images

রাজনীতি / সারাদেশ

বিএনপির দুই হেভিওয়েট, একক প্রার্থী নিয়ে নির্ভার জামায়াত

জেলা প্রতিনিধি

২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:১৫ পিএম

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে আগামী নির্বাচন ঘিরে সরগরম ভোটের মাঠ। নানা কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী ও প্রার্থীরা। ভোটারদের মন জয় করতে বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন বিএনপির হেভিওয়েট ও কেন্দ্রীয় নেতারা। দলের টিকিট পাওয়ার জন্য তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছেন স্থানীয় নেতারাও। গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিন নির্বাচনি রোডম্যাপও ঘোষণা হয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন পর ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে মানুষ।

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে শিবগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নজিরবিহীন তৎপরতা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন বাস্তবতায় এ আসনের রাজনীতি মূলত বিএনপি ও জামায়াতকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে। বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা আগামী সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক দলীয় ও সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করেছেন।

আরও পড়ুন

বিএনপির দুর্গে বিভাজন, জামায়াত একক প্রার্থী নিয়ে প্রস্তুত

জামায়াতে ইসলামী তাদের প্রার্থিতা নিশ্চিত করে ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন। বিএনপি নেতারা প্রার্থিতা নিশ্চিতের গ্রিন সিগন্যাল পেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম নৌকা বিহীন নির্বাচনে ধানের শীষ ও দাঁড়িপাল্লার লড়াইয়ের অপেক্ষা। এর বাইরে অন্য কোনো দলের নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা একেবারেই নেই।

স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, ঐতিহাসিকভাবে আসনটি বিএনপিপ্রবণ। বরাবরই বিএনপির প্রার্থী জিতে সংসদে গেছেন। এ কারণে শিবগঞ্জকে ‘বিএনপির দুর্গ’ বলা হয়ে থাকে। এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক অবস্থান শক্ত হলেও তাদের প্রার্থী অতীতের কোনো নির্বাচনে জিতে জাতীয় সংসদের যাওয়ার নজির নেই। তবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী একাধিকবার বিজয়ী হয়েছে। সুসংগঠিত দল জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থীও মাঠে সরব।

thumbnail_ড.কেরামত_আলী_(জামায়াত)_02
রাজশাহী মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. কেরামত আলী।

দলটি অনেক আগেই রাজশাহী মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. কেরামত আলীকে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তিনি সরবে গণসংযোগ ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করছেন। ফলে ভোটের মাঠের শেষ হিসাব এখনই মেলানো কঠিন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এ আসন থেকে বিএনপির চারজন প্রার্থীর কথা শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া, বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতা সাদিকুল ইসলাম ও বিএনপি নেতা বেলাল-ই-বাকি ইদ্রিসী।

thumbnail_সাবেক_এমপি_অধ্যাপক_শাহজাহান_মিয়া_Bnp
পাঁচবারের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া

বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ আসনটিতে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, পাঁচবারের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া দীর্ঘদিন একক প্রার্থী। তবে এবার এই আসনে মনোনয়নের জন্য গণসংযোগ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ শাহীন শওকত। দলের দুই প্রভাবশালী নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী হওয়ায় তৃণমূল কর্মীরা পড়েছেন বিভ্রান্তিতে।

এদিকে, এবার কেন্দ্রীয় নেতা শাহীন শওকতের অনুসারীরাও ছাড় দিতে নারাজ। দুঃসময়ে দলের গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্বে থাকায় তৃণমূলের বড় একটি অংশ শাহীন শওকতের পক্ষে। রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক দ্বায়িত্ব পালনের কারণে নির্বাচনি প্রচারণায় সেভাবে না নামলেও, কৌশলগত অবস্থানের কারণে অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছেন। বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনে তার অনুসারীরা রয়েছেন। এ ছাড়াও আন্দোলন-সংগ্রামে তার সক্রিয় ভূমিকা এবং তুলনামূলক পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি তাকে মনোনয়ন দৌড়ে একটি সুবিধাজনক অবস্থানে রেখেছে।

thumbnail_সৈয়দ_শাহীন_শওকত_(BNP)
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ শাহীন শওকত।

বিএনপি সমর্থকরা বলছেন, এ আসনে বিএনপির সবচেয়ে জনপ্রিয় মুখ সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ কোনো নির্বাচনে তাকে নিরাশ করেনি ভোটাররা। বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ কয়েকমাস আগে থেকেই নির্বাচনমুখী তৎপরতা জোরদার করেছেন। শাহজাহান মিয়া সর্বস্তরের বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দলীয়, সাংগঠনিক ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন নিয়মিত। দলীয় নেতাকর্মীরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে শাহজাহানকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে তুলে ধরে গণসংযোগ শুরু করেছেন। যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে। আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে মানুষের দোয়া চাইছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক যুবদল নেতা শহিদুল হক হায়দারী বলেন, শাহজাহান মিয়া শুধু দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝেই নয়, শিবগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষের কাছে একটি জনপ্রিয় নাম। শিবগঞ্জের উন্নয়নের রূপকার তিনি। আগামী নির্বাচনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে জনপ্রিয় নেতা শাহজাহান মিয়াকে সামনে রেখে নেতাকর্মীরা মাঠে কাজ করছেন।

আরও পড়ুন

নওগাঁ-২: বিএনপিতে বিভক্তি, সুযোগ নিতে চায় জামায়াত

এদিকে, শাহীন শওকতের অনুসারীরা বলছেন, দলের দুঃসময়ে পুরো রাজশাহী বিভাগে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে সংগঠিত করতে কাজ করেছেন সৈয়দ শাহীন শওকত। ফ্যাসিস্ট হাসিনা বিরোধী আন্দোলন, দলের প্রতি অবদান ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বিবেচনায় শাহীন শওকতই মনোনয়ন পাওয়ার দাবি রাখে।

অন্যদিকে, গত এক বছর ধরে বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘুরে ঘুরে সমাজের অসহায় দরিদ্র, খেটে-খাওয়া দিনমজুর শ্রেণির মানুষের জন্য কাজ করতে দেখা গেছে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতা সাদিকুল ইসলামকে। সাদিকুল ইসলাম ব্যবসায়ী হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা অনেক বিএনপি নেতাকর্মী জনপ্রিয়তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হিসেবে দেখছেন। বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও তার সমর্থকদের উপস্থিতি অন্যদের সঙ্গে তার তুলনা করার সক্ষমতা জানান দিচ্ছে।

thumbnail_সাদিকুল_ইসলাম_(Bnp)
কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতা সাদিকুল ইসলাম।

প্রার্থিতার বিষয়ে শাহজাহান মিয়া বলেন, দীর্ঘ চার দশকের রাজনৈতিক জীবনে দলমতনির্বিশেষে সবার সঙ্গে ভালো যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। শিবগঞ্জ বিএনপির দুর্গ। মনোনয়ন পেলে এ আসনে অতীতের মতো আমি আবারও জয়ী হব বলে আশাবাদী।

বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত ঢাকা মেইলকে বলেন, দীর্ঘদিন ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য স্বৈরাচারী হাসিনার শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়েছি। যাতে মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারে। সেই সুযোগ এখন হাতের নাগালে। এলাকার মানুষের যে সাড়া তাতে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ধানের শীষ বিপুল ভোটে জয় পাবে।

তিনি আরও বলেন, মনোনয়ন কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত, আমরা আপাতত ধানের শীষের জন্য কাজ করছি। অন্যদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এ আসনের প্রার্থী ড. কেরামত আলীর দুবার শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনিও জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। দলের নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পাওয়ায় আশাবাদী জামায়াত নেতারাও।

আরও পড়ুন

মনোনয়ন লড়াইয়ে মাঠে নেমেছেন ভাই-বোন

কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতা সাদিকুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, রাজনীতি আমার পেশা নয়, নেশা। অন্যদের বিষয়ে বলতে পারব না, কিন্তু আমি রাজনীতি করে কোনো কিছু অর্জন করতে চাই না। জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখে শিবগঞ্জ উপজেলার উন্নয়নে কাজ করব, ইনশাআল্লাহ। গত ১৭ বছরে সবসময়ই যেভাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম, আগামীতেও থাকব।

বিএনপি নেতা বেলাল-ই-বাকি ইদ্রিসী ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি তৃণমূল জনগণের পাশে থেকে দীর্ঘদিন থেকে রাজনীতি করছি। আগামী নির্বাচনে দল আমাকে ইনশাআল্লাহ মনোনয়ন দেবেন। আমি নির্বাচিত হলে শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও শিবগঞ্জের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করব।

thumbnail_বেলাল-ই-বাকী_ইদ্রিসী_(BNP)
বিএনপি নেতা বেলাল-ই-বাকি ইদ্রিসী

তিনি আরও বলেন, তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেলে সে অনুযায়ী কাজ করব। বিএনপি একটি বড় দল, একাধিক প্রার্থী থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার জন্য কাজ করব। সুখী সমৃদ্ধ উন্নত শিবগঞ্জ গড়তে জনসেবা করে যাব। তবে দলের মনোনয়নের বিষয়ে নিজের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বলে জানান তিনি।

জামায়াত ঘোষিত প্রার্থী ও রাজশাহী মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. কেরামত আলী  বলেন, দলের সীধান্ত অনুযায়ী নেতাকর্মীরা বিভিন্ন গণসংযোগ সভা, উঠান বৈঠক করছি। জামায়াত একটি নির্বাচনমুখী দল। আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত নির্বাচনের জন্য। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে জামায়ত বিজয়ী হবে, ইনশাআল্লাহ।

প্রতিনিধি/এসএস