ধর্ম ডেস্ক
৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:০৬ পিএম
আল্লাহভীতি বা তাকওয়া শুধু পরকালের মুক্তির চাবিকাঠি নয়, দুনিয়াতেও সম্মান, শান্তি ও মর্যাদা অর্জনের উপায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে বেশি সম্মানী, যে আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় করে।’ (সুরা হুজরাত: ১৩)
অর্থাৎ, প্রকৃত মর্যাদা নির্ভর করে না সম্পদ, বংশ বা সামাজিক অবস্থানের ওপর; বরং নির্ভর করে তাকওয়া বা আল্লাহভীতির ওপর। যে আল্লাহকে ভয় করে, সে-ই আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠ ও প্রিয় বান্দা।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন...তিনি তার পাপসমূহ মোচন করে দেন এবং তাকে দেবেন মহাপুরস্কার।’ (সুরা তালাক: ৪-৫)
কাঁটাযুক্ত পথে কাঁটা থেকে বাঁচার জন্য মানুষ যেভাবে সতর্ক হয়ে চলে, ঠিক সেভাবে আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর নিষিদ্ধ বিধানগুলো থেকে বেঁচে থাকা এবং আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার পাওয়ার আশায় নেক আমল করার নামই হলো তাকওয়া। অর্থাৎ রবের ভয়ে পাপ থেকে বিরত থাকা, রবের রহমতের আশায় সওয়াবের কাজ না ছাড়া। (তাফসিরে ইবনে কাসির: ১/৪০)
আরও পড়ুন: যে পাপ করলে তাকওয়া হারিয়ে যাবে
আল্লাহ তাআলা কোরআনে বহুবার তাকওয়া অবলম্বনের আদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যেভাবে তাঁকে ভয় করা উচিত।’ (সুরা আলে ইমরান: ১০২)। আবার বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।’ (সুরা তাওবা: ১১৯)
তাকওয়া শুধু একটি গুণ নয়, বরং আল্লাহর নির্দেশ; তাই এটি অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জরুরি।
আল্লাহর পছন্দনীয় বান্দা হতে হলে তাকওয়া অপরিহার্য। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে মুত্তাকি বান্দারা আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় এবং ভালোবাসার পাত্র।’ (সুরা হুজরাত: ১৩)
তাকওয়াই মানুষের প্রকৃত ইজ্জত ও মর্যাদার উৎস। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই সবচেয়ে সম্মানী যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মুত্তাকি।’ (সুরা হুজরাত: ১৩)
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে জ্ঞানীগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফল হও।’ (সুরা মায়েদা: ১০০)
তাকওয়া অর্জনকারীদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে সুখবর ঘোষণা করা হয়েছে- ‘যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অর্জন করেছে, তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ দুনিয়া ও আখেরাতে।’ (সুরা ইউনুস: ৬৩-৬৪)
আরও পড়ুন: মুত্তাকিদের যেসব পুরস্কার দুনিয়ায় দেওয়া হয়
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় মুত্তাকিরা থাকবে জান্নাতে ও নেয়ামতে, তারা উপভোগ করবে যা তাদের পালনকর্তা দেবেন এবং তিনি জাহান্নামের আজাব থেকে তাদেরকে রক্ষা করবেন।’ (সুরা তুর: ১৭-১৮)
অর্থাৎ তাকওয়া অর্জনকারীরাই জান্নাতের উপযুক্ত, কারণ তারা গুনাহ থেকে দূরে থাকে ও নেক আমলে অগ্রগামী হয়।
১. কোরআন শিক্ষা করা। (সুরা জুমার: ২৭-২৮)
২. আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করা। (সুরা ইউনুস: ৬)
৩. ইখলাসের সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত করা। (সুরা বাকারা: ২১)
৪. রোজা তাকওয়া সৃষ্টি করে। (সুরা বাকারা: ১৮৩)
৫. পরকালের ভয়াবহতা বিষয়ে আয়াত ও হাদিস পাঠ করা। (সুরা জুমার: ১৬)
৬. সুবিচার বা ইনসাফ। (সুরা মায়েদা: ৮)
৭. নবীপ্রেম। (সুরা হুজরাত: ৩)
আল্লাহভীতিই সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার। এটি এমন এক নূর, যা বান্দাকে দুনিয়া ও আখেরাতের শাস্তি থেকে রক্ষা করে। যে বান্দা আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার হৃদয়ে শান্তি, জীবনে বরকত এবং পরিণামে জান্নাত দান করেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে প্রকৃত আল্লাহভীতি ও তাকওয়া অর্জনের তাওফিক দিন। আমিন।