images

সারাদেশ

নওগাঁ-২: বিএনপিতে বিভক্তি, সুযোগ নিতে চায় জামায়াত

২৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৫৭ পিএম

সীমান্তবর্তী ধামইরহাট ও পত্নীতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-২ আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। তবে এই আসনে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত। দলটির কার্যক্রম ও কর্মসূচি দুটি ভিন্ন ব্যানারে পরিচালিত হতে দেখা যায়। বিএনপির এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে সৃষ্ট বিভক্তির সুযোগ নিতে চাইছে জামায়াতে ইসলামী। এরই মধ্যে জামায়াতে ইসলামী জেলা নায়েবে আমির ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হককে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে।

এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে সাবেক সংসদ সদস্য ও নওগাঁ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক শামসুজ্জোহা খান এবং নওগাঁ জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী। এছাড়াও কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক কে এম এস মুসাব্বির শাফি’র নামও আলোচনায় আছে। তবে নতুন গঠিত দল এনসিপি, অন্যান্য ইসলামি দল, বামদল ও ছোট ছোট দলগুলোর প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা চোখে পড়েনি।

বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর দুই উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপির সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে এই বিভক্তি সৃষ্টি হয়। সম্মেলনে যে ভোটার তালিকা তৈরি করা হয়েছিল, সেখানে প্রকৃত ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। এছাড়াও, অনেক ত্যাগী নেতাকে উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটিতেও মূল্যায়ন করা হয়নি। এ নিয়ে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা কোন্দলে জর্জরিত। শুধু এসব ঘটনায় নয়, অনেক আগে থেকেই এই আসনে বিএনপি নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত কেউ কাজ করছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক শামসুজ্জোহা খানের পক্ষে, আর কেউ নওগাঁ জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরীর হয়ে।

তৃণমূলের অনেকেই মনে করেন, বিএনপির দলীয় কোন্দলের কারণে যিনিই মনোনয়ন পান না কেন, একজনের অনুসারীরা অন্যজনের বিরোধিতা করতে পারেন। এ কারণে বিএনপি প্রার্থীর জয় পাওয়া কষ্টকর হবে। বিএনপির এই বিভক্তি জামায়াতকে সুযোগ করে দিতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়দের অনেকে।

এদিকে, বিএনপিকে সুসংগঠিত রাখতে কেন্দ্রীয় বিএনপির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক শামসুজ্জোহা খান এবং জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী সভা-সমাবেশ ও কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন।

অন্যদিকে, এ আসনে বিজয়ী হতে দলের একক প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। দলটির নেতাকর্মীরা সংগঠনকে বিস্তারের জন্য দাওয়াতি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং এবার তাঁরাও আশাবাদী।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ও সাবেক সংসদ সদস্য শামসুজ্জোহা খান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই আমি দলের সঙ্গে আছি। পাঁচবার দলের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করেছি। এখনো মাঠে কাজ করছি। বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে সভা-সমাবেশ করছি। এরমধ্যে একটি সিগনালও পেয়ে গেছি।’ দুই ভাগে বিভক্ত নেতাকর্মীদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কারো পক্ষে যদি লোক না থাকে কি করার আছে। ত্যাগী কোনো নেতাকর্মী বাদ পড়েনি। দলের নিয়ম মেনেই ভোটের মাধ্যমে কাউন্সিল হয়েছে এবং নেতা নির্বাচিত হয়েছে। কোনো পকেট কমিটি হয়নি।’

আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘দলের প্রত্যেকটি কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছি। প্রতিটি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে উঠান বৈঠক, পথসভা, গণসংযোগ ও সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে অংশ নিচ্ছি। যতটুকু সম্ভব নিজের পক্ষ থেকে মানুষকে সাহায্য করছি। দল-মত নির্বিশেষে ৯০ ভাগ মানুষ আমার সমর্থক। মানুষ আমাকে ভালোবাসে।’

বিএনপি একটি বড় দল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই কারণে বিভক্তি থাকতেই পারে। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার সাথে সবাই কাজ করবে। তবে কিছুদিন আগে কমিটি গঠন নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি আছে। কমিটিগুলোতে কোনো ভালো নেতাকর্মীর জায়গা হয়নি। সাবেক সংসদ সদস্য নিজের পছন্দের নেতাকর্মীদের রেখেছেন। এতে করে আমার প্রতি মানুষের জনসমর্থন বেড়ে গেছে। এবার দলও পরিচ্ছন্ন নেতাকর্মীদের মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলেছে। সেই জায়গা থেকে শতভাগ আশাবাদী আমি মনোনয়ন পাবো এবং বিজয়ী হবো।’

জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক বলেন, ‘প্রার্থী ঘোষণার আগে থেকেই মাঠে ছিলাম, এখনো আছি। বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ, পথসভা ও সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছি। গণসংযোগে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আমার এই আসনসহ নওগাঁর ৬টি আসনেই এবার জামায়াতে ইসলামী বিজয়ী হবে ইনশাআল্লাহ।’

জানা যায়, এ আসনে ১৯৯১ সালে বিএনপির প্রার্থী আবদুর রউফ মান্নানকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শহীদুজ্জামান সরকার বাবলু। এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে নির্বাচিত হন বিএনপির শামসুজ্জোহা খান। ২০০৮ সালে আসনটি আবারও চলে যায় শহীদুজ্জামান সরকারের দখলে। এরপর থেকে সরকার পতনের আগ পর্যন্ত আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে ছিল।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে দুটি উপজেলা ও দুটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৫৮৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৯ হাজার ৫৮৩ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৮০ হাজার ১ জন। হিজড়া ভোটার আছেন ২ জন।

প্রতিনিধি/ একেবি