আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:১২ পিএম
বাংলাদেশ অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে বিগত কয়েক মাসে কয়েকশো জনকে বাংলাদেশে পুশ-ইন করেছে ভারত। যদিও ভারত থেকে বিতাড়িত হওয়া এসব মানুষের বেশিরভাগই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক বলে অভিযোগ ওঠে। এনিয়ে পশ্চিমবঙ্গের আদালতে বেশ কয়েকটি মামলাও হয়। সেই ধরনেরই এক মামলায় সোনালি খাতুন নামে এক অন্তবর্তী নারীসহ ৬ জনকে ভারতে ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। তবে সোনালিদের ফিরিয়ে আনার জন্য বেঁধে দেওয়া সময়সীমা পার হলেও এই নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।
গত ২৪ জুন ভারতের রাজধানী দিল্লিতে প্রায় দেড় দশক ধরে ভাঙ্গারির কাজ করা দুটি পরিবারের ছয়জনকে বাংলাদেশি সন্দেহে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর দুইদিন পরই তাদের বাংলাদেশে (পুশইন) ঠেলে দেওয়া হয়। ছয়জনের মধ্যে- একই পরিবারের সোনালি খাতুন, তার স্বামী দানেশ শেখ ও তাদের ছেলে সাবির শেখ। অপর ৩ জন হলেন- সুইটি বিবি, তার ১৬ বছর বয়সী কুরবান শেখ ও ছয় বছরের ইমাম শেখ।
জানা গেছে, ভারত থেকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার পরে তারা বেশ কিছুদিন বাংলাদেশেরই কোনো একটা এলাকায় ছিলেন। তারপরে তারা বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। তবে তারা আটক হওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার পুলিশ একাধিক নথি জোগাড় করে দিল্লি পুলিশের কাছে পাঠিয়েছিল, যাতে দেখা গিয়েছিল যে সোনালি খাতুনসহ ছয়জনই ভারতের নাগরিক।
এদিকে এই দুটি পরিবারের বিষয়ে প্রথমে দিল্লি হাইকোর্টে এবং পরে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন তাদের আত্মীয়রা। সোনালী খাতুনের বাবা বদু শেখ এবং সুইটি বেগমের ভাই আমির খানের পিটিশনের জবাবে গত ২৬ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাইকোর্ট সেই ৬ জনকে চার সপ্তাহের মধ্যে দেশে ফেরত আনার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারকে। ২৪ অক্টোবর সেই সময়সীমা শেষ হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকার সোনালিদের ফেরাতে কোনও উদ্যোগ নেয়নি বলেই অভিযোগ উঠেছে।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে এক ভিডিও বার্তায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নারী ও শিশু উন্নয়ন এবং সমাজসেবা মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘গত ২৬ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাইকোর্ট স্পষ্টভাবে নির্বাসিত ব্যক্তিদের ভারতীয় নাগরিক ঘোষণা করে এবং চার সপ্তাহের মধ্যে তাদের দেশে প্রত্যাবাসনের নির্দেশ দেয়। এমনকী বাংলাদেশের একটি আদালতও ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেয়। তবুও, চার সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে, এবং বিজেপি-নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার একেবারেই কিছুই করেনি।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘বিজেপি একটি ঔপনিবেশিক মানসিকতা নিয়ে কাজ করে আসছে। সেই মানসিকতা পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে তাদের বুটের তলায় পিষে ফেলতে চায়। যখন তাদের আর্থিক অবরোধ এবং অপবাদ প্রচারণা বাংলার চেতনা ভাঙতে ব্যর্থ হয়, তখন তারা আরও ঘৃণ্য কিছুর আশ্রয় নেয়: বৈধ ভারতীয় নাগরিকদের ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করে সীমান্ত পেরিয়ে তাদের নির্বাসিত করা হচ্ছে।’
এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যসভার এমপি সামিরুল ইসলাম বলেছেন, ‘বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র সরকার আইন বা সংবিধান মেনে চলার বাধ্যবাধকতা ভুলে গেছে। তারা কলকাতা আদালতের বাধ্যতামূলক নির্দেশনা পালন করেনি এবং এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর কষ্ট আরও বাড়িয়েছে।’
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বাংলাদেশে পুশ-ব্যাক করে দেওয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে। ভারতের দিক থেকে যেটা পুশ-ব্যাক, বাংলাদেশের চোখে সেটাই পুশ-ইন। সীমান্তে পুশ-ব্যাক বা পুশ-ইন আসলে এমন একটা পদ্ধতি যেখানে ধরা পড়া ব্যক্তিদের সীমান্তে নিয়ে গিয়ে অন্য দেশের সীমান্তে ঠেলে দেওয়া হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়ার কোনো আইনি স্বীকৃতি নেই ভারতে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই এই পদ্ধতি চলে আসছে, যেটা আনুষ্ঠানিকভাবে কেউই স্বীকার করে না।
এ বিষয়ে দিল্লিকে বেশ কয়েকবার চিঠি দিয়েছে ঢাকা। তবে কোনো লাভ হয়নি পুশ-ইন অব্যহত রেখে ভারত।
দেশটির গণমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, গত মে মাসে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নাম দিয়ে পাকিস্তানে হামলা চালানোর পর ভারত এ পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি মানুষকে বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ করেছে।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
এমএইচআর