শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

‘বিদ্রোহী’ ও ‘গতিবাদ’

ড. হাফিজ রহমান
প্রকাশিত: ২৫ মে ২০২৫, ১২:৩৬ পিএম

শেয়ার করুন:

‘বিদ্রোহী’ ও ‘গতিবাদ’

কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যে যে ‘বিদ্রোহী’ কবি হিসেবে পরিচিত, তার সবচেয়ে শক্তিশালী দলিল হচ্ছে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা। এই কবিতায় বিশেষ লক্ষণীয় একটি বৈশিষ্ট্য হলো গতিবাদ। গতিবাদ মানে কেবল শারীরিক গতি নয়; বরং চিন্তা, ভাষা, আবেগ এবং প্রতিক্রিয়ার মধ্যে এক ধরনের চলমান ও পরিবর্তনমুখী শক্তির প্রকাশ। নজরুল এই কবিতায় যে গতিময় ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা বাংলা কবিতার ইতিহাসে এক নতুন ধারার সূচনা করেছে। তাই কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় গতিবাদ (dynamism) এক অনন্য বৈশিষ্ট্য, যা কবিতাটিকে প্রাণবন্ত ও শক্তিশালী করে তোলে। কবি নিজেকে তুলনা করেছেন ঝড়, আগ্নেয়গিরি, বজ্র, রুদ্র, চণ্ডী, জিব্রাইলের পাখা, শিবের চুল, উচ্চৈঃশ্রবা, বোররাক প্রভৃতি প্রাকৃতিক ও পৌরাণিক শক্তির সাথে, যা চিরকালই দ্রুতগতিতে চলমান ও রূপান্তরশীল। যেমন তিনি বলেন, 
মহা-প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস!
আমি  ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, 
আমি ভীম ভাসমান মাইন!
আমি   ধূর্জটি, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর।
এখানে কবি যেন নিজেকে এক অপ্রতিরোধ্য শক্তির প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করছেন। আমি   ভেঙে করি সব চুরমার! এই পঙক্তিতে ধ্বংসের মধ্য দিয়ে নতুন কিছু গড়ার এক গতিশীল চিন্তা প্রকাশ পেয়েছে। একইভাবে, 
আমি   মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর,
আমি   দুর্বার,
আমি   অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,
আমি   দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল!
আমি   মানি না কো কোন আইন।

এই পঙক্তিগুলোতে বিদ্রোহের গতি ও তীব্রতা চরম রূপে প্রতিফলিত হয়েছে। শব্দচয়ন, ছন্দ, ও ক্রিয়াপদ ব্যবহারে কবি এক বিশাল শক্তির চলমানতা সৃষ্টি করেছেন, যা অন্যায়, জুলুম ও অন্য সব স্থবিরতার বিরুদ্ধে বজ্রনিনাদে গর্জে ওঠে। এইভাবে ‘বিদ্রোহী’ কেবল একটি কবিতা নয়, বরং এটি এক চলমান বিপ্লবের কাব্যিক রূপ।


বিজ্ঞাপন


বিদ্রোহী কবিতায় ব্যবহৃত শব্দঝড় গতিবাদের এক শক্তিশালী প্রকাশ। এই কবিতার ভাষা ও ভাব একদমই স্থির নয়। এটি যেন একটি চলমান ঝড়। কবি নিজেই বলেন আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর। এখানে কবি নিজেকে ঝড়ের
সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা কখনো থেমে থাকে না। ঝড়ের মতো বিদ্রোহী চেতনাও
ছুটে চলে বাধার পরোয়া না করে। এটি শুধু প্রতীকী নয়, কবিতার ছন্দ, শব্দচয়ন
এবং বাক্য কাঠামোতেও সেই গতিময়তা লক্ষ করা যায়।
নজরুল এই কবিতায় বারবার ব্যবহার করেছেন শক্তিশালী ক্রিয়াপদ।
"আমি   মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর, আমি   দুর্বার,---আমি ভেঙে করি সব চুরমার", এসব শব্দ শুধু অর্থেই নয়, উচ্চারণেও এক ধরনের শক্তিশালী গতি ও ছন্দ তৈরি করে, যা পাঠকের মধ্যে বিদ্রোহের আবেগ জাগিয়ে তোলে। এ যেন কেবল কবিতা নয়, অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে চলমান এক বিপ্লবের স্লোগান।

এই গতিবাদ শুধু কবির ভাষা ও শব্দে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তার চিন্তাধারার ভেতরেও প্রবাহিত। তিনি বিশ্বাস করেন, স্থবিরতা মানেই মৃত্যু, আর গতি মানেই জীবন। তাই তিনি নিজেকে ‘সৃষ্টি ও ধ্বংসের যমজ সন্তান’ বলেন, যেখানে ধ্বংসও এক ধরনের গতি, যা নতুন কিছুর জন্ম দেয়। কবির ভাষায়, 
“আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদচিহ্ন!”

এই লাথি দেওয়ার প্রতীকী চিত্রটিও গতি নির্দেশ করে। এ ধরনের ক্ষোভ প্রকাশ মূলত স্থিরতার বিরুদ্ধে এক কার্যকর প্রতিবাদ।
ছন্দ ও রিদমেও নজরুল এক নতুন মাত্রা এনেছেন। 'বিদ্রোহী' কবিতার প্রতিটি চরণ যেন তালের উপর তালে ধাক্কা দিচ্ছে। এটি কেবল ছন্দময় নয়, একেবারে আন্দোলনময়। এই কবিতার শব্দরা দাঁড়িয়ে থাকে না। ছুটে চলে, ঝাঁপিয়ে পড়ে, ভেঙে ফেলে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই গতিবাদ শুধুমাত্র আবেগ নয়। এটি একটি দর্শন। নজরুল বুঝিয়েছেন, পরিবর্তনের জন্য দরকার শক্তি, আর শক্তির প্রকাশ ঘটে গতি ও আন্দোলনের মাধ্যমে। সেই কারণেই 'বিদ্রোহী' কবিতা এক ধরনের চেতনাগত গতির সঙ্গীত, যেখানে কবি একজন ব্যক্তিনির্ভর বিদ্রোহী নন, বরং সময়ের চেতনায় চলমান এক মহাবিপ্লবী।

নজরুল কাব্যের প্রতিটি স্তরে প্রবল গতিশক্তির সঞ্চার স্বতঃস্ফূর্ত ও সর্বত্র বিস্তৃত। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় সুচয়িত গতিময় শব্দ-বাক্যের অসাধারণ প্রাণচাঞ্চল্যে কবিতার পঙক্তি-চরণ জীবন যুদ্ধের এক অসামান্য প্রামাণিক দলিল। ‘গতিই জীবন, স্থিতিই মরণ’ এমন দার্শনিক সত্যকে বিকশিত করতেই কবিতার বাণীতে ছন্দের দোলাচালের অন্তরালে ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় গতির বিষয়টি সহজ-সারল্যে প্রকাশিত। কবিতাটির সূচনাতেই গতির বিষয়টি ব্যাপক ও সুবিস্তৃতরূপে ধরা পড়ে।
বল     বীর – 
বল     উন্নত মম শির!
শির     নেহারি আমারি, নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রির!
বল     বীর –
বল  মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি’
চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি’
ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া,
                  খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া,
      উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব-বিধাতৃর!


বিজ্ঞাপন


কবির ভাষায় প্রতিটি মানুষই মহাবীর। তাই মানব-শির অবনত হতে পারে না। চির উন্নত। মানুষের ব্যক্তিত্ব এবং কার্যধারা এতোটাই সুউচ্চ ও উন্নত যে, শিখর হিমাদ্রির থেকেও উন্নত। এখানে উচ্চতা ভেদের যে প্রবল প্রত্যাশা তা গতিবেগের ধারণাকেও প্রবলতর করেছে। মানুষ কোথায় গিয়ে যাত্রা শেষ করবে? তারও একটি রূপরেখার চিত্রায়ণ এখানে পরিষ্কার। তা হলো- বীর মহাবিশ্বের মহাকাশ ভেদ করে, চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-তারা, সকল নক্ষত্রকে অতিক্রম করে, ভূলোক-দ্যুলোক, গোলক ও খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদ করে এক অদ্বিতীয় অবস্থানে গিয়ে অভিযাত্রা শেষ করতে চায়। কিন্তু পুরো বিষয়টি উচ্চতা অর্থাৎ কোটি কোটি আলোক বর্ষের পথ অতিক্রমের সাথে সম্পৃক্ত। এখানে স্পষ্টতই আলোর গতির চেয়েও বীরের গতিকে ক্ষিপ্রতর হিসেবে পরিচয় করানো হলো। ‘বিদ্রোহী’ কবিতার পুরো অবয়ব জুড়ে এমন গতি প্রবাহের নানাবিধ প্রমাণ মেলে। 

কিন্তু নজরুলের কবিতায় উন্মত্ত উদ্দামতা ও বিদ্রোহাত্মক গতিবেগের দিকে থেকে স্ব-বৈশিষ্ট্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। অনন্তের দিকে ক্রমাগত চলা, নির্দিষ্ট লক্ষ্যে উপস্থিতি এবং গতির মধ্যে আনন্দ সঞ্চার-রবীন্দ্রনাথের কাব্য-দর্শন। আর বিদ্রোহের সুরকে কাব্যের বাহন করে প্রচণ্ড গতিবেগ সৃষ্টি নজরুলের কৃতিত্ব বলা যেতে পারে। নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে তীব্র দৃষ্টি থাকলেও রবীন্দ্রনাথ এই পরিণতিকে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর স্থাপন করতে চেষ্টা করেন নি। কিন্তু নজরুল সংহারের সঙ্গে সৃষ্টিকে একই সূত্রে গ্রথিত করে উদ্দেশ্য সম্বন্ধে একটি সুনির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্ট ধারণা জন্মিয়ে দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের ‘বলাকা’ কাব্যগ্রন্থে তাঁর মূল দার্শনিক তত্ত্ব গতিবাদকে কেন্দ্র করে অন্যান্য বিষয়বস্তু বিবর্তিত হয়েছে; কিন্তু নজরুলের কবিতাগুলোর প্রাণকেন্দ্র বিদ্রোহ, এবং বিদ্রোহের একান্ত অঙ্গরূপেই এই গতির স্থান।১

‘বিদ্রোহী’ কবিতার গতিবাদ
গান কবিতায় গতিবাদ নতুন কোনো বিষয়বস্তু নয়। সবকালে সব সাহিত্যে গতির বিষয়টি ছিল এবং আছে। বাংলা সাহিত্যে গতিবাদের বিষয়টি অতি পুরাতন। কিছু কিছু  চর্যাপদেও গতির প্রচ্ছন্ন প্রকাশ দেখা যায়। “উঁচা উঁচা পাবত তঁহি বসই সবরী বালী// মোরঙ্গ পীচ্ছ পরহিন সবরী গীবত গুঞ্জরী মালী।” এই পদটিতে শবরী বালিকার চারপাশে আকাশ-বাতাস, পাহাড়-পর্বত, সবুজ-শ্যামল বৃক্ষ-তরুলতার সৌন্দর্য-শোভা, সোনালী রোদের প্রতিফলন, পাহাড়ি প্রকৃতির অনন্যাসাধারণ রূপ চিত্রের মতো মূর্তিমান। এই যে পাহাড় পর্বতে আরোহণ -অবরোহণ এসব গতির প্রতীকী প্রকাশ। এরপর বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগেও কিছু লেখাতে এর চেয়েও সুস্পষ্ট গতিবাদের প্রমাণ পাই।

বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির আশ্রয় গ্রহণ করার ফলে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল গতিবাদকে দুটো স্বতন্ত্র রূপ দিয়েছেন।---।---কাল-বৈশাখির যে ঝড় প্রলয়ের মৃত্যু উল্লাসে মেতে চলার তীব্র বেগে সমস্ত কিছুকে উড়িয়ে নিয়ে যায়, যেন বিদ্রোহী ঝঞ্ঝা রয়েছে নজরুলের কাব্য সাহিত্যের মর্মমূলে। মহাকাল চন্ড মূর্তিতে বজ্রাগ্নির দীপ্ত শিখা জ্বেলে যে বিভীষিকার আয়োজন করেন, তার মধ্যে গতি-মুখরতার আভাস মিলে। চলার পথে যে আবর্জনা জমেছে তাকে উল্কা বেগে বিধ্বস্ত করার অসাধারণ শক্তি সঞ্চারিত করা হয়েছে এই মহাকালের মধ্যে। তাঁর ভয়াল নয়নে ‘দ্বাদশ রবির বহ্নি জ্বালা’; ত্রস্ত পিঙ্গল জটা দিগন্তের  ক্রন্দনে মর্মরিত; কপোল-তলে সপ্ত মহাসিন্ধু এবং ‘সর্বনাশী জ্বালামুখী ধূমকেতু’ তাঁর চামরবাহী।২

