শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

পাহাড়ি ঢলে ডুবছে হাওরের বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২ এপ্রিল ২০২২, ০৯:৪৫ পিএম

শেয়ার করুন:

পাহাড়ি ঢলে ডুবছে হাওরের বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল

ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাওরে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল ডুবতে বসেছে। সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট ও মৌলভীবাজারের বিশাল অঞ্চলের বোরো আবাদ চরম হুমকিতে পড়েছে। এতে এক ফসলের ওপর নির্ভরশীল স্থানীয় বোরো চাষিরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

উজানে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীসহ অন্যান্য নদীতে পানি বেড়েছে। এতে বিভিন্ন হাওরে পানি ঢুকে পড়েছে।


বিজ্ঞাপন


শনিবার (২ এপ্রিল) দুপুরে পাটলাই নদীর পানির অতিরিক্ত চাপে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের নজরখালি বাঁধ ভেঙে জেলার সবচেয়ে বড় হাওর টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রবল স্রোতে পানি ঢুকছে। এতে দক্ষিণ শ্রীপুর ও উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত টাঙ্গুয়ার হাওরের এক চতুর্থাংশ ফসলি জমি তলিয়ে গেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গেল ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি ১৮৮ সেন্টিমিটার ও ও যাদুকাটা নদীর পানি ১৯ সেন্টিমিটার বেড়েছে। সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে পুরো জেলার বিভিন্ন নদ নদীর পানি ক্রমশ বাড়ছে। এর ফলে পানির মাত্রাতিরিক্ত চাপ থাকায় বিভিন্ন হাওরে নির্মিত ফসল রক্ষা বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। আবার কোথাও কোথাও বাঁধ ভেঙে গেছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা জানান, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম ও মেঘালয় প্রদেশের স্থানগুলোতে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সুনামগঞ্জ জেলায় প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে নদ-নদীগুলোর পানি সমতল এখনও বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলা সদরের কয়েকটি হাওরের অধিকতর নিচু জমির প্রায় ৫০০ একর পরিমাণ বোরো ফসল ভারতীয় ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। এভাবে ঢলের পানি এলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এই উপজেলার ২১ হাজার হেক্টর জমির ফসলই তলিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।


বিজ্ঞাপন


krisi2

খালিয়াজুরী উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, এখানে ইতিমধ্যে ক্ষতি হয়েছে মাত্র ১১৩ হেক্টর জমির ফসল। ৩০ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল সন্ধ্যা সময়ের মাঝে এসব জমি তলিয়েছে। খালিয়াজুরী সদর ইউনিয়নের কীর্তনখলা হাওর, চুনাই হাওর, বাদিয়ারচর হাওর, টাকটারের হাওর, মনিজান হাওর, লেবরিয়া হাওর, হেমনগর হাওর চাকুয়া ইউনিয়নের গঙ্গবদও হাওর, নয়াখাল হওর, গাজীপুর ইউনিয়নের বাগানী হাওর ও ডাকাতখালি হাওরের অধিকতর নিম্নস্থানে ও ফসল রক্ষা বাঁধের বাইরে আবাদ করা ওই সব তলিয়ে যাওয়া জমির ফসল ছিল দুধ ও দানা পর্যায়ে।

খালিয়াজুরী সদেরর কৃষক মনির হোসেন জানান, খালিয়াজুরীতে কমপক্ষে ৫০০ একর জমির ফসল তলিয়েছে। এর মধ্যে তার নিজের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২০ একর জমির ধান। খালিয়াজুরীর লক্ষীপুর গ্রামের কৃষক, আনোয়ার হোসেন, আব্দুর রউফ ও ফুল মিয়া জানান, ঢলের পানিতে তলিয়ে তাদের ১৫ একর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।

খালিয়াজুরী কৃষি কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ঢলের পানি প্রবাহ অব্যাহত রযেছে। পানির এমন প্রবাহ থাকলে সপ্তাহখানের মধ্যেই ফসল রক্ষা বাঁধ উপচে খালিয়াজুরী উপজেলার সমস্ত বোরো ফসল তলিয়ে যাবে। এ উপজেলায় এবার ২১ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেইলকে জানান, ভারতের চেরাপুঞ্জি থেকে বৃষ্টির পানি বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের যাদুকাটা ও সুরমা নদী দিয়ে খালিয়াজুরীর ধনু নদীতে ঢল আকারে নামছে। তাই ৩০ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল সন্ধ্য পর্যন্ত ধনু নদীর পানি বেড়েছে পৌনে ছয় ফুট। এরমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় বেড়েছে তিন ফুট।

এই কর্মকর্তা বলেন, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে আগামী কয়েক দিনও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্ববাস রয়েছে। যদি সেখানে বৃষ্টি হয়ই তবে কয়েক দিনের মধ্যে সেই বৃষ্টির পানি এসে তা ধনু নদীতে বিপদসীমা অতিক্রম করবে।

krisi3

জসিম উদ্দিন বলেন, নেত্রকোনার হাওরে এবার ১৮৩ কিলোমিটার ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ২৩ কোটি ছয় লাখ টাকার ব্যয় বরাদ্দের এই বাঁধ মজবুত হলেও অতিরিক্ত পানি বেড়ে উপচে পড়লে হাওরের বোরো ফসল রক্ষা কঠিন হয়ে যাবে।

নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, নির্দিষ্ট একটি নিয়মের উচ্চতায় প্রতি বছর হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এবারও নিয়ম অনুযায়ীই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এখন অতিরিক্ত মাত্রায় পানি বেড়ে গেলেও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো বালু ভর্তি বস্তা দিয়ে পানি ঠেকিয়ে বর্তমানে টিকে থাকা ফসল বাঁচাতে এ কাজ অব্যাহত থাকবে। আর ইতিমধ্যে যেসব কৃষকের ফসল মার গেছে সেসব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরির মাধ্যমে সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করা হবে বলেও জানান তিনি।

জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর