images

আন্তর্জাতিক

বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাংক দেউলিয়া ঘোষণা করল ইরান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৪০ পিএম

ইরানের অন্যতম বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাংক ‘আয়ান্দে ব্যাংক’-কে দেউলিয়া ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় বিপর্যস্ত অর্থনীতির মধ্যে টিকে থাকতে এই বিরল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলো।

২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত আয়ান্দে ব্যাংকের ইরানজুড়ে ২৭০টি শাখা রয়েছে, যার মধ্যে রাজধানী তেহরানেই আছে ১৫০টি শাখা। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিপুল ঋণ ও লোকসানে জর্জরিত হয়ে ব্যাংকটি কার্যত অচল হয়ে পড়ে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইএসএনএ জানিয়েছে, ব্যাংকটির মোট লোকসান দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫২০ কোটি ডলার সমপরিমাণ এবং ঋণের পরিমাণ প্রায় ২৯০ কোটি ডলার।

বার্তা সংস্থা এএফপির একজন সাংবাদিক জানিয়েছেন, আজ শনিবার তেহরানে ব্যাংকটির সাবেক শাখাগুলোর বাইরে বিপুল সংখ্যক গ্রাহককে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত পুলিশও মোতায়েন ছিল।

এদিকে ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মেল্লি ব্যাংক আয়ান্দে ব্যাংকের সব সম্পদ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে এবং আমানতকারীদের তাদের সঞ্চয় ফেরত দেওয়া আশ্বাস দিয়েছে।

শনিবার মেল্লি ব্যাংকের পরিচালক আবুলফজল নাজারজাদে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেন, ‘আয়ান্দে ব্যাংক থেকে মেল্লি ব্যাংকে সম্পদ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আমানতকারীরা নিজেদের টাকা তুলতে পারবেন।’

এরআগে বৃহস্পতিবার ইরানের অর্থমন্ত্রী আলি মাদানিজাদে বলেন, ‘দেউলিয়া হলেও আয়ান্দে ব্যাংকের গ্রাহকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’

বিপুল পরিমাণ অনাদায়ী ঋণই ব্যাংকটির দেউলিয়া হওয়ার মূল কারণ উল্লেখ করে ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা হামিদরেজা ঘানিয়াবাদি বার্তা সংস্থা ইরনাকে বলেন, ‘আয়ান্দে ব্যাংকের ৯০ শতাংশেরও বেশি তহবিল ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের অথবা ব্যাংক কর্তৃক পরিচালিত প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ করা হয়েছিল, যেগুলোর আর পরিশোধ হয়নি।’

জানা গেছে, তেহরানের বিলাসবহুল ইরান মল শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণের মতো বিলাসবহুল প্রকল্পে অর্থায়ন করেছিল আয়ান্দে ব্যাংক, যেখানে রয়েছে সিনেমা হল ও বরফের স্কেটিং রিংকসহ নানা বিনোদন সুবিধা।

এদিকে ইরানের আরেক সংবাদ সংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, আয়ান্দেহ ছাড়াও, আরও পাঁচটি ব্যাংক- সারমায়েহ, দেই, সেপাহ, ইরান জামিন এবং মেলাল-ও আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বরে ইরানের ওপর প্রায় এক দশক আগে তুলে নেওয়া কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করে জাতিসংঘ। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি— তিন ইউরোপীয় দেশ গত মাসে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে চিঠি দেওয়ার পর ইরানের বিরুদ্ধে ‘স্ন্যাপব্যাক’ নামে পরিচিত নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের প্রক্রিয়া শুরু করে। 

প্রসঙ্গত, ‘স্ন্যাপব্যাক মেকানিজম’ এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির আওতায় ইরানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা যায়। চুক্তি অনুযায়ী, পারমাণবিক কর্মসূচিতে শিথিলতার শর্তে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। তবে ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর ইরান তাদের পারমাণবিক কার্যক্রম জোরদার করে।

সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল

এমএইচআর