দীর্ঘ পাঁচ বছর প্রতীক্ষার পর অবশেষে বৈদ্যুতিক সেমি ট্রাকের প্রথম উত্পাদন সংস্করণ সরবরাহ করেছে টেসলা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টেসলাপ্রধান ইলন মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রের স্পার্কস নেভাদার গিগাফ্যাক্টরিতে পেপসির কাছে প্রথম সংস্করণের সেমি ট্রাকগুলো হস্তান্তর করেন।
২০১৭ সালে টেসলা বৈদ্যুতিক সেমি ট্রাক উৎপাদনের ঘোষণা দিলে পেপসি ১০০টি ট্রাক অর্ডার করেছিল। এ সময় অ্যানহেউসার-বুশ, ওয়ালমার্ট এবং ইউপিএসের মতো প্রভাবশালী কোম্পানিগুলোও ট্রাক কেনার জন্য ফরমায়েশ দেয়।
বিজ্ঞাপন
ইলন মাস্ক টুইটে জানিয়েছেন, বেশ দেরি করে এর উৎপাদন শুরু হয়েছে। প্রথম ডেলিভারি হবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে।
২০১৭ সালে মাস্ক ইলেকট্রনিক ক্লাস 8 ট্রাক প্রোটোটাইপ চালু করেছিল। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে উৎপাদন কাজ শুরুর পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু নানা কারণে সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। টেসলা ২০২১ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের আয়ের প্রতিবেদনের সময় জানিয়েছিল, সাপ্লাই চেইন চ্যালেঞ্জ এবং ব্যাটারি কোষের স্বল্পতা থাকায় উৎপাদন কাজ ২০২২ সাল নাগাদ পৌঁছাতে পারে।
২০১৭ সালে টেসলা যখন এই ট্রাক বাজারে আনার কথা জানিয়েছিল, তখন অটোপাইলট সিস্টেমের ব্যবস্থা থাকবে বলে জানানো হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবারের ইভেন্টে মাস্ক বা টেসলার সেমি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সিনিয়র ম্যানেজার ড্যান প্রিস্টলি অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
অনুষ্ঠানে ট্রাকের কোনো স্বয়ংক্রিয় ক্ষমতার কথা উল্লেখ করা হয়নি। অটোপাইলটের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যামেরা বসানোর বিষয়ে আলোচনাও করা হয়নি। একইসঙ্গে সেমি ট্রাকের দাম সম্পর্কেও কিছুই জানানো হয়নি।
বিজ্ঞাপন
তবে টেসলা যে একেবারে কথা রাখেনি তাও নয়। ২০১৭ সালে দেওয়া অনেকগুলো প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন ২০২২ সালে এসে করে দেখিয়েছে। পাঁচ বছর আগে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছিল, তাদের এই সেমি ট্রাক সম্পূর্ণ লোড হয়ে গেলেও ঘণ্টায় তা ৬৫ মাইল বেগে ৫০০ মাইল চলতে পারবে। যা একবার চার্জ করলেই যথেষ্ট।
বৃহস্পতিবারের ইভেন্টে এমন এক ডেমো উপস্থাপন করা হয়, যেখানে একটি ভিডিওতে দেখা যায় ফ্রেমন্ট থেকে স্যান দিয়াগো পর্যন্ত ট্রাকটি এক চার্জে সম্পূর্ণ লোড অবস্থায় ৫০০ মাইল চলতে সক্ষম হয়েছে।
এর আগে মাস্ক জানিয়েছিলেন, গাড়িটি সম্পূর্ণ লোড অবস্থায় ২০ সেকেন্ডে শূন্য থেকে ৬০ মাইল/ঘন্টা চলতে পারবে। কিন্ত বৃহস্পতিবার এ গতিবেগ সম্পর্কে কিছু জানাননি মাস্ক। তবে মাস্ক এবং প্রিস্টলি ইভেন্টে ট্রাকের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে হাইওয়েতে সহজে অন্য একটি ট্রাককে মালামাল বোঝাই করে এবং এর বেগ ৬ শতাংশ বাড়াতে থাকে।
সেমি ট্রাকটি প্লেড মডেল এস এবং মডেল এক্স এর মতো একই পাওয়ারট্রেন ব্যবহার করে এবং একটি ট্রাই-মোটর সিস্টেমের উপর নির্ভর করে।
প্রিস্টলি বলেন, এর অর্থ হচ্ছে একটি মোটর ক্রমাগত সর্বাধিক দক্ষতার জন্য নিযুক্ত থাকে এবং অন্য দুটি টর্ক এবং ত্বরণের জন্য, যদি একজন চালক একটি লোডিং ডকে উঠতে থাকে বা অন্য গাড়িটি পাস করতে চায়, তখনই সেটি কার্যকর হয়ে উঠে।
ইলন মাস্ক বলেন, এটি মূলত ৮২ হাজার পাউন্ড ক্রুজে টানতে পারে। মোটরটি একটি ফুটবল আকারের ছিল কিন্তু শক্তির ঘনত্বের কারণে এটিকে ডিজেল ইঞ্জিনের চেয়ে বেশি শক্তিশালী বললে কম হবে না।
প্রিস্টলি এও বলেন, এই মুহূর্তে রাস্তায় থাকা যেকোনো ডিজেল ট্রাকের চেয়ে এই সেমি ট্রাকে তিনগুণ শক্তি রয়েছে।
এদিকে মাস্ক বলেন, সেমি খুব দ্রুত গতি বাড়াতে পারে এং ব্রেকও কষতে পারে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, এটি রিজেনারেটিভ ব্রেকিং দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, যার অর্থ চালকরা এক্সিলারেটর থেকে তাদের পা সরিয়ে নিলেও ব্রেকগুলো ব্যাটারিতে পাওয়ার সরবরাহ করতে পারবে।
মাস্ক আরও উল্লেখ করেন, বৈদ্যুতিক মোটরগুলো ডিজেল ইঞ্জিনের চেয়ে আরও সুনির্দিষ্ট থাকায় এর চাকার ট্রাকশন ভালো এবং এটি ট্রাকটিকে জ্যাকনিফিং থেকে থামাতে বেশ কার্যকর।
ইভেন্টে প্রিস্টলি জানান, আগের বিজ্ঞাপন অনুসারে, ট্রাকের ভিতরে ক্যাবের মাঝখানে সিট রাখা হয়েছে। ফলে ড্রাইভাররা ক্যাবের মধ্যে দাঁড়াতে এবং পোশাক পরিবর্তন করতে পারবেন।
মাস্ক বলেন, আপনি যানবাহনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দক্ষতা পাবেন। এখানে একটি টাচ সাসপেনশন ডাম্প আছে, যেটি দিয়ে অনায়েসেই ট্রেলারের সাথে সংযুক্ত হওয়া যায়। এটি সময় এবং অর্থ সাশ্রয় করে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, টেসলা পাঁচ বছর আগের চার্জিং প্রযুক্তির প্রতিশ্রুতিও ঠিক রেখেছে। সে অনুযায়ী, সেমিসকে একটি ‘মেগাওয়াট ক্লাস চার্জার’ দিয়ে চার্জ করা হবে। যেটিতে একটি নেক্সট-জেন ইমারসিভ কুলিং সিস্টেম রয়েছে। এই চার্জারগুলো হবে টেসলার সুপারচার্জার নেটওয়ার্কের মতো। কোম্পানি চার্জারগুলোর পাশাপাশি মেগাপ্যাকগুলোও ইনস্টল করবে। যা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ীও হবে।
টেক ক্র্যাঞ্চ অবলম্বনে
এজেড