নিজস্ব প্রতিবেদক
২০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
বিএনপি নেতাদের হাত ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আওয়ামী সমর্থক চিকিৎসকদের পদায়নের অভিযোগ ওঠেছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-শিক্ষক ও চিকিৎসকরা। ইতোমধ্যে তারা হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। দেয়ালে সাঁটানো হয়েছে প্রতিবাদী ব্যানার।
জানা গেছে, সম্প্রতি ঢাকা মেডিকেলে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে পদায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে আইএমও (রেসপিরেটরি মেডিসিন) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ডা. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শামীম। তিনি সরকার পতনের আগের দিন (৪ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদফতরের সামনে আওয়ামী লীগের শান্তি মিছিলে অংশ নিয়ে পতিত সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার পক্ষে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন।
এর বাইরেও ডা. মনিরুল ইসলাম নয়ন (কে-৬৪) কে সিএ- সার্জারি, ডা. সাজিদ সোহেবকে (কে-৬৯) সহকারী রেজিস্টার (মেডিসিন), ডা. সাকিব আবরার (কে-৭২) আইএমও-মেডিসিন হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। এদের তিনজনই সক্রিয়ভাবে আওয়ামী লীগের চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাচিপ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-শিক্ষক ও চিকিৎসকরা বলছেন, তারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ছাত্র-জনতার বিচারকার্যে বাধাপ্রদানকারী ফ্যাসিস্ট ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ ও স্বাচিপের দালাল। এদের পদায়ন বাতিল ও পদায়নের সঙ্গে জড়িতদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-শিক্ষক ও চিকিৎসকরা।
তারা বলেন, এর পেছনে বিএনপি স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ও বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবের ডিএমসি শাখার যুগ্ম সম্পাদক মাহমুদুর রহমান নোমান। কারণ পদায়নের পরে চিকিৎসকদের গ্রুপে দেওয়া এক কৃতজ্ঞতা স্বীকার বার্তা মাসুদ লেখেন, আল্লাহর অশেষ রহমতে গত রাতে আমার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগে ট্রান্সফার অর্ডার হয়েছে। সৃষ্টিকর্তার পর ধন্যবাদ জানাই আমাদের আশা বাতিঘর ড্যাবের ডা. রফিক ভাই (বিএনপির স্বাস্থ্য সম্পাদক) ও আমাদের ঢামেকসুর সাবেক জিএস নোমার ভাইকে (ড্যাবের ডিএমসি শাখার যুগ্ম সম্পাদক)।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি স্বাচিপের হাতে নির্যাতিত মানুষ। তাদের কারণে জেল খাটতে হয়েছে। তাদেরকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সুসময়ে এসে অনেকে সুযোগ নিতে চায়। তবে আবার অনেকে ছিল, সরকারি চাকরি করে সরাসরি নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করতে পারেনি। আমরা তাদের থেকে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা পেয়েছি। তবে সরাসরি স্বাচিপ করে থাকলে তাদের আশ্রয়ের সুযোগ নেই।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আমাদের সবাই একই ছায়ার নিছে কাজ করি। কারো মাঝে কোনো গ্রুপিং নেই। আমরা সবার পরামর্শ ক্রমেই কাজ করবো।
ড্যাবের ঢামে শাখার যুগ্ম সম্পাদক মাহমুদুর রহমান নোমান বলেন, যাদের কথা বলা হচ্ছে বা আমার কান পর্যন্ত এসেছে তাদের আমি চিনতামই না। আমি গত ১৫ বছর ঢামেকে ডুকতে পারিনি। ৫ আগস্টের পর ১৫ আগস্ট আমার ঢামেকে অর্ডার হয়। এরপর এখানে আসি। এই স্বল্প সময়ে এত জুনিয়র লেভেলে আমার এক্সেস হয়নি। তারপর ও বিভিন্ন ইস্যুতে এই ছেলেগুলো আমার কাছে এসেছে।
তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে থাকা, সরকারি চাকরি ক্ষেত্রে চলতে এবং নিজেদের সেইফ রাখতে অনেকই কিছুটা তাল মিলিয়ে চলছে। কয়েকটা ছবি তুললেই তো তাদের অন্য দলেরই লোক এমনটা বলা যায় না।
এই চিকিৎসক নেতা বলেন, ক্যাম্পাসে কয়েকটি গ্রুপ হয়েছে, আরপি আর এস নিয়োগ নিয়েও সরাসরি স্বাচিপের লোককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দুই গ্রুপেরই ক্যম্পাসে ব্যানার আছে। আমি কোনো গ্রুপিং চাই না। তবে আমরা অনেকবার বলেছি, স্বাচিপ করা কাউকে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ না দিতে।
এমএইচ/জেবি