জেলা প্রতিনিধি
০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:২৯ পিএম
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেছেন, পেশাদারত্বকে সমন্বিত রেখে কোনো সরকারের লেজুরবৃত্তি না করে এমনকি নিজের মতাদর্শের সরকারের চোখে চোখ রেখে কথা লিখতে বলতে পারলেই আর্থিক ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং স্বাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।
শনিবার (৮ নভেম্বর) রংপুর টাউনহলে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন এম আবদুল্লাহ। সেখানে ‘অনুদানের চেক বিতরণ ও সাংবাদিকদের আর্থিক সুরক্ষা ও কল্যাণে করণীয় এবং প্রস্তাবিত সংশোধনীসহ গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও সাংবাদিক সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন’ শীর্ষক মতবিনিময় ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
আবদুল্লাহ বলেন, সেখান থেকে, দলীয়য় দাসত্ব থেকে বেরিয়ে, নিজের দলের নিজের আদর্শের অনুসারি সরকারথাকলেও চোখে চোখ রেখে অধিকারের প্রশ্নে কথাবলার সৎ সাহস থাকতে হবে। তাহলে যত সমস্যা আজ উত্থাপন হেয়ছে। সব সমস্যার সমাধান হবে।
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, ১০ বছর। তখন আমি প্রধানমন্ত্রী বিটে কাজ করেছি বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে। কিন্তু কখনও সেখানে কোনো তদবিরবাজি করিনি। নির্মোহ সাংবাদিকতা করতে হবে। দলবাজির বাইরে থেকে। তা না হলে আমাদের সমস্যার সমাধান হবে না।
এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘ অবিভক্ত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আনোয়ার জাহিদ, তিনি একটি দলের প্রধান ছিলেন। কিন্তু যখন তিনি পেশায় আসতেন। তখন তার কোনো দল ছিল না। তার আচরণেও কোনো দলবাজি ছিল না। নির্মল সেন, তিনিও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন, অবিভক্ত বিএফইউজের সভাপতি ছিলেন। তিনি কখনও সাংবাদিকতায় দলবাজি করেন নাই। তার রাজনীতি বাইরে ছিল, প্রেসক্লাবে ছিল না।’
‘এবিএম মুসা আওয়ামী লীগ থেকে এমপি হয়েছিলেন। কিন্তু সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে যখন কথা বলতেন, সেখানে কোনো দলবাজি করেননি। চোখে চোখ রেখে কথা বলেছেন সব ফোরামে। এ ধরনের উদাহরণ দেওয়া যাবে অনেক। মোস্তফা কামাল হায়দার। এখনও রাজনীতি করেন। তারা আমাদের দেখিয়ে গেছেন দল এবং সাংবাদিকতাকে কীভাবে আলাদা করা যায়। আমরা আজকে সব একাকার করে ফেলেছি। যে কারণে আমাদের আজকে এই দুর্ভোগ।’ বলেন সাবেক এই সাংবাদিক নেতা।
আবদুল্লাহ বলেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশে ‘গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন অধ্যাদেশ-২০২৫’ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের খসড়ায় আবারও নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সাংবাদিক সুরক্ষা অধ্যাদেশ থেকে যেগুলো বাদ দেওয়া হয়েছিল তার অনেক কিছু আবারও সংযোজন করা হয়েছে।
এসময় তফসিল ঘোষণার আগেই গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়ে সাংবাদিকের দাবির সঙ্গেও একাত্মতা ঘোষণা করেন এম আবদুল্লাহ। এছাড়াও আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই প্রবীণ সাংবাদিকদের অনুদানের বিষয়টি স্পষ্ট হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে সাংবাদিকদের সন্তানদের জন্য শিক্ষাবৃত্তির। সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা তফসিল ঘোষণার আগেই গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবি জানান।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সালের সভাপতিত্বে ও আরপিইউজে সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ট্রাস্টের উপ-পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) এ বি এম রফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবু সাঈদ, আরপিইউজে সভাপতি সালেকুজ্জান সালেক।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের সদস্য সচিব লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক আমাদের প্রতিদিনের সম্পাদক মাহবুব রহমান হাবু, সিটি প্রেসক্লাব সভাপতি স্বপন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির মানিক, এনটিভির সিনিয়র রিপোটার একেএম ময়নুল হক, রংপুর রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক শিমুল ইসলাম, প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক জহির রায়হান, ঢাকা পোস্টের নিজস্ব প্রতিবেদক ফরহাদুজ্জামান ফারুক, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আফজাল, বৈষম্য বিরোধী সাংবাদিক আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক এসএম জাকির হোসাইন, টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম মুকুল, অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব ফেরদৌস জয়, মাহিগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি বাবলু নাগ প্রমুখ।
আলোচনা শেষে রংপুর জেলার ১৯ জন সাংবাদিকের মাঝে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট্রের অনুদানের চেক বিতরণ করা হয়। রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন-আরপিইউজে ও বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের যৌথ আয়েজিত সমাবেশে তিন শতাধিক গণমাধ্যমকর্মী অংশ নেন।
প্রতিনিধি/ক.ম/