জেলা প্রতিনিধি
০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৫২ পিএম
সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে কোনো অনুমোদন ছাড়াই নওগাঁয় তৈরি করা হচ্ছে নকল মৎস্য ওষুধ। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব নকল ওষুধ তৈরি হলেও নেই কোনো যথাযত পদক্ষেপ। এতে ভেজাল ওষুধের প্রভাবে মাছের নানা রকম রোগ বালাই থেকে শুরু করে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে মৎস্য চাষিদের।
তথ্য অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নওগাঁ সদরের ডাক্তারের মোড় সংলগ্ন সামসুদ্দীনের নর্থ বেঙ্গল গ্রেইন ইন্ডাস্ট্রিজ লি. অটোরাইস মিলের কাছে মেইন রোড সংলগ্ন একটি গোডাউন ঘর ভাড়া নিয়ে মোস্তাফিজুর নামে এক ব্যক্তি বিভিন্ন প্রকার মাছের ওষুধ তৈরি করছেন। নেই কোনো সাইনবোর্ড, বাইরের গেটে তালা দিয়ে ভেতরে চলছে এসব অপকর্ম। বাইরে থেকে দেখলে পরিত্যক্ত গোডউন ছাড়া আর কিছু মনে হবে না। অথচ ভিতরে চলছে নকল ওষুধ তৈরির কর্মযজ্ঞ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোস্তাফিজুর রহমান নামে ওই ব্যক্তি প্রায় মাস আগে জেলার মহাদেবপুর উপজেলার ধনজইল বাজারে ‘রাহাত কর্পোরেশন’ নামে মাছের ওষুধ আমদানি-রপ্তানি করার জন্য আবেদন করেন। যার কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। আবেদনটি এখনো যাচাই বাচাই চলছে। অথচ তিনি স্থান পরিবর্তন করে নকল মাছের ওষুধ তৈরির কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, গোডাউন ঘরের ভেতর শিশুসহ বেশ কয়েকজন কন্টিনার, বস্তার প্যাকেট থেকে ভিন্ন মেডিসিনের সংমিশ্রন তৈরি করছেন। গোডাউন ঘুরে দেখা যায়, গ্যালাক্সো ক্লিন, গ্যালাক্সো ফাস্ট, গ্যালাক্সো অ্যাকুয়া, গ্যালাক্সো নিল, গ্যালাক্সো গ্রোথসহ নানান পণ্যের মোড়ক ও খালি সাদা বোতল রয়েছে। কোনো কেমিস্ট ছাড়াই অনভিজ্ঞ শিশুরা বড়বড় নীল রঙের কন্টিনার ও বিভিন্ন মেডিসিন বস্তা থেকে ড্রামে ঢেলে ভালোভাবে মিশ্রন করে কাকের সাহায্যে ছোট ছোট বোতলে ঢেলে লেভেল লাগাচ্ছে। বোতলের গায়ে গ্যালাক্সো এগ্রোভেট লি. ঢাকা, বাংলাদেশ কোম্পানির লেভেলিং করে বাজারজাত করছেন তারা। অথচ এই কোম্পানির সঙ্গে তাদরে কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছেন গ্যালাক্সো এগ্রোভেট। এসব বিষয়ে সেখানে কর্মরত কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা রাজি হননি।
এবিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাহাত কর্পোরেশন নামে আমার ডিপো অফিসের অনুমোদন নেওয়া আছে। এখানে কোনো কিছু তৈরি হয় না, আমি চায়না থেকে মালামাল নিয়ে এসে ছেড়া ফাঁটা মালগুলো ঠিকঠাক করি এই। মহাদেবপুর উপজেলা মৎস অফিস থেকে অনুমোদন নেওয়া আছে বলেও দাবি করেন তিনি।
মহাদেবপুর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শিল্পী রায় বলেন, মাছের মেডিসিনের আমদানি-রপ্তানির জন্য আবেদন করেছেন। তাকে কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। ধনজইল বাজারের ঠিকানা দিয়ে নওগাঁ সদরের মাঝে গোডাউন এটা তো প্রশ্নই আসে না।
গ্যালাক্সো এগ্রোভেট লি. এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর নাসিম আহম্মেদ বলেন, নওগাঁয় আমাদের কোনো শাখা নেই। আমাদের ফ্যাক্টরি ঢাকাতে। রাজশাহীতে আমাদের অফিস রয়েছে। আমাদের কোম্পানির একজন কর্মচারি ও মোস্তাফিজুর মিলে আমার কোম্পানির প্রডাক্টের নাম-ঠিকানা হুবহু ব্যবহার করে এসব নকল ওষুধ রি-প্যাকিং করে বাজারজাত করছে বলে জানতে পেরেছি। দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নওগাঁ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফেরদৌস আলী বলেন, আমরা মাছের ওষুধ তৈরির কোনো অনুমোদন দেই না। সেখানে ওষুধ তৈরির তো প্রশ্নই আসে না। অন্য কোম্পানির মোড়ক ব্যবহার করে বাজারজাত এটা তো মহাঅপরাধ। বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রতিনিধি/টিবি