images

সারাদেশ

অল্প বৃষ্টিতেই ডুবে গেছে চট্টগ্রাম নগরী!

জেলা প্রতিনিধি

১০ জুন ২০২৩, ০৭:২১ পিএম

মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে চট্টগ্রামে কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি, কখনো মাঝারি আকারের হালকা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে মহানগরীর যান চলাচলের সড়ক ও অলিগলির রাস্তাঘাট। ফলে ভোগান্তি বেড়েছে নগরবাসীর।

নগরবাসীর মতে, গতকাল শুক্রবার (৯ জুন) সকালে হালকা বৃষ্টিপাত হয় চট্টগ্রামে। আধাঘণ্টা পর থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ঝরে। এতে সন্ধ্যার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর নিচু সড়কগুলোতে পানি জমে। এতে এক দফা ভোগান্তিতে পড়ে বিভিন্ন কাজে ঘর থেকে বের হওয়া নগরীর মানুষ। রাতে বৃষ্টিপাত বন্ধ হলে সড়কের পানিও নেমে যায়।

তবে শনিবার (১০ জুন) দুপুর থেকে আবার হালকা বৃষ্টিপাত শুরু হয়। যা সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থামেনি। এতে চট্টগ্রাম মহানগরীর যানবাহন চলাচলের সড়ক ও অলি-গলির রাস্তাঘাট জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এতে দ্বিতীয় দফা ভোগান্তিতে পড়ে নগরীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশাজীবী মানুষ।

আরও পড়ুন:  চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলবে কবে?

নগরবাসীর অভিযোগ, খাল ও নালা-নর্দমা অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্নতায় ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে বৃষ্টির পানি নামতে পারছে না। এতে পানি জমে যানবাহন চলাচলের সড়ক ও বিভিন্ন অলি-গলি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। যার ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে নগরবাসীকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

Rain2

চকবাজারের বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম বলেন, নর্দমার কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। হাঁটুপানিতে তলিয়ে গেছে এলাকার রাস্তাঘাট। সকালে বাসা থেকে বের হয়েই বিপাকে পড়েছি। জলাবদ্ধতার কারণে যানাবাহন চলাচলও কমে গেছে। রিকশা চালকরা সুযোগ বুঝে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে। 

জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগে পড়ার কথা জানিয়েছেন অভিজাত মার্কেট চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী মাজহার আলম। তিনি বলেন, শনিবার দুপুর থেকে টানা বৃষ্টি হওয়ায় বের হতে পারছিলাম না। শেষ পর্যন্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিকেলের দিকে বের হয়ে দেখি রাস্তায় হাঁটু সমান পানি। মুরাদপুর গিয়েও দেখা যায় একই অবস্থা। রাস্তায় রিকশাও তেমন একটা নাই। তাই ভিজে ময়লা পানি পেরিয়ে মার্কেটে যেতে হয়েছে।

আরও পড়ুন: অপরিকল্পিত আবাসনে জলাবদ্ধতা ঝুঁকিতে গুলশান-বনানী

নগরবাসীর তথ্যমতে, দুপুর থেকে হওয়া বৃষ্টিতে নগরীর বহদ্দারহাট, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, বাকলিয়া, ছোটপুল, বড়পোল, আগ্রাবাদ বেপারি পাড়া, মহুরিপাড়া, সিডিএ আবাসিক, আতুরার ডিপো, শুলকবহর, কাপাসগোলা, ডিসি সড়ক, পাঠানটুলী, চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকার কোথাও গোড়ালি সমান আবার কোথাও কোথাও হাঁটু পর্যন্ত পানি জমেছে সড়কে। এতে চাকরিজীবীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।

নগরীর পাঠানটুলি এলাকার বাসিন্দা ও বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইমরান হোসেন বলেন, একটু বৃষ্টিতেই নগরীর রাস্তায় পানি জমে এ চিত্র সবসময়ের। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ বেশিরভাগ শেষ হলেও এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলছে না। কবে যে এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে আল্লাহই জানেন। ড্রেনগুলো ঠিকঠাক পরিষ্কার করলে হয়তো এমন পানি জমত না। বর্ষা আসার আগে এমন হলে বর্ষায় কী যে হবে এটা ভাবতেই গা শিউরে উঠছে।

Rain3

জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান বিন সামশ ঢাকা মেইলকে বলেন, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের ৭৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, এটা আমরা আরও একমাস আগে বলেছি। এ সময় এও বলেছি, এই প্রকল্পের কাজে তেমন সুফল আসবে না, যদি না নগরীর ড্রেন ও খালগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকে। যা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) তত্ত্বাবধানে রয়েছে। ড্রেন ও খালগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হলে পানি জমত না বলে জানান তিনি।    

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও জলাবদ্ধতা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে চসিক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, নগরীর ড্রেন ও খালগুলোর অধিকাংশই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। কয়েকটি এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। এ কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে এটা ঠিক নয়। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হলে বিষয়টি খোলাসা হবে।  

এদিকে বৃষ্টিপাতের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ সুমন সাহা ঢাকা মেইলকে বলেন, দুপুর থেকে চট্টগ্রামে হালকা থেকে মাঝারি আকারের বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গত শুক্রবার সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘন্টায় ৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রাতেও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। তবে অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এতে নগরীর নিচু এলাকা ডুবে যেতে পারে।

প্রতিনিধি/জেবি