শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

দুঃসহ গরম থেকে স্বস্তি মিলবে কবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২ জুন ২০২৩, ০৭:৫০ পিএম

শেয়ার করুন:

দুঃসহ গরম থেকে স্বস্তি মিলবে কবে?

গত কয়েক দিন ধরে দেশে তাপমাত্রার পারদ বাড়ছে। জুন মাসে এই সময়ে স্বাভাবিক যে তাপমাত্রা থাকে এর চেয়ে বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করায় গরমে অস্থির জনজীবন। একটু বৃষ্টির জন্য চারদিকে হাহাকার। তবে আওহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে, এখনই কাটছে না গরমের এই অস্বস্তি। দুঃসহ গরমে আরও কয়েক দিন ভুগতে হবে। কারণ আপাতত তাপমাত্রা কমা কিংবা আবহাওয়া ঠান্ডা করার মতো বৃষ্টিপাতের আভাস নেই।

আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, এ বছর জুন মাস শুরুই হয়েছে অস্বাভাবিক তাপমাত্রা দিয়ে। প্রথম দুই দিনেই স্বাভাবিকের তুলনায় তিন থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি তাপদাহ রেকর্ড হয়েছে। ১১ বছরের মধ্যে জুন মাসে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে বৃহস্পতিবার (১ জুন)। আর রাজধানীতে সাত বছরের মধ্যে জুন মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ডও হয় এদিন।


বিজ্ঞাপন


বৃহস্পতিবার আবহাওয়া অধিদফতর সর্বোচ্চ ৪১ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করে দিনাজপুরে। আজ শুক্রবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয় রাজশাহীতে। রাজধানীতে তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রির উপরে বিরাজ করছে। এতে প্রচণ্ড গরম অনুভূত হচ্ছে। জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা বিরাজ করছে।

৯-১০ জুনের দিকে বৃষ্টিতে সিলেট আর চট্টগ্রাম অঞ্চলে তাপপ্রবাহ কমে আসবে। কিন্তু ঢাকা ও উত্তরবঙ্গে তাপপ্রবাহ আরও এক সপ্তাহ দীর্ঘ হতে পারে।

গরম বেশি অনুভূত হওয়ার কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদেরা স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতকে দায়ী করছেন। বৃহস্পতিবার মে মাসের আবহাওয়া পরিস্থিতি তুলে ধরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মে মাসে গড় বৃষ্টি হয় ২৮৪ মিলিমিটার। আর সদ্য বিদায়ী মে মাসে বৃষ্টি হয়েছে ১৫৯ মিলিমিটার। জুন মাসেও বৃষ্টিপাত তুলনামূলক কম হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

চলমান তাপপ্রবাহের তিনটি কারণের কথা বলছে আবহাওয়া অধিদফতর। যার একটি ঘূর্ণিঝড় মোখা। আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম বলেন, গত মাসে সাইক্লোন মোখার কারণে বৃষ্টিপাত কম হচ্ছিল। ফলে ভারত-বাংলাদেশে তাপমাত্রা বেশি। মোখার সময় এই পুরো বেল্ট ওভারহিটেড হয়ে যায়। এটা একটা কারণ। মোখার প্রভাবে এখনো ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহারে অতিরিক্ত তাপমাত্রা বিরাজ করছে। আর সে থেকে লু হাওয়া বইছে বাংলাদেশের দিকে।


বিজ্ঞাপন


তার মতে, বজ্রঝড় কমে যাওয়াও তাপপ্রবাহের একটা কারণ। তিনি বলেন, প্রত্যেকবার মে মাসে ১৮ থেকে ২৪ দিন বজ্রঝড় বা কালবৈশাখীর আনাগোনা থাকে। ফলে হিমালয় থেকে সেভেন সিস্টার্স পর্যন্ত তাপমাত্রা কম থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে দেখা যাচ্ছে বজ্রঝড়ের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফলে বৃষ্টিও কম হচ্ছে, মাটি উত্তপ্ত থাকছে।

এই আবহাওয়াবিদের মতে, তাপপ্রবাহের আরেকটা কারণ হলো বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্য। যা বাতাসের আর্দ্রতা বাড়াচ্ছে। একইসাথে বাতাসের গতিবেগও এখন অনেক কম বলে জানায় আবহাওয়া অফিস। ফলে মানুষের কষ্ট আরও বাড়ছে।

Hit

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম জানান, ৯-১০ জুনের দিকে বৃষ্টিতে সিলেট আর চট্টগ্রাম অঞ্চলে তাপপ্রবাহ কমে আসবে। কিন্তু ঢাকা ও উত্তরবঙ্গে তাপপ্রবাহ আরও এক সপ্তাহ দীর্ঘ হতে পারে।

শুক্রবার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। তবে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

গরমে শিশু থেকে বয়স্ক সবাই ঝুঁকিতে রয়েছে। এ সময় অতিরিক্ত ঘাম হিটস্ট্রোকের কারণ হতে পারে। ফলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। 

আবহাওয়া অফিস জানায়, আজ রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী এবং সৈয়দপুর জেলাসমূহের উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং সিলেট, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলাসহ ঢাকা, ময়মনসিংহ ও খুলনা বিভাগ এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগসমূহের অবশিষ্টাংশের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

এদিকে তাপপ্রবাহের কারণে দেশে নানাবিধ গরমজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। হিটস্ট্রোক বাড়ার পাশাপাশি ডায়রিয়াসহ নানা রোগ বাড়ছে। এ অবস্থায় গরমে রোগ থেকে বাঁচতে জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে রোগ থেকে বেঁচে থাকতে খাবার গ্রহণ ও পানি পানে সতর্ক করেছেন তারা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গরমে শিশু থেকে বয়স্ক সবাই ঝুঁকিতে রয়েছে। এ সময় অতিরিক্ত ঘাম হিটস্ট্রোকের কারণ হতে পারে। ফলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে পানির উৎস যেন নিরাপদ হয়। একইসঙ্গে গরমে খাবার গ্রহণেও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ তাদের।

জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর