বছরের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত উৎসব ঈদ। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে লাখো মানুষ ছুটে যান গ্রামের বাড়িতে। বাস বা ট্রেনের টিকিট না পেয়ে কিংবা ভিড় এড়িয়ে সহজ উপায়ে বাড়ি ফেরার জন্য অনেকেই বেছে নিচ্ছেন মোটরসাইকেল। তবে এই ‘সহজ যাত্রা’ সব সময় কতটা নিরাপদ, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
স্বাধীনতা বনাম সড়ক-ঝুঁকি
মোটরসাইকেলে যাত্রার মূল আকর্ষণ হলো স্বাধীনতা। যেখানে ইচ্ছা থামা যায়, ট্রাফিক এড়িয়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানো যায়, এবং জনবহুল যানবাহনের ভিড় থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। কিন্তু এই স্বাধীনতার পিছনে রয়েছে মারাত্মক ঝুঁকি। হাইওয়েতে বাইকের স্পিড, ভারি যানবাহনের চাপ, ক্লান্তি ও আবহাওয়ার প্রতিকূলতা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

পরিসংখ্যানে উদ্বেগ
বাংলাদেশ সড়ক নিরাপত্তা ফাউন্ডেশনের (আরএসএফ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ঈদ যাত্রায় সড়কে প্রাণ হারানোদের মধ্যে প্রায় ৪০% ছিলেন মোটরসাইকেল আরোহী। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল এবং ঢাকা-কুমিল্লা রোডে। এর প্রধান কারণ ছিল ওভারস্পিড, হেলমেট ছাড়া যাত্রা এবং রাস্তায় বিশ্রাম না নেওয়া।
বিজ্ঞাপন
সেফটি গিয়ার নেই বললেই চলে
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ঈদের সময় বাইকে বাড়ি ফেরা অনেকেই হেলমেট, গ্লাভস, রিফ্লেকটিভ জ্যাকেট বা বুটসের মতো নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করেন না। একাধিক বাইকে তিনজন করে যাত্রী পরিবহন করার প্রবণতাও রেকর্ড করা হয়েছে, যা আইনত দণ্ডনীয় এবং অতিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ।

সড়কের দুরাবস্থা এবং রাতের যাত্রা
বিভিন্ন হাইওয়েতে চলমান নির্মাণকাজ, খানাখন্দ ও অপ্রতুল স্ট্রিট লাইট ঈদের সময় বাইকারদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। অনেকেই রাতের যাত্রা বেছে নেন যানজট এড়িয়ে চলার জন্য, কিন্তু এতে দেখা যায় ক্লান্তি ও ঘুমের কারণে দুর্ঘটনার হার বেড়ে যায়।
পরামর্শ ও করণীয়
হেলমেট ও গিয়ার অবশ্যই পরুন।
দীর্ঘ যাত্রায় অন্তত প্রতি ৭০-৮০ কিলোমিটারে বিশ্রাম নিন।
সর্বোচ্চ ২ জন আরোহী থাকুন, তৃতীয় ব্যক্তি ঝুঁকিপূর্ণ ও নিষিদ্ধ।
রাতে না, দিনের আলোতেই যাত্রা করুন।
আরও পড়ুন: ঈদে মোটরসাইকেল নিয়ে ভ্রমণে গেলে করণীয় জানুন
যানবাহনের কন্ডিশন আগেই যাচাই করে নিন।
মোটরসাইকেলে ঈদের যাত্রা আনন্দের, যদি নিরাপদ হয়। একটি মুহূর্তের ভুল পুরো পরিবারের ঈদ আনন্দকে বিষাদে রূপ দিতে পারে। তাই শুধু গতির স্বাধীনতা নয়, জীবনের নিরাপত্তাকেই অগ্রাধিকার দিন।
এজেড

