‘আকাশ ভাঙিয়া নামে শ্রাবণধারা,
হৃদয় জুড়ে আসে কার মায়ার ছায়া…’
বৃষ্টি যেন বাঙালির প্রেমভরা একটা ঋতু। আবহাওয়ার অদ্ভুত এক আবেশময় রূপ, যেখানে হৃদয়ের গোপন কথা ভিজে যায় শব্দহীন ভালোবাসায়। বাংলা সাহিত্য ও কবিতায় বৃষ্টির ব্যঞ্জনা রোমান্টিকতার অন্যতম উপাদান হয়ে এসেছে যুগে যুগে। বৃষ্টি যেমন মাটি সিক্ত করে, তেমনি তা প্রেমিক হৃদয়ের গভীর অনুভূতিকে জাগিয়ে তোলে।
বিজ্ঞাপন
চলুন দেখে নিই বাংলা সাহিত্যে বৃষ্টি নিয়ে রোমান্টিক কবিতার কিছু চিরন্তন চিত্র—
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – বৃষ্টির মধুর ব্যথা
রবীন্দ্রনাথের অনেক কবিতায় বৃষ্টি এসেছে প্রেমের প্রতীক হয়ে। তাঁর কবিতায় বৃষ্টি কখনও বিরহ, কখনও মিলনের আহ্বান।
‘বৃষ্টি নামে,
এই শ্রাবণে আমার একলা বুকে,
জানলার ধারে দাঁড়িয়ে—
তোমার স্মৃতি ঝরে পড়ে জলের মতো…’
বিজ্ঞাপন
‘শ্রাবণ’ শব্দটি রবীন্দ্রনাথের কবিতায় যেন এক অন্তহীন অপেক্ষার নাম। প্রেমিকার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা প্রিয়জন যেন শ্রাবণেরই আরেক রূপ।

জীবনানন্দ দাশ – বৃষ্টিতে মায়া ও নস্টালজিয়া
জীবনানন্দের কবিতায় বৃষ্টি এসেছে নিঃসঙ্গতা, অতীত ও প্রেমময় নীরবতার রূপ নিয়ে।
‘বৃষ্টি পড়ে, তবু আমি যাব না বাইরে,
তোমার হাত ছুঁয়ে থাকি ঘরের কোণে।’
তার ভাষা বিমূর্ত, অথচ হৃদয়বিদারক এক প্রেমের অনুভব জাগিয়ে তোলে বৃষ্টির মাঝে।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় – বৃষ্টি মানেই নরম অনুভব
সুনীলের কবিতায় বৃষ্টি আসে স্মৃতি হয়ে, প্রেমিকার চুলের গন্ধ হয়ে, কিংবা একটানা হাঁটার মেটাফোর হয়ে।
‘এই বৃষ্টির মধ্যে তুমি যদি পাশে থাকো,
তবে আমি সারাদিন কেবল হেঁটে যেতে পারি—
ভেজা রাস্তায় ভালোবাসা ফোটে।’

হুমায়ুন আজাদ – নগর প্রেমে বৃষ্টির ছোঁয়া
আধুনিক শহরজীবনে প্রেমের নতুন রূপে বৃষ্টির উপস্থিতি দেখা যায় হুমায়ুন আজাদের কবিতায়। সেখানে বৃষ্টি যেন তীব্র আকাঙ্ক্ষা, আর শহর যেন সাক্ষী এক অলক্ষ্য প্রেমের।
‘তোমার সঙ্গে ভিজে যেতে চেয়েছিলাম আমি,
বৃষ্টির থেকেও বেশি ভিজতে চেয়েছিল হৃদয়।’
কাজী নজরুল ইসলাম – বিদ্রোহে প্রেম ও বর্ষার জয়গান
নজরুলের কবিতায় বৃষ্টি এসেছে প্রাণের উচ্ছ্বাস হয়ে। তার ‘বর্ষাবরণ’ কবিতায় যেমন প্রেম ও প্রকৃতি হাত ধরাধরি করে।
‘আজি বর্ষার দিনে আমার ভাঙা ঘরে,
এলো সে পরান-প্রিয়া গোপন ডাকে ধীরে।’
বৃষ্টির কবিতা কেন রোমান্টিক হয়?
বৃষ্টির শব্দ মানেই নৈঃশব্দ্য ভাঙা এক প্রেম।
চারপাশ স্যাঁতস্যাঁতে হলে মন হয়ে পড়ে নরম।
আলোর অভাব মানেই স্মৃতি ও অনুভব ঘন হয়ে ওঠে।
ছাতার নিচে পাশাপাশি হাঁটার রোমান্টিকতায় প্রেম জমে।
বাংলা সাহিত্যে বৃষ্টি কেবল একটি ঋতুই নয়, এটি এক প্রেমিক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। কবিদের কলমে বৃষ্টি হয়েছে প্রেমিকার চোখের জল, প্রেমিকের দীর্ঘশ্বাস, আবার মিলনের রাত্রির ডাক। বৃষ্টি মানেই ভালোবাসার পুনর্জন্ম।
আরও পড়ুন: বৃষ্টি নিয়ে ক্যাপশন ২০২৫
এইসব কবিতা প্রমাণ করে, যতই সময় বদলাক—বৃষ্টির দিনে ভালোবাসা বাঙালির হৃদয়ে ঠিকই ঝরে পড়ে, শব্দহীন কবিতার মতো।
এজেড

