শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

যেখানে হাজারো যুদ্ধবিমানের সমাধি

এভিয়েশন ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ আগস্ট ২০২২, ১২:১৯ পিএম

শেয়ার করুন:

যেখানে হাজারো যুদ্ধবিমানের সমাধি
এক সময় আকাশটাকে এফোড় ওফোড় করে উড়ে বেড়াতো। আজ সেগুলোই অচল। তারুণ্যে গর্জে ওঠা শরীরে নেই প্রাণ। যাদের শরীরে প্রাণ আছে তারাও যেনো ধুঁকছে। পড়ে আছে এখানে সেখানে। গায়ে জমেছে ধুলো। ক্ষয়ে যাচ্ছে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। বলা হচ্ছে এক ঝাঁক যুদ্ধ বিমানের কথা। 

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা মরুভূমিতে এমনই হাজার হাজার যুদ্ধবিমানের ছবি ক্যামেরাবন্দি করেছেন জার্মান আলোকচিত্রী বার্নহার্ড ল্যাং।


বিজ্ঞাপন


বার্নহার্ড ল্যাং টুকসনের একটি সামরিক বিমান ঘাঁটির উপর থেকে অসাধারণ কিছু ছবি তুলেছেন। ইতিমধ্যে সেই ছবি ভাইরাল। কোনও ছবিতে দেখা যাচ্ছে, দাবাবোর্ডের মতো করে সাজানো রয়েছে উড়োজাহাজ।

planeজায়গাটা অ্যারিজোনার টুকসন। এখানেই রয়েছে যুদ্ধবিমানের ‘কবরস্থান’। না, এই কবরস্থানে সবাই মৃত নয়, কেউ কেউ মৃত্যুর অপেক্ষায়। কেউ এখনও বেঁচে আছে!। ফের ওড়ার আশায় প্রহর গুনছে তারা।

প্রথম ধাক্কাটা দিয়েছে মহামারি করোনা। এই বিমান ‘কবরখানা’য় যুদ্ধবিমানকে সঙ্গ দিতে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয় অসামরিক বা যাত্রীবাহী বিমানও। সেই ‘অ্যারোস্পেস মেন্টেনেন্স অ্যান্ড রিজেনারেশন গ্রুপ’ (৩০৯তম এএমএআরজি)-র ছবি ক্যামেরাবন্দি করেছেন জার্মান চিত্রগ্রাহক।

plane২,৬০০ একর জুড়ে থাকা ডেভিস-মন্থান বিমান ঘাঁটিতে প্রায় ৪ হাজার বিমান সাজিয়ে রাখা হয়েছে। যাকে বিশ্বের বৃহত্তম বিমান সংরক্ষণ কেন্দ্র বলা চলে।


বিজ্ঞাপন


এই সামরিক বিমানগুলোকে সাজিয়ে রেখে যুদ্ধের সময় সাময়িক ভাবে ‘পার্ক’ করা হয় অথবা, পরে বিক্রি, বাছাই কিংবা পুনর্ব্যবহারের জন্য রেখে দেওয়া হয়। কিন্তু বছরের পর বছর পড়ে থাকতে থাকতে বেশিরভাগ উড়ানই ধ্বংসের অপেক্ষায়!

এই বিশাল মৃতপ্রায় বিমান-শরীরের পাশে এমনও কিছু বিমান রয়েছে, যারা আবার উড়তে সক্ষম। কিন্তু তাদের শরীরে মরিচা পড়ছে। দরকার সেবা-শুশ্রূষা।

planeপুরনো কিন্তু উড়তে সক্ষম, এমন বিমানগুলিকে ‘কবর’-এ রেখে দেয় সামরিক বাহিনী। কোনও সময় রাষ্ট্রের মধ্যে নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি হলে, যুদ্ধবিমানের ঠাঁই হয় এখানে। কখনও আবার আধুনিকীকরণের জন্য অ্যারিজোনার এই বিমানের কবরস্থানে আনা হয় যুদ্ধবিমানগুলোকে।

কেন অ্যারিজোনায় রাখা হয় এই যুদ্ধবিমান? 

ঘাঁটির চারপাশে শুষ্ক আবহাওয়া একে বিমান সংরক্ষণের আদর্শ জায়গা করে তুলেছে। খরখরে আবহাওয়া, কম আর্দ্রতার জন্য এখানকার মাটি এতটাই শক্ত যে দৈত্যাকার বিমানকে রাখা হলেও তা একেবারে মাটির ভেতরে ঢোকে না।

planeঅ্যারিজোনার এই জায়গা কেবল আর সামরিক বিমানের বিশ্রামস্থল নয়। করোনা পরিস্থিতিতে আমেরিকান অসামরিক বিমান সংস্থাগুলো শত শত বিমান সেখানে রেখেছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অ্যারিজোনার টুকসন ছিল যাত্রীবাহী বিমানের ‘অস্থায়ী আবাস’।

কোন কোন বিমান থাকে না এখানে। বিশালাকার কার্গো প্লেন থেকে ভারী বোমারু বিমান থেকে যাত্রীবাহী বিমান, সবই থাকে এখানে।

এয়ারফোর্স, নেভি ইত্যাদির যে বিমানগুলো অপ্রচলিত হয়ে পড়েছে এবং ভবিষ্যতের জন্য যাদের সংরক্ষণ করা প্রয়োজন, সেগুলো অ্যারিজোনা মরুভূমির এই অঞ্চলে রাখা হয়।

plane

বাণিজ্যিক বিমানের আয়ুষ্কাল ভীষণ সীমিত। কিছু দিন ব্যবহারের পরে তাদের আবার পরে ওড়ানোর জন্য রেখে দেওয়া হয়। কিন্তু যেখানে-সেখানে তো রাখা যায় না। তার জন্য চাই সংরক্ষণের অনুকূল পরিবেশ। যাদের আর একেবারেই ওড়ানো যাবে না, তাদেরও রাখা হয়। কোনও সময় খুচরা যন্ত্রাংশের প্রয়োজন হলে এদেরকে ব্যবহার করা যায়।

বিমান সংরক্ষণের জন্য বিশেষ করে খেয়াল রাখতে হয়। এক, বাতাস এবং দুই সূর্যের তাপ। এই দুটি জিনিস বিমানের ক্ষতি করতে পারে। ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বিমানের ইঞ্জিন এবং জানালা সব সময় সাদা, প্রতিফলিত উপাদান দিয়ে ভালো করে ঢেকে দেওয়া হয়। এভাবে ঢাকা অবস্থায় নির্দিষ্ট পরিবেশে একটি বিমানকে বছরের পর বছর ধরে নিরাপদে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।

এজেড

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর