বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের কৃষিজমির মাত্র ৪৪.৩৭ শতাংশ টেকসই ব্যবস্থাপনার আওতায় রয়েছে। কৃষিখাতের টেকসই উন্নয়ন পরিমাপে পরিচালিত ‘উৎপাদনশীল ও টেকসই কৃষি জরিপ ২০২৫’ অনুযায়ী এই চিত্র উঠে এসেছে।
জরিপে দেখা গেছে, প্রতি হেক্টরে কৃষি উৎপাদনের আর্থিক মান বিবেচনায় মাত্র ৪৪.৩৭% কৃষিজমি টেকসইভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে নেট ফার্ম ইনকাম সূচকে তুলনামূলক আশাব্যঞ্জক চিত্র উঠে এসেছে— ৭৮.৭৯% কৃষিজমি বিগত তিন বছরে অন্তত এক বছর লাভজনকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণকারী কৃষকের হার ৬৯.১৬% হলেও প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কৃষক এখনও এই বলয়ের বাইরে; যা আর্থিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে।
বিজ্ঞাপন
এই জরিপটি বিবিএসের ‘টেকসই কৃষি পরিসংখ্যান (এসএএস)’ প্রকল্পের অধীনে ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত পরিচালিত হয়। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ২.৪.১ অনুযায়ী, উৎপাদনশীল ও টেকসই কৃষিজমির অনুপাত নিরূপণের লক্ষ্যে জরিপে সারাদেশের কৃষকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, পরিবেশগত টেকসই পরিস্থিতি এবং জমি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করাই বড় চ্যালেঞ্জ
জরিপ অনুযায়ী, দেশের ৭২.৭৫% কৃষিজমিতে মাটির অবক্ষয় লক্ষণীয়, যা কৃষি উৎপাদনের দীর্ঘমেয়াদি সক্ষমতার ক্ষেত্রে বড় বাধা। পানির প্রাপ্যতায় ৮১.৬৬% জমি ভালো অবস্থানে থাকলেও সার ব্যবস্থাপনায় টেকসই পদ্ধতি অনুসরণের হার মাত্র ৫৬.৯৫%। আর কীটনাশক ব্যবস্থাপনায় তা আরও কমে ৫১.৩৭%। তবে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সহায়ক চাষাবাদ গ্রহণের হার ৭১.০৫% হওয়াটা পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এক ইতিবাচক অগ্রগতি।
জরিপে দেখা গেছে, ৬০.১২% কৃষিজমি এমন অঞ্চলে অবস্থিত, যেখানে শ্রমিকরা কৃষি মজুরি হারের চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাচ্ছেন। খাদ্য নিরাপত্তা সূচকে সবচেয়ে ইতিবাচক তথ্য এই যে ৯৮.৮৩% কৃষক পরিবার গত বছরে কোনো খাদ্য সংকটে পড়েনি। এছাড়া জমির নিরাপদ মালিকানা অধিকার রয়েছে ৮৯.৩৫% কৃষক পরিবারের। যা কৃষি খাতের সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার একটি বড় উপাদান।
বিজ্ঞাপন
বিবিএস জরিপে দেখা গেছে, টেকসই কৃষির মধ্যে মাত্র ১.২০% জমি ‘প্রত্যাশিত’ বা ‘Desirable’ স্তরে রয়েছে এবং ৪৩.১৭% ‘Acceptable’ পর্যায়ে। ফলে দেশের কৃষি জমির ৫৫.৬৩% এখনও টেকসই পরিস্থিতির বাইরে। যা একটি গভীর উদ্বেগের কারণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষিজমির টেকসই ব্যবস্থাপনায় জোর দিতে হলে পরিবেশগত দিকগুলোর উন্নয়ন, কৃষকদের প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ, নিরাপদ কীটনাশক ও সার ব্যবস্থাপনা এবং কৃষি সহায়ক নীতিমালা আরও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
বাজারভিত্তিক টেকসই কৃষি পরিকল্পনা প্রণয়নের অভিজ্ঞতা শেয়ারিং শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে জরিপের তথ্য উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার।
বিশেষ অতিথি ছিলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুবুল হক পাটোয়ারী, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মাসুদ রানা চৌধুরী।
সভাপতিত্ব করেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
এমআই/এফএ