আধুনিক কাব্যকলায় গতিবাদ বেশ তৎপরতা নিয়েই প্রকাশিত। বাংলা কাব্যে রবীন্দ্রনাথ ও কাজী নজরুলের কবিতায় গতিবাদের বিভিন্ন রূপ দেখা যায়। দুইজন কবিই গতিবাদ নিয়ে আপন আপন দৃষ্টি ভঙ্গির প্রকাশ ঘটিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের ‘বলাকা’ কাব্যগ্রন্থকে গতিবাদের ধারক বলা হয়। পক্ষান্তরে কাজী নজরুলের অধিকাংশ কাব্যগ্রন্থই গতিবাদের স্পষ্ট ধারক ও বাহক। কাব্যকলা নিয়ে আমাদের অল্প-বিস্তর ধারণা নিশ্চয় আছে। এমনকি গতিবাদ নিয়েও আমাদের ধারণা দরিদ্র নয়। তবে এই দুই-বিষয়ের মেলবন্ধন করা একান্ত জরুরি।
 
গতিবাদ:
বিখ্যাত পদার্থবিদ স্যার আইজাক নিউটনের ৩টি সূত্র বলবিদ্যার ভিত্তি। বল প্রয়োগের সাথে গতি জড়িত। অতএব বলবিদ্যার এই সূত্রগুলিকে সেই অর্থে গতিবিদ্যার সূত্রও বলে। নিউটন ১৬৮৭ সালে তার বিখ্যাত গ্রন্থ “ফিলোসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা”য় এই ৩টি সূত্র প্রকাশ করেন। গ্রন্থের নামকরণও বেশ কিছু বিষয়ের ইঙ্গিত বহন করে। পদার্থ বিদ্যার সূত্র প্রকাশের জন্য গ্রন্থটির ম্যাথেমেটিকাল প্রিন্সিপাল ও ন্যাচারাল ফিলোসফির সমন্বয়ে নামকরণ হলো- ফিলোসোফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথেমেটিকা। এখানে ২টি বিষয়ের সন্নিবেশ দেখা যায়- ম্যাথেমেটিকাল প্রিন্সিপাল ও ন্যাচারাল ফিলোসোফি। অর্থাৎ, গণিত-পদার্থের সাথে দর্শনের একটি অবগুণ্ঠিত সম্পর্ক। অত্যন্ত নিবিড় ও অপরিহার্য যোগসূত্র। এই গ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের অধ্যায় AXIOMS, OR LAWS OF MOTION-এ স্যার আইজ্যাক নিউটন বস্তুর ভর, গতি ও বলের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে প্রণীত তিনটি সূত্র প্রকাশ করেন। সূত্র ৩টি এইরূপ-
LAW I. every body perseveres in its state of rest, or of uniform motion in a right line, unless it is compelled to change that state by forces impressed thereon. 
LAW II. The alteration of motion is ever proportional to the motive force impressed; and is made in the direction of the right line in. which that force is impressed. 
LAW III. To every action there is always opposed an equal reaction: or the mutual actions of two bodies upon each other are always equal, and directed to contrary parts.৩

এই সূত্রগুলির বাংলা তর্জমা এমন হতে পারে: 
প্রথম সূত্র: কোনো বস্তুর উপর বাহ্যিক বল প্রয়োগ না করলে, স্থির বস্তু চিরকাল স্থির থাকবে এবং গতিশীল বস্তু চিরকাল সমবেগে চলমান থাকবে। 
দ্বিতীয় সূত্র: কোনো বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার, তার উপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক। বল যেদিকে ক্রিয়া করে, বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনও সেদিকে ঘটে। 
তৃতীয় সূত্র: প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। দুটি বস্তুর একে অপরের উপর পারস্পরিক ক্রিয়া সর্বদা সমান এবং একে অপরের উপর সমভাবে প্রযুক্ত। 

‘বিদ্রোহী’ ও গতিবাদের সম্পর্ক:

‘বিদ্রোহী’ কবিতা ও গতিবাদের সম্পর্ক সুনিবিড়। এই কবিতায় শুধু দূরত্বের ভিত্তিতে নয়; বরং অন্তর্গতভাবে প্রত্যেকটি চরণে গতির বিষয়টি স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর। নিউটনের প্রথম সূত্রে বলা হয়েছে- “কোনো বস্তুর উপর বাহ্যিক বল প্রয়োগ না করলে, স্থির বস্তু চিরকাল স্থির থাকবে এবং গতিশীল বস্তু চিরকাল সমবেগে চলমান থাকবে।” বাংলায় অনুবাদের ক্ষেত্রে ইংরেজি শব্দ every body এর অর্থ বস্তু হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু নিউটন তাঁর গ্রন্থের নামও রেখেছেন ফিলোসোফিয়া এর অর্থ হলো এখানে একটি অব্যক্ত দর্শন রয়েছে। every body এর অর্থ যদি ‘ব্যক্তি’ ধরা হয় তাহলে এমন করে লেখা যায়- কোন নিশ্চল ব্যক্তিকে যদি অধিকার সচেতন করে তোলা না যায়, অথবা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী করার জন্য শব্দ-বাক্য দিয়ে আঘাত না করা হয় তাহলে তিনি নিশ্চল থাকবেন। আন্দোলন একবার শুরু হলে যদি আপস রফা বা সমাধান না হয় তাহলে তা চলমান থাকবে। দাবি আদায়ের পর দাবি আদায়ের বল তথা শব্দতীর বন্ধ হবে এবং সেই মানুষ আবারও স্থির অবস্থায় চলে যাবে।

এমন অনুবাদ করলে মানব সমাজের জটিল বিষয়কে উপস্থাপন করা ও সমস্যার সমাধানের রাস্তা হিসেবে এই সূত্রকে ব্যবহার করা যেতে পারে। এমনি ধারণা ‘বিদ্রোহী’ কবিতার পরতে পরতে লক্ষ্য করা যায়। কাজী নজরুল ইসলাম মানব জাতির উপর শব্দবলের সঠিক প্রয়োগে সফল।

এই ভাব ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটিরও একেবারে অজ্ঞাত নয়: এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী,/ আর হাতে রণ-তূর্য ! 

অবশ্য এই কবিতাটিতে ফল পরিণতি অপেক্ষা বিদ্রোহাত্মক তীব্র গতিবেগই বিশিষ্ট স্থান অধিকার করেছে। নজরুলের কবিতায় গতিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি এবং রবীন্দ্রনাথের মত গতির একটি মূর্তি কল্পনা করা হয় নি। কিন্তু শব্দ-ঝঙ্কার ভাব-সম্পদে এবং গতি-মুখরতায় একটি সম্পূর্ণাবয়ব রস-ঘন চিত্রে প্রতিটি রেখার টানে রূপায়িত হয়ে উঠেছে। নিম্নের কবিতাটিতে গতিবেগ যেন ক্রম-বিন্যস্ত স্তরে অগ্রসর হয়েছে :
     মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি’/ চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি’
     ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া,/ খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া
     উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব-বিধাতৃর !
এখানে প্রত্যেক পরবর্তী পংক্তিতে ভার ও গতিবেগ যেন পূর্ববর্তী স্থান অপেক্ষা ক্রমোর্ধ্ব স্তরে আরোহণ করেছে; এ যেন ক্রমোচ্চ পর্বতে উঠবার ঘাঁটি (station) গুলো অতিক্রম করে শিখরের দিকে জয়যাত্রা। সর্বত্র চলার সুর বর্ণিত হাওয়া ছাড়াও কখনো কখনো ভাষার অপরিমেয় শক্তি ছন্দে দোলার সৃষ্টি করে গতির রূপ ফুটিয়ে তুলেছে।
“আমি চল-চঞ্চল , ঠমকি’ ছমকি’/ পথে যেতে চকিতে চমকি’
ফিং দিয়া দিই তিন দোল!/ আমি চপলা-চপল হিন্দোল।”৪

গতিবাদ ব্যাখ্যায় সমগ্র কবিতার মর্মার্থ, বাক্যগত এবং কখনও কখনও শব্দগত বিষয়টি প্রণিধানযোগ্য। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় এই ৩ প্রকারের বিষয়ই বর্ণিত। কবিতাটিতে ব্যবহৃত শব্দমালা গতির পরম উদাহরণ। তাছাড়াও বাক্যে প্রযুক্ত হয়ে এই সমস্ত শব্দ অধিকতর ব্যঞ্জনাময় হয়েছে। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় ব্যবহৃত পৌরাণিক শব্দগুলি সবিশেষ গতিবাদকে প্রতিনিধিত্ব করে। যেমন: চন্দ্র- জন্মের পর পরই ত্রি-চক্র রথে চড়ে পৃথিবী পরিক্রমণ করে ও আলো/জোস্না বিলাতে থাকে। চন্দ্রগ্রাস হলেও রাহুমুক্ত হতে পারে। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় মানব-বীর চন্দ্রের চেয়েও অধিক শক্তিশালী হিসেবে চিত্রিত। অর্থাৎ মানুষ বিপদগ্রস্ত (মানুষ বিপদগ্রস্ত হওয়া অর্থ বাইরে থেকে বিপদের বল নিশ্চল মানুষকে জাগিয়ে তোলে) হলেও সেই ভয়ংকর বিপদ থেকে দুর্দমনীয়ভাবে ফিরে আসে। বীরকে গ্রাস করা যায় না। গ্রাস করলেও হজম করা যায় না। 
সূর্য বলতে আমাদের চোখে ভাসে প্রতিদিনের আলোদানকারী সৌরজগতের কেন্দ্রীয় গ্রহের কথা। সূর্য কেন্দ্রের তাপমাত্রা প্রায় দেড় কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস। সূর্য পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ৫ হাজার ৬ শত ডিগ্রি সেলসিয়াস। সূর্য কেন্দ্রে হিলিয়াম থেকে হাইড্রোজেন এবং হাইড্রোজেন থেকে তাপের সাগর সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সূর্যকে অতিক্রম করে উপরে উঠার বিষয়টি শুধু দুঃসাহসিকই নয়; সাথে সাথে এটি দুরতিক্রম্য স্থানকে অতিক্রম করে যাওয়ার বিষয়টি প্রতিফলিত করে। “সূর্য সময়ের সৃষ্টিকর্তা। ইনি ৩৬০ বার (৩৬০ দিন ও ৩৬০ রাত্রি) আবর্তিত হয়।”৫  
সূর্যের যত প্রকার বৈশিষ্ট্যের কথা বলাই হোক না কেন সূর্য সময় জ্ঞাপক এবং আলোর গতির বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এখানে। সূর্য ছাড়াও গোলক, দ্যুলোক, ভূলোক, খোদার আসন ও আরশ, মহাপ্রলয়, সাইক্লোন, টর্পেডো-এর অবতারণাও কবিতাটির নির্দিষ্ট চরণে গতির সঞ্চার করে। যেমন- গোলক বিষ্ণু ও কৃষ্ণের আসন। গোলকের আয়তন ৫০ কোটি যোজন। এক যোজন প্রায় ১০ কিমি/ চার ক্রোশ। গোলক কল্পনাশ্রিত বায়ুর উপর অবস্থিত। ভীম মহাবলবান। ধর্মপরায়ণ। বাহুযুদ্ধ, গতিবেগ ও ব্যায়ামে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। কুন্তী ও বায়ুর মিলনে ভীমের জন্ম। পুরাণে ভীমকে নিয়ে এমনি কাহিনি প্রচলিত আছে। তবে কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় ‘আমি ভীম ভাসমান মাইন’ ব্যবহারের মাধ্যমে কবি বীরকে অমর, অক্ষয় ও চিরশক্তির আধার প্রবল গতিসম্পন্ন এক অতিপ্রাকৃত দানবের ছবি এঁকেছেন। এই বিষয়গুলি কত সুন্দর করে ধীরে ধীরে গতিশক্তির চরমে আরোহণ ‘বিদ্রোহী’ কবিতায়। তা নিম্নের কয়েকটি চরণ দেখে নেওয়া যাক- 
মহা-    প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস!
আমি   মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর,
আমি   দুর্বার,
আমি   ভেঙে করি সব চুরমার!
আমি   অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,
আমি   দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল!
আমি   মানি না কো কোন আইন,
আমি   ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন!
আমি   ধূর্জটি, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর
আমি   বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সুত বিশ্ব-বিধাতৃর!

এখানে ‘দুর্বার’ শব্দটি মূলত দুর্বার গতিসম্পন্ন বিষয়কে নির্দেশ করে। “আমি দুর্বার” দিয়ে গতির সঞ্চার করে শেষ হলো “আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর” মতো উচ্চগতির এক প্রলয়ংকারী ঝড়বেগের মধ্য দিয়ে। এখানে আরোহণ চরণের থেকেই প্রবল ধাক্কা লক্ষ্য করা গেলো, যা শেষ হলো বিপুল ও ব্যাপক শক্তিসম্পন্ন বৈশাখি ঝড়ের গতির শীর্ষ আরোহণে। তারপর সুচিন্তিতভাবে অবরোহণ হলো- “আমি   বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সুত বিশ্ব-বিধাতৃর!” পঙক্তির মধ্য দিয়ে। এটাই ‘বিদ্রোহী কবিতার বিশেষ গতিতত্বের অনন্য বৈশিষ্ট্য। 
ব্যোমকেশ শিবের চুল। ব্যোম-আকাশ। আর কেশ-চুল। একবার শিবঠাকুর স্বর্গ থেকে গঙ্গায় লাফিয়ে পড়েন, তখন তার চুল সমস্ত আকাশ ছেয়ে ফেলে। অর্থাৎ, অসীম সাহসিকতা ও মানুষের দুর্বার গতির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এমন ধারণার অবতারণা। তাছাড়া গঙ্গার তীব্র জলধারার সাথে ব্যোমকেশের তুলনায় সহজেই প্রমাণিত যে, প্রকৃত বীর তীব্র খরস্রোতা স্রোতস্বীনীতেও লাফিয়ে পড়তে পারেন। সাধারণত উচ্চ থেকে লাফিয়ে নিচে পড়া একটি চূড়ান্ত দুঃসাহসিক কাজ। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় এমনই বীরের ছবি উদ্ভাসিত যে, বীর আলোর গতির চেয়েও তীব্র গতিতে ধাবমান। অন্যায় প্রতিরোধক বীর এমনই দুরন্তগতির চিরন্ত’ প্রতীক। 
এছাড়াও গঙ্গোত্রী, দ্বাদশ-রবি, প্রভঞ্জন, রুদ্র ঝড়- এই সমস্ত পৌরাণিক শব্দ প্রয়োগ প্রকৃতই কবিতাটিকে করেছে গতিশক্তির আকর।
“আমি    প্রভঞ্জনের উচ্ছ্বাস, আমি বারিধির মহা কল্লোল,
আমি     উজ্জ্বল, আমি প্রোজ্জ্বল,
আমি        উচ্ছল জল-ছল-ছল, চল-ঊর্মির হিন্দোল-দোল!”
এখানে “প্রভঞ্জনের উচ্ছ্বাস” থেকে গতি সঞ্চারিত হয়ে “ঊর্মির হিন্দোল-দোল!” এ শেষ হয়েছে। অর্থাৎ সমুদ্রের মহাগর্জন মহাতেজ ও ঊর্মিমালার অসীম গতির বিষয়টি প্রকাশিত। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় এভাবে গতির প্রারম্ভিক ও সমাপ্তি বিন্দুর মধ্যে অতিসঞ্চরণশীল দুর্বার গতির প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়। 
“আমি    উত্তর-বায়ু মলয়-অনিল উদাস পূরবী হাওয়া,
আমি    পথিক-কবির গভীর রাগিণী, বেণু-বীণে গান গাওয়া।
আমি    আকুল নিদাঘ-তিয়াসা, আমি রৌদ্র-রুদ্র রবি
আমি    মরু-নির্ঝর ঝরঝর, আমি শ্যামলিমা ছায়া-ছবি!
আমি    তুরীয়ানন্দে ছুটে চলি, এ কি উন্মাদ আমি উন্মাদ!
আমি    সহসা আমারে চিনেছি, আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!”
এখানেও “আমি উত্তর-বায়ু মলয়-অনিল উদাস পূরবী হাওয়া” থেকে শুরু করে শেষ হলো-“আমি তুরীয়ানন্দে ছুটে চলি, এ কি উন্মাদ আমি উন্মাদ!// আমি     সহসা আমারে চিনেছি, আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!”
অর্থাৎ, দুরন্ত-দুর্বার গতির কাছে সব পরাজিত। বীরের বন্ধন সব খুলে গেলো। আত্মজড়তা ও অর্ধচেতনার অভিশাপমুক্ত হলেন বীর। সংগ্রাম আন্দোলনে দুরন্ত গতি এলে আপনা আপনিই সব বন্ধন ছিন্ন হয়। মানুষ মুক্ত হয়। মুক্ত মানুষই মুক্ত স্বাধীন দেশ গড়ে তোলেন।

অপরদিকে, বোররাক, উচ্চৈঃশ্রবা প্রবল গতিসম্পন্ন। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় ব্যবহৃত জিব্রাইল (আ:) স্বর্গদূত বা ফেরেশতা। ফেরেশতা জিব্রাইলের (আ.) ৬৫০ পাখা আছে বলে বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়। সপ্ত আসমানের উপর থেকে পৃথিবীতে আসতে তার ডানা ২ বার সঞ্চালন করলেই চলে। অথচ প্রথম আসমানের দূরত্বই বিলিয়ন বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। তাই জিব্রাইল (আঃ) এর গতি আলোর গতির চেয়ে হাজার গুন বেশি। দুরন্ত গতির এই সব উপমায় তিনি জালিমমুক্ত পৃথিবী সৃষ্টির স্বপ্ন দেখেছেন। 
নিউটনের ৩য় সূত্র ও ‘বিদ্রোহী’: নিউটনের ৩য় সূত্রটি ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সম্পর্কিত। ভীম, পরশুরাম, ভৃগু চরিত্রগুলির সাথে এই সূত্রের মিল পাওয়া যায়। এরা প্রত্যেকেই অন্যায়ের প্রতিবাদী। অনিয়ম ও অবিচারের প্রতিশোধ গ্রহণকারী। অর্থাৎ, এদের উপর অন্যায় করাকে ক্রিয়া এবং অন্যায়কারীদের উপর প্রতিশোধ গ্রহণ করাকে প্রতিক্রিয়া বলা যায়। পরশুরামের কঠোর কুঠার, হল বলরাম স্কন্ধে এবং ভগবান বুকে ভৃগুর পদাঘাত এসব-ই ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া মাত্র। এছাড়াও, কোন না কোন অন্যায়ের শিকার হলেই মানুষ নিপীড়িত-উৎপীড়িত ও নির্যাতিত-শোষিত হয়, যাকে অত্যাচারীর বা ফ্যাসিস্টের অপরাধ-ক্রিয়া বলা যায়, যার প্রেক্ষিতে সৃষ্টি হয় ব্যাপক জনরোষ এবং গগণবিদারী প্রতিক্রিয়া। এই কারণেই কবি বলেছেন, 
যবে    উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না –
         অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না –
         বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি   সেই দিন হব শান্ত।

উপরে বর্ণিত চরণগুলি থেকে এই ধারণা পাওয়া যায় যে, ক্রিয়া যতক্ষণ বলবৎ, প্রতিক্রিয়া ততক্ষণ চলমান। অর্থাৎ, ‘প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে’- নিউটনের গতিবাদের এই ৩য় সূত্র ও ‘বিদ্রোহী’ কবিতার সম্পর্ক সাহিত্য-বিজ্ঞানের এক অনবদ্য দার্শনিক প্রকাশ।

‘বিদ্রোহী’ কবিতায় গতিবাদ হলো কবির বিদ্রোহী মনোভাবের শক্তিশালী রূপ। এখানে গতি এসেছে ধ্বংস ও সৃষ্টির দ্বন্দ্বে। প্রচণ্ড শক্তি, প্রতিবাদ এবং চলমান রূপান্তরক হিসেবে। এটি শোষণের বিরুদ্ধে ক্রিয়াশীল বিদ্রোহ। কবি বিদ্রোহী কবিতায় প্রতিটি পঙ্‌ক্তি যেন চলমান আগ্নেয়গিরি। এখানে গতিবাদ মানে কেবল গতি নয়, বরং শক্তির বিস্ফোরণ, প্রতিবাদের ধ্বনি, সমাজ পরিবর্তনের জন্য অদম্য এক শক্তি। এটি ভাষা, ভাব, ছন্দ ও চেতনার প্রতিটি স্তরে উপস্থিত। কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর সাহসী ও পরিবর্তনমুখী কবিতার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে শুধু নতুন ভাষা যোগ করেননি, একটি চলমান সাহসী চিন্তাধারার পথও তৈরি করে দিয়েছেন। সেই পথে আজও আমাদের সাহিত্য ও সমাজ এগিয়ে চলছে।

তথ্য উৎস:
১। কাজী নজরুল ইনস্টিটিউট, কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার শতবর্ষ স্মারক, “নজরুল কাব্যে গতিবাদ”, শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী, প্রথম মুদ্রণ, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮/ ২৫ মে ২০২১। পৃ. ১৩৪। 
২। কাজী নজরুল ইনস্টিটিউট, কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার শতবর্ষ স্মারক, “নজরুল কাব্যে গতিবাদ”, শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী, প্রথম মুদ্রণ, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮/ ২৫ মে ২০২১। পৃ. ১৩৩।
৩। Newton’s principia. The mathematical principles of natural philosophy, by sir isaac newton; translated into english by Andrew Motte. First american edition, carefully revised and corrected, with a life of the author, by PI. W. Chittenden, m. A., &e. New-york published by daniel adee, 45 liberty street. Pp. 83
৪। কাজী নজরুল ইনস্টিটিউট, কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার শতবর্ষ স্মারক, “নজরুল কাব্যে গতিবাদ”, শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী, প্রথম মুদ্রণ, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮/ ২৫ মে ২০২১। পৃ. ১৩৪। 
৫। সুধীরচন্দ্র সরকার, পৌরাণিক অভিধান, এম সি সরকার অ্যান্ড সন্স প্রাইভেট লিমিটেড, দশম সংস্করণ, বৈশাখ, ১৪১৬; পৃ. ৫৬৭-৫৬৮।

লেখক: নজরুল গবেষক ও কলামিস্ট।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর