বর্ষাকাল এলেই একদিকে যেমন দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্বস্তি নামে, অন্যদিকে যাত্রীদের মধ্যে বাড়ে উদ্বেগ—ঝড়-বৃষ্টিতে বিমান চলবে তো? আকাশে মেঘ, বজ্রপাত বা প্রবল বাতাস বিমান চলাচলে কতটা প্রভাব ফেলে, এ নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা যায়। বাস্তবে ঝড়-বৃষ্টিতে বিমান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ না হলেও কিছু বিশেষ সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় এভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে।
কেমন সমস্যা দেখা দেয়?
১. রানওয়ে ভিজে গেলে ঝুঁকি বাড়ে
প্রবল বৃষ্টিতে রানওয়ে পিচ্ছিল হয়ে পড়ে। এতে বিমানের অবতরণ বা উড্ডয়নের সময় ব্রেকিং সিস্টেমের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। পাইলটকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হয়।

২. দৃশ্যমানতা কমে যায়
বৃষ্টির সঙ্গে মেঘ জমে গেলে আকাশে ও রানওয়েতে দৃশ্যমানতা কমে যায়। এতে অবতরণ ও টেক-অফে সমস্যা হয়। এই সময় বিমানের স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র (instrument landing system) ব্যবহার করা হয়, তবে সব বিমানবন্দরে উন্নত প্রযুক্তি না থাকায় দেরি হয়।
৩. বজ্রপাত ও বিদ্যুৎ ঝুঁকি
বজ্রসহ বৃষ্টির সময় বিদ্যুৎপ্রবাহ বিমানকে সরাসরি ক্ষতি না করলেও, এতে যন্ত্রপাতির ত্রুটি বা টেকনিক্যাল ইস্যু হতে পারে। ঝুঁকি থাকলে ফ্লাইট স্থগিত রাখা হয়।

৪. আকাশে টার্বুলেন্স বাড়ে
ঝড়বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে আকাশে টার্বুলেন্স বা কাঁপুনি বেড়ে যায়। এতে যাত্রীদের অস্বস্তি হয় এবং অনেক সময় খাবার পরিবেশনা বন্ধ থাকে।
৫. শিডিউল বিঘ্ন ও ফ্লাইট বাতিল
অনেক সময় মৌসুমি নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড় বা ভারী বর্ষণে ফ্লাইট বিলম্বিত হয় বা বাতিল করা হয়। এতে যাত্রীদের অসুবিধা বাড়ে, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক রুটে কানেকশন মিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
আরও পড়ুন: বিমানে বজ্রপাত হলে যেভাবে নিরাপদ থাকেন যাত্রীরা
বিমান চলাচল কি পুরোপুরি বন্ধ থাকে?
না। বৃষ্টির সময় বিমান চলাচল সাধারণত সম্পূর্ণ বন্ধ হয় না। তবে নিরাপত্তার বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিশেষ পরিস্থিতিতে ফ্লাইট বাতিল বা দেরি করতে পারে। অধিকাংশ আধুনিক বিমান বজ্রসহ বৃষ্টিপাত সামলাতে সক্ষম এবং পাইলটরা এ বিষয়ে প্রশিক্ষিত।
যাত্রীদের করণীয়
বৃষ্টির দিনে ফ্লাইট থাকলে সময়ের আগে বিমানবন্দরে পৌঁছানো ভালো
বিমানের মোবাইল অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে ফ্লাইট স্ট্যাটাস চেক করতে হবে
প্রয়োজনে এয়ারলাইনের কাস্টমার কেয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা উচিত
প্রয়োজনীয় ওষুধ ও জরুরি জিনিস হাতে রাখতে ভালো
ঝড়-বৃষ্টিতে বিমান চলাচলে কিছু বাধা থাকলেও, আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ পরিচালনায় তা নিয়ন্ত্রণযোগ্য। যাত্রীদের উচিত ধৈর্য রাখা ও নিয়মিত তথ্য নিয়ে পরিকল্পনা করা। আকাশপথ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ— বৃষ্টি হলেও আকাশে উড়তে সমস্যা হয় না, তবে প্রস্তুত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।
এজেড

