স্পোর্টস ডেস্ক
২৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:২৮ পিএম
এশিয়া কাপ ২০২৫-এর ফাইনালে ভারতের শিরোপা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা তিলক ভার্মা এবার জানালেন জীবনের এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা। তিন বছর আগে, ২০২২ সালে, বিরল এক রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন এই তরুণ ব্যাটার। র্যাবডোমায়োলাইসিস (Rhabdomyolysis), যা মূলত পেশি ভেঙে যাওয়ার কারণে হয় এবং সময়মতো চিকিৎসা না পেলে তা প্রাণঘাতীও হতে পারে।
২২ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার জানালেন, মুম্বাই ইন্ডিয়ানস ও আকাশ আম্বানির কারণে সময়মতো চিকিৎসা পেয়েছিলেন তিনি। গত তিন আইপিএল মৌসুমে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তিলক, সম্প্রতি ‘ব্রেকফাস্ট উইথ চ্যাম্পিয়নস’-এর এক পর্বে গৌরব কাপুরের সঙ্গে কথোপকথনে এই ঘটনা খুলে বলেন।
তিলক বলেন, “আমি এই বিষয়টা আগে কখনও কাউকে বলিনি। প্রথম আইপিএল শেষে কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিয়েছিল। আমি খুব ফিট থাকতে চেয়েছিলাম। পরে জানতে পারি, আমি র্যাবডোমায়োলাইসিসে আক্রান্ত হয়েছি, যেখানে শরীরের পেশি ভেঙে যায়। তখন আমি টেস্ট দলে জায়গা পাওয়ার জন্য পরিশ্রম করছিলাম, ঘরোয়া ক্রিকেট, এ সিরিজ, ক্যাম্প- সব একসঙ্গে চলছিল।”
২০২২ সালের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তিলক জানান, বাংলাদেশে ‘এ’ সিরিজ খেলার সময়ই হঠাৎ করে সবকিছু বদলে যায়। শতরানের পথে এগোচ্ছিলেন, কিন্তু আচমকা চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করে, আঙুল কাজ করা বন্ধ করে দেয়। তিলকের ভাষায়, “বাংলাদেশে ‘এ’ সিরিজ খেলছিলাম। শতরান করতে মরিয়া ছিলাম। হঠাৎ চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল, আঙুল নড়ছিল না। সবকিছু শক্ত হয়ে গেল, যেন পাথর হয়ে গেছে শরীর। আমাকে রিটায়ার হার্ট হতে হয়, আঙুল খুলতে গ্লাভস কেটে ফেলতে হয়েছিল।”
আকাশ আম্বানি ও জয় শাহের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘মুম্বাই ইন্ডিয়ানস ও জয় শাহকে ধন্যবাদ। আমাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকেরা বলেছিলেন আর কয়েক ঘণ্টা দেরি করলেই পরিস্থিতি আরও খারাপ হতো। ইনজেকশন দেওয়ার সময় সুচ ভেঙে গিয়েছিল। খুব বাজে অবস্থা হয়েছিল সে সময়। মা ছিলেন আমার সঙ্গে।’
কী এই র্যাবডোমায়োলাইসিস?
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী, র্যাবডোমায়োলাইসিস হলো এক ধরনের বিপজ্জনক পেশি–সংক্রান্ত রোগ, যা অতিরিক্ত পরিশ্রম, আঘাত, পানিশূন্যতা বা কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে হতে পারে। এর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে পেশি দুর্বলতা, ব্যথা, শক্ত হয়ে যাওয়া এবং প্রস্রাবের রঙ পরিবর্তন। এই অবস্থায় শরীরের ভাঙা পেশি থেকে নির্গত বিষাক্ত উপাদান রক্তে মিশে কিডনিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। চিকিৎসা না পেলে কিডনি অকেজো হয়ে মৃত্যুঝুঁকিও তৈরি হয়।
তিলক স্বীকার করেছেন, শরীরকে যথেষ্ট বিশ্রাম না দেওয়াই তাঁর বিপদের কারণ হয়েছিল। “বিশ্রামের দিনেও আমি জিমে যেতাম। আমি চেয়েছিলাম বিশ্বের সবচেয়ে ফিট খেলোয়াড় হতে, সেরা ফিল্ডার হতে। কিন্তু পুনরুদ্ধারের দিকে মনোযোগ দিইনি। বরফে গোসল করতাম ঠিকই, কিন্তু শরীরকে সময় দিইনি। ফলে পেশিগুলো অতিরিক্ত চাপ সহ্য করতে পারেনি, ভেঙে পড়েছিল। নার্ভগুলোও শক্ত হয়ে গিয়েছিল,” বলেন তিলক।