শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

প্রকৃতিতে নতুন প্রাণ সঞ্চারে এলো বর্ষা 

নিশীতা মিতু
প্রকাশিত: ১৫ জুন ২০২২, ০৮:৩১ এএম

শেয়ার করুন:

প্রকৃতিতে নতুন প্রাণ সঞ্চারে এলো বর্ষা 

আবহাওয়া ঠিক আগের মতোই আছে। কর্মব্যস্ত মানুষদের চোখে প্রকৃতির কোনো পরিবর্তন ধরা দেয়নি। তবে বাংলা দিনপঞ্জিকার হিসাব বলছে অন্য কথা। জানান দিচ্ছে রুক্ষ গ্রীষ্মকে পাশ কাটিয়ে আগমন ঘটেছে বর্ষার। আজ (বুধবার) আষাঢ়ের প্রথম দিন। পুষ্প-বৃক্ষে, পত্র-পল্লবে নতুন জীবন সঞ্চারের বার্তা নিয়ে এলো বর্ষা। যাকে অনেকে বরষাও বলে থাকেন। 

বাংলা সনের দ্বিতীয় ঋতু বর্ষা। আষাঢ় আর শ্রাবণ দুই মাস তার স্থায়িত্বকাল। প্রকৃতিতে সবুজ আর সতেজ করার মূলমন্ত্র নিয়ে চালাবে নিজের রাজত্ব। গ্রীষ্মের দাবদাহে জীবন যখন ওষ্ঠাগত, তখন বর্ষার ঝুম বৃষ্টি স্বস্তি হয়ে নেমে আসে। নদী-নালা, খাল-বিল ভরে ওঠে কানায় কানায়। পাখি বা মানুষের ছড়ানো বীজ মাটি ফুঁড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় বৃষ্টির নিমন্ত্রণে। গাছে গজায় নতুন পাতা। এ যেন সবুজ প্রকৃতি গড়ার এক দারুণ আয়োজন। 


বিজ্ঞাপন


rainবর্ষার প্রকৃতির কথা বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে কালো মেঘে ঢাকা আকাশ, রিমঝিম বৃষ্টি, কর্দমাক্ত পথ-ঘাট আর নতুন পানিতে পূর্ণ নদী-নালা, পুকুর। গ্রীষ্মের তাপদাহে তৃষ্ণায় কাতর বৃক্ষরাজি দিন গুণে বর্ষার। বৃষ্টির জলে ধুয়ে যায় পুরনো সব ধুলো, নতুন জীবন স্পন্দনে জেগে ওঠে তারা।

বর্ষাকে কিছুটা গ্রাম্য ঋতু বলা যায়। শহুরে জীবনে বর্ষা ভোগান্তি নিয়ে এলেও গ্রামে সে আসে আনন্দ উচ্ছ্বাসের কারণ হয়ে। দস্যি ছেলের দল বৃষ্টি জলে ভিজে, কাদা পানিতে খেলে ফুটবল। পুকুরের নতুন পানিতে লাফ দেওয়ার প্রতিযোগিতায় মত্ত হয় দামাল ছেলেরা। কেউবা আবার মাছ ধরতে ছুটে দূরের বিলে।

rainএসময় গ্রাম্য নারীদের বেশি সময় কাটে ঘরেই। কর্দমাক্ত মাটির কারণে ঘরের বাইরে খুব একটা বের হন না তারা। তাই নানা আয়োজনে অন্দরমহলে সৃষ্টি হয় উৎসবের আমেজ। বিকেলে সবজির পাকোড়া, চা কিংবা মুড়ি ভাজায় জমে উঠে আড্ডা। নকশি কাঁথায় বাহারি সুতার ফোড় তোলার সময়ও এই বর্ষা।

গায়ক থেকে কবি, কিংবা লেখক- বর্ষার রূপে মুগ্ধ হয়েছেন সবাই। নিজেদের কণ্ঠ আর লেখনিতে করেছেন বৃষ্টি বন্দনা। সতীনাথ মুখোপাধ্যায় গেয়েছেন, ‘এলো বরষা যে সহসা মনে তাই/ রিম ঝিম ঝিম, রিম ঝিম ঝিম/ গান গেয়ে যাই’। তার গানের এই দুই কলিই বর্ষা নিয়ে মানুষের মনের আনন্দের বহিঃপ্রকাশ করতে যথেষ্ট। 


বিজ্ঞাপন


rainপ্রেম আর দ্রোহের কবি নজরুল প্রেমে পড়েছিলেন বর্ষার সৌন্দর্যে। লিখেছেন- রিমঝিম রিমঝিম ঘন দেয়া বরষে/ কাজরি নাচিয়া চল, পুর-নারী হরষে/ কদম তমাল ডালে দোলনা দোলে/ কুহু পাপিয়া ময়ূর বোলে/ মনের বনের মুকুল খোলে/ নট-শ্যাম সুন্দর মেঘ পরশে।

কবি তার কবিতার ছন্দে তুলে ধরেছেন পুরো বর্ষার প্রকৃতি আর জনজীবনের চিত্র। বর্ষার সঙ্গে কদমের প্রেমটা বেশ পুরনো। যদিও বর্ষার আগে সে ফুটে তবে তার আসল সৌন্দর্য প্রকাশিত হয় বৃষ্টির রিমঝিম ধারার সঙ্গে। তাইতো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান/ আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান’ 

rainতবে কেবল কদম নয় বর্ষা কালে আরও অনেক ফুল ফোটে। বকুল, কলমি, স্পাইডার লিলি, কামিনী, জুঁই, বেলি, দোলনচাঁপা বাড়িয়ে দেয় বর্ষার সৌন্দর্য। জাতীয় ফুল শাপলা ফোটার সময়ও বর্ষা। পদ্মপুকুর ভরে ওঠে বাহারি পদ্মতে। বর্ষার ফলের তালিকায় রয়েছে করমচা, জামরুল, পেয়ারা। এসময় ডেওয়া, কাউ, গাবের মতো গ্রাম বাংলার ফলগুলোরও দেখা মেলে। 

বর্ষা নব জীবনের বার্তা নিয়ে এলেও হঠাৎ বিষাদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অতিরিক্ত বৃষ্টিতে থমকে যায় জনজীবন। রোজ খেটে খাওয়া মানুষরা হারায় কর্ম। পথের পাশে থাকা মানুষ হারায় বাসস্থান। কখনোবা বর্ষা বন্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পানির কারণে ডুবে যায় ক্ষেত, খামার, ঘর-বাড়ি। মেলে না দুমুঠো খাবার। 

rainতারপরও বর্ষা বাঙালি জীবনে নতুনের আহ্বান। সব অস্বস্তি বা কষ্ট ভুলে তাই গানের ভাষায় সবাই বলে ওঠে, ‘বরষার প্রথম দিনে/ ঘন কালো মেঘ দেখে/ আনন্দে যদি কাঁপে তোমার হৃদয়/ সেদিন তাহার সাথে করো পরিচয়।’

ছবি কৃতজ্ঞতা: তারেক মাহমুদ

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর