বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

জি-লক: উড়ন্ত বিমানে যে কারণে পাইলট জ্ঞান হারান

এভিয়েশন ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ জুলাই ২০২২, ০২:০৮ পিএম

শেয়ার করুন:

জি-লক: উড়ন্ত  বিমানে যে কারণে পাইলট জ্ঞান হারান

একজন পাইলটকে স্বাভাবিকভাবে বিমান চালাতে দেখি আমরা। নিজের দক্ষতার মাধ্যমে তিনি একটি আকাশযানকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে উড়িয়ে নেন। শুনলে অবাক হবেন, ভূপৃষ্ঠ থেকে কয়েক হাজার মাইল ওপরে অবস্থানকালীন পাইলট জ্ঞানও হারিয়ে ফেলতে পারেন। এমন অবস্থাকে জি-লক (g-LOC) বলা হয়। চলুন বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই। 

যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত ইউনাইটেড স্টেট নেভি’স ফাইটার উইপন্স স্কুল। এর ছোট ও জনপ্রিয় নাম টপ গান। যুক্তরাষ্ট্রের এই স্কুলে সবচেয়ে মেধাবী পাইলটদের ফাইটার প্লেন চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। খুব কঠিন কিছু ধাপ পার করতে হয় তাদের। টপ গান থেকে যারা প্রশিক্ষণ নেন তাদের টপ গান পাইলট বলা হয়। 


বিজ্ঞাপন


airএয়ার শো কিংবা এরিয়েল কমব্যাটগুলোতে পাইলটরা যখন বিমানগুলোকে কাত করে এবং খুব তীব্রভাবে ঘুরতে থাকে, তখন অনেক পাইলট জ্ঞান হারিয়ে ফেলে এবং বিমানের ভেতরের শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করে। বিজ্ঞানের ভাষায় পাইলটদের এই অবস্থাকে g-LOC বলে। এখানে g এর মাধ্যমে মহাকর্ষের প্রভাবকে বুঝায়। LOC বলতে loss of consciousness-কে বোঝায়। অর্থাৎ g-LOC এর পুরোটুকু একত্রে বলা হয় g-induced loss of consciousness। অনেকসময় একে g-Force ও বলা হয়। 

চলন্ত বিমানে জ্ঞান হারিয়ে ফেলা পাইলটদের জন্য একটি বড় সমস্যা। কারণ g force বেড়ে যাওয়ায় পাইলটদের দৃষ্টির পরিধি ছোট হয়ে আসে। তাদের চোখে শুধু সামনের দৃশ্য প্রতীয়মান হয়। চারপাশের দৃষ্টিসীমা ছোট হয়ে আসে। এমন পরিস্থিতি অনেকক্ষণ স্থায়ী হলে পাইলটরা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। 

g-locতবে টপ গান পাইলট, যারা দ্রুত গতির প্লেন চালায়, তাদের ক্ষেত্রেই এমনটা হয়ে থাকে। কমার্শিয়াল প্লেনের পাইলটদের এমন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় না। প্রশ্ন হলো, কেন এমনটি হয়? কেন পাইলটরা প্লেন চালানোর মধ্যেই অজ্ঞান হয়ে যায়?

ফাইটার প্লেন চালানোর সময় বিমান যখন আকাশে বাঁক খায় অর্থাৎ বাহনটি যখন বেঁকে যায় তখন পাইলটদের মাথাও বেঁকে যায়। এ পর্যায়ে মাথার রক্তচাপ নিচে নেমে যায়। ফলে পাইলটের দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যায় এবং আস্তে আস্তে চেতনা লোপ পায়। 


বিজ্ঞাপন


g-locএই বেঁকে যাওয়ার সময় কেন্দ্রাভিমুখী ত্বরণ অনেক সময় 2gs বা 3gs হয়। ফলে পাইলটদের কাছে নিজেদেরকে ভারী বলে মনে হয়। এই ত্বরণ যখন বেড়ে 4gs হয়ে পড়ে, তখন আস্তে আস্তে পাইলটদের দৃষ্টি পরিধি টানেল ভিশনে নেমে আসে। অর্থাৎ এই পর্যায়ে তিনি শুধু সামনের দৃশ্যই দেখতে পান। মানুষ সাধারণত খালি চোখে ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত দেখতে পারে। টানেল ভিশনে সেটা সম্ভব হয় না। এমন অবস্থায় পাইলটরা শুধু সাদা-কালো দৃশ্যই দেখতে পায়।

পুরনো মডেলের জেট বিমানগুলোতে এমন বাঁক নেওয়ার সময় পাইলটদের অনেকগুলো সতর্কতা সংকেত দেওয়া হতো। তারা যেন g-LOC পরিস্থিতিতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আধুনিক জেট বিমানগুলো খুব সহজেই এবং বেশ দ্রুত বেঁকে যেতে পারে আবার সোজা হয়ে যেতে পারে। তাই অনেকসময় পাইলটরা বিমানের সংকেত পাওয়ার আগেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

g-locকিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান না ফিরলে দুর্ঘটনা অবশ্যম্ভাবী। অ্যাভিয়েশন সাইকোলজির একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা এটি। সেজন্য প্রশিক্ষণ পর্যায়ে পাইলটদেরকে প্রায় 9gs থেকে বেশী পর্যন্ত সহ্য করতে হয় যাতে মূল বিমান চালানোর সময় হঠাৎ করে রক্তচাপ নিচে না নেমে যায়। পাইলট যেন তার ওপর প্রযুক্ত বল সহ্য করতে পারে।

তথ্যসূত্র: রোর মিডিয়া 

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর