করেন তারা দয়া করে এই পোস্টটি এড়িয়ে যান। যখন আমি ২০১৪ সালে উড়েছিলাম তখন কিন্তু কানাডা রুটে সরাসরি ফ্লাইট ছিল না। আমি যখনই সিঙ্গাপুর বা ভারত সফর করেছি বাংলাদেশ বিমানে ভ্রমণ করেছি এবং আলহামদুলিল্লাহ সবচেয়ে ভালো হয়েছে। আজ (সম্প্রতি) অবশেষে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সঙ্গে উড়াল দিল। আমি অন্যদের কাছ থেকে অবমূল্যায়িত বিবৃতি শুনে এবং পড়ার পরে ভ্রমণ করতে ভয় পেয়েছিলাম কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ অসীমের শক্তিতে আমার যাত্রা সেরা ছিল।

dhaka toronto

তিনি আরও লিখেছেন, বিমানের এই রুটে ফ্লাইটের দায়িত্বে থাকা ক্রুরা আমাদের প্রতি যথেষ্ঠ বন্ধুত্বপূর্ণ এবং যত্মশীল ছিলেন (কিছু বিরক্তিকর যাত্রীদের জন্য নয়)। একজন ক্রু সদস্য যার নাম ‘বিথি’ ম্যাডাম তিনি ছিলেন সত্যিকারের পেশাদার এবং বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। ফ্লাইটের সময় যখনই প্রয়োজন হয় তিনি আমাকে একা সাহায্য করেছিলেন। গত কয়েক সপ্তাহ থেকে আমি ফ্লাইটে বিলম্বের সাক্ষী ছিলাম। কিন্তু সৌভাগ্যবশত বিমানের সঙ্গে কোনো বিলম্ব হয়নি। আমি পৌঁছানোর ৪০ মিনিটের মধ্যে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে আসি। বিমানে ঘুমাচ্ছিলাম বলে আমার প্রথম খাবার মিস হয়। তবে দ্বিতীয় খাবারের জন্য তাদের কাছে চিকেন, বিফ এবং মাটন থেকে বেছে নেওয়ার জন্য তিনটি বিকল্প ছিল। শেষ খাবারের জন্য আমরা তুরস্ক থেকে খাবার নিয়েছিলাম। আমি আমার উভয় খাবার পছন্দ করেছি।

বিমানের সেবা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। কিন্তু গত ১৫ জুলাই ঢাকা-টরন্টো রুট সেই ধারণা অনেকটা বদলে দিয়েছে। সেদিন ফ্লাইটে ২৫০ জনের সিট থাকলেও যাত্রী সংখ্যা দেড় শতাধিক ছিল। ফলে বাকি সিটগুলো ফাঁকা যায়। যাত্রীর পাশাপাশি কার্গো সার্ভিসও চালু হয়।

বিমানের নতুন রুটের যাত্রায় সেবায় পরিবর্তন এসেছে দাবি করে অনেকে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। মাত্র একদিনের সেবায় বিমান সম্পর্কে অনেকের নেতিবাচক ধারণা বদলে দিয়েছে।

biman

যাত্রীরা মনে করছেন, ঢাকা-টরন্টো সার্ভিস চলমান থাকলে বিমানের ভাবমূর্তি আরও বাড়বে। দেশের পতাকাবাহী বিমানটি এ রুটে লাভবান হবে। সঙ্গে বাড়তি আয় তো আছেই। এছাড়াও এই রুটে কার্গো সার্ভিস থেকে আয় হতে শুরু করেছে বলেও জানা গেছে। এতে বিমানের আয় বাড়বে এবং এটি ধরে রাখতে পারলে লাভের মুখে দেখবে বিমান বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিমান সূত্র জানায়, এই রুটের টিকিট কিনলে তিনটি বিকল্প থাকবে। বিজনেস ক্লাস, প্রিমিয়াম ইকোনমি এবং ইকোনমি। তবে অবশ্যই দাম পরিবর্তিত হবে। বিশ্বের অন্য বিমানগুলোতে প্রথম শ্রেণির ওয়াশরুম ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয় না। কিন্তু প্রিমিয়াম ইকোনমি কিনলে আপনি তেমন কোনো বিড়ম্বনার শিকার হবেন না। মাঝপথে তুরস্কে খানিকটা তেল নিতে বিরতি দেওয়া হয়। বিরতির ফাঁকে দ্বিতীয় টেকঅপের সময় পুরো ফ্লাইটটি পরিষ্কার করা হয়। বদল করা হয় ক্রুদেরও। নতুন ক্রু যোগ হয় তুরস্ক থেকে দ্বিতীয় টেকঅফের সময়।

যাত্রীদের অনেকে তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিমানের সেবায় খুশি হয়ে স্ট্যাটাসও দেন। এক যাত্রী লিখেছেন, ঢাকা টু কানাডা রুটে সাড়ে ১৫ ঘণ্টা লাগে। কিন্তু সেটি মনে হয়নি। কারণ মাঝখানে যদি একটা ঘুম দেওয়া যায় তাহলে জার্নিটা অনেক বেশি মনে হয় না। ফলে এত দূরের যাত্রায় ক্লান্তিবোধের মতো বিষয়টি আমার এবং আমার ছেলের কাছে মনে হয় নাই।

biman

তিনি বলেন, ফ্লাইটের সিটে ইংরেজি মুভি অনেক কম ছিল। যেটা আমার ছেলের একটা কমপ্লেইন ছিল। কিন্তু সেটাও ভালো একটা দিক। কারণ বিমান কর্তৃপক্ষ বাংলাকে প্রমোট করার চেষ্টা করছেন। যদিও আমার ছেলের ইংরেজি মুভি পছন্দ। আমার ছেলেও গেমও খেলেছে। শেষে লাগেজ পেতে তেমন বেগ পেতে হয়নি। 

এই রুটে যাত্রা করতে গিয়ে যাত্রীরা বিমান থেকে পরিবেশিত খাবার নিয়েও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেকে। একজন বলেন, রাতে ডিনারে ছিল মাটন রেজালা, সবজি এবং ভাত অথবা চিকেন, সবজি, ভাত। সকালের নাস্তায় ছিল পরোটা, বুটের ডাল, চিকেন অথবা এগ ওমলেট, মাশরুম, পটেটা। এবং থার্ড মিল যেটা নামার দুই ঘণ্টা আগে সার্ভ করেছিল ওখানেও অপশন ছিল মাটন অথবা চিকেন। খাবারের মান যথেষ্ট ভালো এবং সুস্বাদু ছিল।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. যাহিদ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ঢাকা-টরন্টো রুটে আমরা যাত্রী পাচ্ছি। যাত্রীরাও সেবায় বেশ খুশি। এরই মধ্যে ব্যাপক সাড়াও মিলছে। ইতোমধ্য্যে কোনো কোনো ফ্লাইটে ২৫০টির বেশি সিট বুকিং হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এছাড়াও এই রুটে কার্গো পরিবহন করা হচ্ছে। এই খাত থেকেও আয় আসতে শুরু করেছে। একটি ফ্লাইট থেকে আমরা ১০ টন কার্গো পরিবহন করে ৭০ হাজার মার্কিন ডলার আয় করেছি।

বিমানের এমডি বলেন, এই রুটে বিজনেস ক্লাস যাত্রী এবং কার্গো বহন বাড়াতে পারলে বিমান লাভজনক হবে। এছাড়াও তারা এই রুটে কানাডার পাশাপাশি পাশের দেশ ভারত ও নেপালেরও যাত্রী পাচ্ছেন। যা এই রুটের জন্য একটি খুবই ভালো দিক।

এমআইকে/এমআর/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর