সোমবার, ৬ মে, ২০২৪, ঢাকা

পুড়ছে মানুষ, জ্বলছে ফসল, এ কেমন বর্ষাকাল!

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ১৭ জুলাই ২০২২, ০৩:৪৬ পিএম

শেয়ার করুন:

পুড়ছে মানুষ, জ্বলছে ফসল, এ কেমন বর্ষাকাল!
বৃষ্টির জন্য সারাদেশে হাহাকার। ছবি: ঢাকা মেইল

আষাঢ় শেষে শ্রাবণের প্রথম সপ্তাহ চলছে। এসময় বৃষ্টিমুখর থাকার কথা পুরো দেশ। মাঠে খালে-বিলে পানি থৈ-থৈ করার করার কথা। ঠিক সেই সময় দেশের আবহাওয়ার চিত্র পুরাই উল্টো। প্রায় সারাদেশের ওপর দিয়েই বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপদাহ। গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। বিশেষ করে তাপদাহে পুড়ছে উত্তরাঞ্চলের মানুষ। পানির অভাবে খাঁ-খাঁ করছে ফসলের মাঠ। তাপে জ্বলে যাচ্ছে মাঠের ফসল। ফসলের জমির মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। খাল বিল ও নদীর পানিও শুকিয়ে যাচ্ছে। পানির কারণে কৃষকের আমন ধান রোপণের সময় বিলম্ব হওয়ায় অনেকে বাধ্য হয়ে সেচ পাম্প দিয়ে আমন ধান রোপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ভরা বর্ষার মৌসুমে এ ধরনের তাপপ্রবাহ খুবই বিরল। যা সাধারণত ঘটে না। গত কয়েক দশকের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তারা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে গ্রীষ্মে তাপপ্রবাহ বদলাচ্ছে, সেই সঙ্গে বদলাচ্ছে এর প্রভাবের এলাকা। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত এ সংকট জনস্বাস্থ্য সমস্যা বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষি উৎপাদনকে ঝুঁকিতে ফেলছে।

জানা গেছে, তীব্র তাপদাহে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা। রাজশাহী রংপুর এলাকায় তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রির উপরে। সাধারণত আষাঢ় মাসের ১৫ তারিখের পর থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা আমন ধান রোপন করে থাকেন। কিন্তু এ বছর এই এলাকায় তেমন বৃষ্টিপাত নেই। প্রচণ্ড তাপদাহ তীব্র খরা আর অনাবৃষ্টিতে একদিকে জনজীবন যেমন অতিষ্ঠ তেমনি হুমকির মুখে পড়েছে জীব-বৈচিত্র্যসহ ফসলের চাষাবাদ। বৃষ্টি না হওয়ায় অনেক জমিতে সম্পূরক সেচ দিয়ে চারা বাঁচিয়ে রাখছেন কৃষক। এতে ধানের ফলন নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। আবার আষাঢ় মাসের শেষের দিক থেকে শুরু হয় পাট কাটার মৌসুম। পাট কাটতে গেলে প্রধান উপকরণ হিসেবে যেটা দরকার হয় সেটা পানি। পানি ছাড়া পাটের জাগ দেওয়া যায় না। আবার সঠিক সময়ে পাট না জাগ দিতে পারলে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন পাট চাষিরাও।

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার কৃষক বাবলু মিয়া বলেন, ‘এই সময় আমাদের পাট কাটতে হয়। পাটে জাগ দিতে হয়। নানা ব্যস্ততা থাকে। কিন্তু আকাশের যা অবস্থা তাতে দুশ্চিন্তায় আছি।’

রবিউল নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘আমন ধান রোপনের জন্য গাছি করা আছে। গাছি বড় হয়ে যাচ্ছে। এদিকে বৃষ্টি হচ্ছে না। সেচ দিয়ে আমন আবাদ করতে গেলে অনেক ভোগান্তি। খরচ অনেক বেশি পড়ে যাবে।’

দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তোফাজ্জল হোসেন জানান, গত কয়েক দিন ধরে জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে। জেলায় চলতি মাসে ১৭ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এসময় বিগত বছরে ১৫৫ থেকে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। যা অন্য বছরের তুলনায় এবছর অনেক কম। তবে জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে বৃষ্টি শুরু হয়ে তা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।


বিজ্ঞাপন


এদিকে দেশের বিভিন্ন জেলায় জেলায় বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে। দেশের উত্তরের জেলা দিনাজপুরে বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে। শনিবার (১৬ জুলাই) সকাল সাড়ে আটটায় জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলায় সেতাবগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক প্রভাষক আবু তাহের সিদ্দিকীর ইমামতিতে পৌর ঈদগাঁ মাঠে নামাজ আদায় করা হয়। এসময় বৃষ্টির জন্য বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এছাড়াও দিনাজপুর আদর্শ কলেজ মাঠে বৃষ্টির জন্য দুই রাকাত ইস্তেখারা নামাজ আদায় করেছেন দুই শতাধিক মুসল্লি। নামাজ শেষে বৃষ্টির জন্য বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন তারা।

ভরা বর্ষার মৌসুমে এ ধরনের তাপপ্রবাহ খুবই বিরল বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। বৈশ্বিক আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমনটা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।

আবহাওয়াবিদ ড. আবদুল মান্নান ঢাকা মেইলকে জানিয়েছেন, আমার মতে এই বছরে বর্ষাকালটা দুর্বল। প্রধানত দুর্বল বর্ষার কারণে এমনটা হচ্ছে। আর দুর্বল বর্ষাকাল হওয়ারও বহুবিধ কারণ রয়েছে। বঙ্গোপসাগরের মৌসুমি বায়ু খুব একটা শক্তিশালী নয়। পশ্চিমা লঘুচাপ জম্মু কাশ্মিরে মৌসুমি বায়ু দ্বারা আটকে আছে। এছাড়াও আরও বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশের পাশ্ববর্তী এলাকায় বৃষ্টিপাত হলেও। বাংলাদেশ এই সময় বৃষ্টিহীন এলাকায় পড়ে গেছে।

rrr
বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা জানিয়ে পড়া হচ্ছে বিশেষ নামাজ। ছবি: সংগৃহীত

আবহাওয়াবিদ আরও বলেন, এ ধরনের ঘটনা প্রতিবছর ঘটে না। কয়েক বছর পর একবার ঘটে। সে হিসেবে এটা একটা রেয়ার ঘটনা। এই বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের ঠান্ডাজনিত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর ফসলের ক্ষতি তো হচ্ছেই। যার প্রভাব বছরব্যাপী পড়তে পারে।

তিনি জানান, ‘দক্ষিণাঞ্চলে কিছু এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এই বৃষ্টিপাত চলমান তাপপ্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বা দমিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। তবে চলতি সপ্তাহে শেষের দিকে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, রংপুর এবং সিলেট বিভাগসহ টাঙ্গাইল, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলাসমূহের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এছাড়াও রংপুর, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল রাঙামাটিতে ২৬ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সৈয়দপুরে ৩৮ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়াও রাজধানীর তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

টিএই/এএস/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর