শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

হাইব্রিড গাড়ির সুবিধা ও অসুবিধা জানুন

অটোমোবাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০১:৫০ পিএম

শেয়ার করুন:

হাইব্রিড গাড়ির সুবিধা ও অসুবিধা জানুন

পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানি খরচ কম হওয়ার কারণে জনপ্রিয় হয়েছে হাইব্রিড গাড়ি। এই গাড়ি ব্যবহারের সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও রয়েছে। 

হাইব্রিড গাড়ি কী


বিজ্ঞাপন


হাইব্রিড গাড়িতে দুটি ভিন্ন প্রপালশন প্রযুক্তি থাকে। এতে একটি রিচার্জেবল ব্যাটারি প্যাক দ্বারা চালিত একটি বৈদ্যুতিক মোটর, এবং অন্যদিকে একটি অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিন থাকে, যা সাধারণত পেট্রল দ্বারা চালিত হয়। হাইব্রিড গাড়ির উচ্চ ভোল্টেজের ব্যাটারি প্যাক বৈদ্যুতিক মোটরকে শক্তি প্রদান করে। অন্যদিকে, অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিন উচ্চ গতিতে টর্ক প্রদান করে।

উৎপাদন খরচ দিন দিন কমে আসার ফলে হাইব্রিড গাড়ি আরও সুলভ হয়ে উঠছে, ফলে এর জনপ্রিয়তাও বাড়ছে। ১৯৯৯ সালে প্রথম হাইব্রিড গাড়ি, টয়োটা প্রিয়াস বাজারে আনে টয়োটা। এরপর থেকেই এই প্রযুক্তির চাহিদা কেবল বেড়েই চলেছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই হাইব্রিড গাড়ির সুবিধা ও অসুবিধা।

hybrid carহাইব্রিড গাড়ির সুবিধা

হাইব্রিড প্রযুক্তির অনেক সুবিধা রয়েছে, যার কারণে এটি এতটা জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কম ধোঁয়া নির্গমন থেকে শুরু করে জ্বালানি দক্ষতা, সব ক্ষেত্রের সুবিধা নিয়ে হাইব্রিড গাড়ি এখন গাড়ি প্রেমীদের তালিকার শীর্ষে। জানুন হাইব্রিড গাড়ি ব্যবহারের সুবিধা। 


বিজ্ঞাপন


১. পরিবেশবান্ধব

যদিও হাইব্রিড গাড়িগুলো এখনো পেট্রোল ব্যবহার করে, তবে পরিবেশের জন্য এই গাড়িগুলো প্রচলিত গ্যাস চালিত গাড়ির চেয়ে অনেক ভালো। যেহেতু হাইব্রিড প্রযুক্তি কম কার্বন নির্গমন করে, তাই এটি আমাদেরকে একটি সবুজ পৃথিবীর দিকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়।

গ্যাস চালিত যানবাহনের অনেক নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে, আর এখানেই হাইব্রিড গাড়ি আপনাকে একটি বিকল্প এনে দেয়। এমনকি, আপনি যদি আপনার হাইব্রিড গাড়িটি শুধুমাত্র গ্যাসের মাধ্যমে চালান, তবুও এটি আপনার একটি গ্যাস-চালিত গাড়ি থেকে কম গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গত করবে। আর গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আমাদের উচিত হাইব্রিড গাড়ি বেছে নেওয়া।

২. জ্বালানি দক্ষতা

হাইব্রিড গাড়িতে একটি ব্যাটারি-প্যাক থাকায় এটি গ্যাস চালিত অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিনের উপর কম নির্ভর করে। ফলে এটি কম জ্বালানি গ্রহণ করে এবং আপনাকে গ্যাসের বিরাট খরচ থেকে বাঁচায়। আর যেহেতু আপনি খুব একটা পেট্রোল ব্যবহার করছেন না, তাই আপনার হাইব্রিড গাড়িটিকে নিয়ে আপনার প্রায়ই গ্যাস স্টেশনে যেতে হবে না।

একটি হাইব্রিড গাড়িতে বৈদ্যুতিক প্রযুক্তি এবং একটি প্রচলিত দহন ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়, যা সর্বোচ্চ ফুয়েল ইকোনমি নিশ্চিত করে। আর যখন আপনি ব্রেক করেন, তখন এর হাইব্রিড গাড়ি ‘রিজেনারেটিভ ব্রেকিং সিস্টেম’ সেই শক্তি পুনরুদ্ধার করে। এই শক্তি হাইব্রিড গাড়ি ব্যাটারি রিচার্জ করতে ব্যবহার করা হয়। এভাবেও হাইব্রিড গাড়ি আপনাকে কম জ্বালানি খরচ, কম কার্বন নির্গমন, এবং গ্যাস স্টেশনে কম অর্থ ব্যয়ের সুযোগ করে দেয়। 

৩. ওয়ারেন্টি

প্রচলিত গ্যাস চালিত গাড়ির ক্ষেত্রে সাধারণত ৩ বা ৫ বছরের ওয়ারেন্টি দেওয়া হয়। কিন্তু একটি হাইব্রিড গাড়ির প্রস্তুতকারক সাধারণত তার গ্রাহকদের ৮ বছরের ওয়ারেন্টি প্রদান করে থাকে। আর এই ওয়ারেন্টির মধ্যে পুরো হাইব্রিড সিস্টেম অন্তর্ভূক্ত থাকে। তাই আপনার গাড়ির হাইব্রিড মেকানিজমের যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে চিন্তার কোনো কারণ নেই।

একটি নতুন গাড়ি কিনলে আপনি বিভিন্ন ওয়ারেন্টির সুবিধা পেতে পারেন। আর আপনি যদি একটি হাইব্রিড গাড়ি ক্রয় করেন, তবে আপনি অতিরিক্ত ওয়ারেন্টির সুবিধা পাবেন। কখনও কখনও, হাইব্রিড গাড়ির ব্যাটারির জন্য ১০ বছর/১,৫০,০০০ মাইল ওয়ারেন্টি দেওয়া হয়।

৪. কম রক্ষণাবেক্ষণ

একটি হাইব্রিড গাড়িতে দুটি শক্তির উৎস থাকে। এই সুবিধাটি গাড়ির ইঞ্জিনের উপর চাপ কমায়, যার ফলে তেল বা কুল্যান্টের প্রয়োজন কম হয়। এটি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের খরচ কমায়। যে গাড়িগুলো শুধুমাত্র দহন জ্বালানি ইঞ্জিনের উপর নির্ভর করে, সেগুলো সাধারণত বেশি ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়। ফলে সেগুলো প্রায়শই রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়।

৫. কম আওয়াজ

বৈদ্যুতিক মোটরের সুবাদে গ্যাস চালিত গাড়ির তুলনায় হাইব্রিড গাড়িগুলো অনেক কম আওয়াজ সৃষ্টি করে। এটি পরিবেশকে শব্দদূষণের হাত থেকে বাঁচায়। এমনকি, এর আওয়াজ এতটাই কম যে এই বৈশিষ্ট্যের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হাইব্রিড এবং বৈদ্যুতিক যানবাহনের জন্য শব্দ করার আইন করেছে। যেনো নিরাপত্তা নিয়ে কোনো উদ্বেগ সৃষ্টি না হয়। উদাহরণস্বরূপ, যখন প্রতি ঘন্টায় পাঁচ মাইলের নিচে চালানো হয়, তখন একটি টয়োটা প্রিয়াস সম্পূর্ণ নীরব থাকে।

৬. পুনরায় বিক্রয়ের সময় উচ্চমূ্ল্য

সারা বিশ্বে গ্যাসের দাম বাড়ছে, যা হাইব্রিড গাড়ির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির আরেকটি কারণ। ফলে, আরও বেশি মানুষ এর জ্বালানি দক্ষতার জন্য হাইব্রিড গাড়ি বেছে নিচ্ছে। এতে হাইব্রিড গাড়ি পুনরায় বিক্রয়ের সময় এর মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং, আপনি যদি সমস্ত সুবিধার পরেও আপনার হাইব্রিড গাড়িটি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে আপনি অন্য যেকোনো গ্যাস চালিত গাড়ির চেয়ে বেশি রিসেল ভ্যালু পাবেন।

hybrid carহাইব্রিড গাড়ির অসুবিধা

হাইব্রিড গাড়ির এতসব সুবিধা থাকা স্বত্বেও কিছু অসুবিধা রয়েছে। জানুন হাইব্রিড গাড়ির অসুবিধাগুলো সম্পর্কে।

১. অধিক ক্রয়মূল্য

যেহেতু এখনো পর্যন্ত এটি একটি নতুন প্রযুক্তি, তাই হাইব্রিড গাড়ি কিনতে চাইলে আপনার গ্যাস চালিত গাড়ির মতো একই পরিমাণ অর্থ খরচের আশা করা উচিত নয়। হাইব্রিড গাড়ির ক্রয়মূল্য সাধারণত গ্যাস চালিত গাড়ির তুলনায় অনেক বেশি হয়। কিন্তু গাড়ি কেনার পর আপনার খরচ কম হবে, যেহেতু আপনাকে প্রায়ই জ্বালানির জন্য গ্যাস স্টেশনে যেতে হবে না।

২. রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেশি

এটা সত্যি যে গ্যাস চালিত গাড়ির মতো হাইব্রিড গাড়িতে এতোটা রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হবে না। কিন্তু যখন রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়, তখন এর খরচ গ্যাস চালিত গাড়ির চেয়ে অনেক বেশি হয়। এছাড়া, যদি কোনো কারণে এর ব্যাটারি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়, তাহলে আপনার মানি ব্যাগের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যেতে পারে। এমনকি, আপনার এটাও মনে হতে পারে যে হাইব্রিড গাড়ি কিনে আপনি ভুল করেছেন। সাধারণত, একটি হাইব্রিড গাড়ির ব্যাটারির দাম প্রায় ২ হাজার মার্কিন ডলার, তবে এটি মডেলের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।

৩. কম গতি

আপনি হাইব্রিড গাড়িটি আপনি একটি গ্যাস চালিত গাড়ির মতো দ্রুতগতিতে চালাতে পারবেন না। এমনকি, আপনি যদি দ্রুত চালাতেও চান, তবে আপনার জ্বালানি বেশি ব্যবহৃত হবে। বেশি জ্বালানি ব্যবহার করা হলে আপনার হাইব্রিড গাড়ি ব্যবহার করার কোনো উপকারিতাই আর থাকবে না। কেননা জ্বালানি যতো বেশি ব্যবহার করা হয়, কার্বন নির্গমন ততো বেড়ে যায়, যা হাইব্রিড গাড়ির লক্ষ্য নয়।

৪. কম কর্মক্ষমতা

আপনি যদি বেশি কর্মক্ষমতার গাড়ি পছন্দ করেন, তাহলে হাইব্রিড গাড়ি আপনাকে আশাহত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি ২০২১ টয়োটা করোলা মডেল সর্বাধিক ২০৩ হর্সপাওয়ার উৎপন্ন করতে পারে। অন্যদিকে, এর হাইব্রিড মডেলটি বৈদ্যুতিক মোডে চালিত হলে কেবলমাত্র ১৭৬ হর্সপাওয়ার উৎপন্ন করতে সক্ষম।

অন্যান্য প্রযুক্তির মতো হাইব্রিড গাড়িরও কিছু ত্রুটি রয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, হাইব্রিড গাড়ির সুবিধা এর অসুবিধাগুলো থেকে অনেক বেশি। এতো এতো সুবিধা থাকায় আপনি চাইলেই অসুবিধাগুলো উপেক্ষা করতে পারেন।

এজেড

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর