নিজস্ব প্রতিবেদক
০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:১৬ এএম
আন্তর্জাতিক প্রটোকল মেনে জুলাই-আগস্ট গণঅভুত্থানে অজ্ঞাতনামা শহীদদের মরদেহ উত্তোলন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অজ্ঞাতনামা শহীদদের মরদেহ উত্তোলনে এসে এ কথা জানান তিনি।
মো. ছিবগাত উল্লাহ বলেন, আবেদন অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে ১১৪টি কবর চিহ্নিত হয়েছে, যা বাস্তবে কমবেশি হতে পারে। মৃতদেহ উত্তোলনের পর পোস্টমর্টেম, বোন স্যাম্পল/টিস্যু সংগ্রহ, ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করা হবে। পরিচয় নিশ্চিত হলে ধর্মীয় সম্মান বজায় রেখে আবার পুনঃদাফন করা হবে।
সিআইডি প্রধান বলেন, আনাসের মতো যারা বুকের রক্ত ঢেলে দেশের জন্য রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তাদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। এই কবরস্থানে যারা নাম-পরিচয়হীন অবস্থায় শুয়ে আছেন, তাদের পরিচয় তখন যাচাই-বাছাই করা হয়নি। তাদের পরিচয় উদঘাটন করা জাতির কাছে আমাদের একটি দায়িত্ব। আজ সেই মহান কাজের সূচনা হলো।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার (এইচসিএইচআর) মাধ্যমে আর্জেন্টিনা থেকে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুইস ফান্ডার ঢাকায় এসে পুরো কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি গত ৪০ বছরে ৬৫টি দেশে একই ধরনের অপারেশন পরিচালনা করেছেন।
‘আন্তর্জাতিক প্রোটোকল,মিনেসোটা প্রটোকল অনুসরণ করে কবর উত্তোলন, পোস্টমর্টেম, ডিএনএ স্যাম্পলিংসহ প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন হবে। আমরা সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা মেডিকেল, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ, ডিএমপি, বিভাগীয় কমিশনারসহ সব স্টেকহোল্ডারকে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত ১০ জন স্বজন আবেদন করেছেন। আরও কেউ থাকলে সিআইডিতে যোগাযোগ করতে পারবেন। সিআইডি হটলাইনে যোগাযোগ করলে স্বজনদের ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করা হবে। আমরা জানি না কোন কবরে কে আছেন। তাই সময় কত লাগবে বলা সম্ভব নয়। তবে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এই প্রক্রিয়ায় সকল শহীদের পরিচয় আমরা বের করতে পারব।
সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে সিআইডি প্রধান সাংবাদিকদের অনুরোধ করে বলেন, আন্তর্জাতিক প্রোটোকল অনুযায়ী মৃতদেহের কোনো ছবি বা সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। এটি অত্যন্ত সম্মানজনক ও মানবাধিকার–সংশ্লিষ্ট কাজ। আপনাদের আগের মতোই সহযোগিতা চাই।
পরিবারদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক বাবা-মা, ভাই–বোন বছর ধরে ঘুরে বেড়িয়েছেন তাদের আপনজনদের পরিচয় জানার জন্য। আমরা চাই, এই জাতীয় বেদনার দায় থেকে দেশকে মুক্ত করতে পারি।
শেষে তিনি সকল সংশ্লিষ্ট সংস্থা, চিকিৎসক, সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন, ডিএমপি এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
এসময় ইউনাইটেড ন্যাশনস হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস (ইউএনএইচআর) আর্জেন্টিনার আন্তর্জাতিক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুইস ফন্ডিব্রাইডার বলেন, আমি গত তিন মাস ধরে সিআইডির সাথে কাজ করছি। আন্তর্জাতিক মানের এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি এই কাজ আন্তর্জাতিক ফরেন্সিক মানদণ্ড ফলো করে করা হবে। আন্তর্জাতিক রুলস ফলো করে আমরা লোকাল সংস্থা (সিআইডি) কে সহায়তা করা হবে।
একেএস/এএস