মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

শিরোনাম ইমপাস্তো

কাবেরী আজাদ
প্রকাশিত: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:০৩ পিএম

শেয়ার করুন:

শিরোনাম ইমপাস্তো
শিল্পী সহিদ কাজী

“ছবির বিষয়বস্তুর মধ্যে ফুল এবং পাতার আধিক্য থাকার কারণ কী” —- এ প্রশ্নের উত্তরে শিল্পীর সরল উত্তর, “ভালো লাগে”। তবে ভালো লাগার সাথে সাথে এই সমস্ত বিষয়বস্তুর আরও তাৎপর্য আছে। প্রকৃতির এই সমস্ত উপাদান জীবন এবং মৃত্যুর ইঙ্গিত বহন করে শিল্পীর কাছে। শুধু তাই নয়, প্রতিটি ফুলের ছবিতে ক্যানভাস জুড়ে একজন ব্যক্তি মানুষের মতোই যেন একেকটি ফুলের প্রতিকৃতি বা Portrait সদর্পে আত্মপ্রকাশ করে শিল্পীর তুলিতে। অর্থাৎ ফুলটি যেকেনো ফুল নয়, একটি নির্দিষ্ট ফুল, যার হয়তো নামও দিয়ে দেয়া যাবে। 

“এই পাতাটা আমার মনে হয় যেন আমার অনেক দিনের চেনা। আঁকার সময় আমি বারবার ওর কাছে গিয়েছি, ওকে অবজার্ভ করেছি। ওর একটা বিনত জীবন ছিলো, যেটা পরোপকারী। গাছে থাকার সময় সে পরিবেশে অক্সিজেন দিয়েছে। তারপর একটা সময় নীরবে ঝরে গেছে। ঝরে যাওয়ার পর সে মাটিতে মিশে যাবে। মিশে যাওয়ার আগের মুহূর্তটাই আমি আমার ছবিতে ধরে রাখার চেষ্টা করেছি। অনেক পাতাই তো ঝরে যায়, কিন্তু ওর গল্পটা এখানে আঁকা থাকলো। আমাদের জীবনটাও তো অনেকাংশে এমনই, এভাবেই একদিন আমরাও মিশে যাবো মাটিতে।” —  ‘The last chapter of a beautiful life’ ছবিটি সম্পর্কে একথাই বলেন শিল্পী।


বিজ্ঞাপন


গত ৫ ডিসেম্বর রাজধানীর লালমাটিয়ায় ভূমি গ্যালারিতে শুরু হয়েছে শিল্পী সহিদ কাজীর প্রথম একক চিত্রপ্রদর্শনী ইমপাস্তো (IMPASTO)। ‘Impasto’ শব্দটি এসেছে ইতালীয় শব্দ ‘impastare’ থেকে, যার অর্থ ‘পেস্ট করা’ বা মাখানো। চিত্রকলার ভাষায় Impasto এমন একটি টেকনিক বা কৌশল যেখানে রঙ খুব পুরু করে ক্যানভাসে এমনভাবে লেপে দেয়া হয় যেন তুলির আঁচড়গুলো স্পষ্টভাবে বোঝা যায় এবং রঙ ছবির পৃষ্ঠ থেকে উঁচু হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে রঙ প্রয়োগের ফলে ছবিতে ত্রিমাত্রিকতা বা গভীরতা যোগ হয়। Impasto প্রদর্শনীতে মোট ৪৬টি ছবির প্রতিটিতেই এই বৈশিষ্ট্যটি দেখা যায় এবং সবগুলো ছবিই তেলচিত্র।

মাধ্যমের বৈশিষ্ট্যগত কারণে তেলরঙ সংরক্ষণ করা একটু জটিল, শিল্পবোদ্ধা যেকোনো ব্যক্তি মাত্রই এই জ্ঞান রাখেন। তেলরঙে ব্যবহৃত তিশির তেল বা লিনসিড অয়েল একটি অরগানিক বা জৈব পদার্থ হওয়ায় খুব সহজে ফাঙ্গাসের আক্রমণ হয় ছবিতে। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় বছরজুড়ে আর্দ্রতা অপেক্ষাকৃত বেশি হওয়ায় তেলরঙ সময়ের সাথে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে আরও বেশি। পশ্চিমা দেশগুলোতে যেকোনো পেইন্টিংয়ের এক্সিবিশনে কিছু সংখ্যক তৈলচিত্র থাকেই। কিন্তু বাংলাদেশে অনেক এক্সিবিশনেই দেখা যায় একটাও তৈলচিত্র নেই।  

kaberi
প্রদর্শনীতে শিল্পী সহিদ কাজী। ছবি: লেখক

 


বিজ্ঞাপন


এক্রিলিক রঙ জনপ্রিয়, সহজলভ্য এবং সংরক্ষণে সহজ হওয়ায় বেশিরভাগ শিল্পীই এখন তেলরঙের বিকল্প হিসেবে এক্রিলিকই ব্যবহার করেন। এমন একটি প্রেক্ষাপটে একজন শিল্পীর একক চিত্রপ্রদর্শনীতে সকল ছবিই তৈলচিত্র, এটি বাংলাদেশের শিল্প জগতে এখন বিরল ঘটনাই বটে। ছবির সংরক্ষণ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে শিল্পী সহিদ কাজী বলেন, “এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া আসলে। আপাতদৃষ্টিতে সবগুলো ছবি একই পদ্ধতিতে আঁকা মনে হলেও, একেকটা ছবির ট্রিটমেন্ট একেকভাবে করা হয়েছে এবং সেগুলোর আলাদা আলাদা নোট রাখছি। সময়ের সাথে কী কী পরিবর্তন হয়, তা স্টাডি করছি”। 

‘Impasto’ প্রদর্শনীর ছবিগুলো বিষয়বস্তুর দিক থেকে যেকোনো দর্শকের মনে ছাপ ফেলে যায়। একটি মৃতবৎ গোলাপ, ঝরা পাতার জীবন, পুরান ঢাকার বাড়ির বারান্দা, শুষ্ক কাশফুল বা বিস্তীর্ণ ধূ ধূ প্রান্তরের এবড়ো থেবড়ো পথের ছবিতে ভারি রঙের আস্তর আমাদের চিরচেনা জীবনের বাস্তবতার সাথে অনুরণিত হয় খুব সহজে। শিল্পপ্রেমীদের পদচারণায় তাই মুখরিত ছিলো প্রদর্শনীর এ কয়েকদিনই। ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত রোজ বিকাল ৩ টা থেকে রাত ৮টা অবধি প্রদর্শনীটি উন্মুক্ত থাকবে দর্শকদের জন্য। আপনারা যারা শিল্প ভালোবাসেন, ঘুরে আসতে পারেন শিল্পী সহিদ কাজীর এই ভিন্নধর্মী প্রদর্শনীটিতে। আশা করি নিরাশ হবেন না।

লেখক: শিল্পী ও শিক্ষার্থী, মাস্টার্স প্রথম পর্ব, অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর