বায়ুদূষণ বিশ্বজুড়ে এক ভয়াবহ পরিবেশ সংকটের নাম হয়ে উঠেছে। জলবায়ু পরিবর্তন, অতিরিক্ত জনসংখ্যা, শিল্পায়ন এবং ট্রাফিক বৃদ্ধির মতো নানা কারণে অনেক শহরের বাতাস বিষাক্ত হয়ে উঠছে। দূষণের এই প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছে বিশ্বের অনেক বড় শহর। তাদের মধ্যে অন্যতম— রাজধানী ঢাকা।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকালেও ঢাকার বায়ুমান স্বাভাবিকের তুলনায় খারাপ ছিল। সকালে আন্তর্জাতিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ার প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা একিউআই স্কোর ছিল ১০০।
বিজ্ঞাপন
স্কোর অনুযায়ী, ঢাকার বাতাস সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য মাঝারি মাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ। একই সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর ছিল মিশরের রাজধানী কায়রো, যার একিউআই স্কোর ছিল ২২০। এরপরেই ছিল ভারতের দিল্লি শহর, স্কোর ১৯৯। তৃতীয় অবস্থানে পাকিস্তানের লাহোর (স্কোর ১৯২), চতুর্থ স্থানে ভিয়েতনামের হ্যানয় (স্কোর ১৫৩) এবং পঞ্চম স্থানে ভারতের কলকাতা, যাদের স্কোর ছিল ১৪৮।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একিউআই স্কোর যদি শূন্য থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকে, তাহলে সেটিকে ‘ভালো’ ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০ স্কোর ‘মাঝারি’ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই মাত্রায় সাধারণ মানুষ তেমন প্রভাব না পেলেও, শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে স্কোর হলে তা ‘সংবেদনশীলদের জন্য অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ১৫১ থেকে ২০০-এর মধ্যে হলে একে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে ধরা হয়। এই অবস্থায় বাইরে না বেরোনোর পরামর্শ দেওয়া হয়। একইভাবে ২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে স্কোর হলে তা ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত হয়। তখন শিশু, বয়স্ক ও হৃদরোগীদের ঘরের ভেতর থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আর ৩০১ থেকে ৪০০-এর মধ্যে স্কোর থাকলে তাকে বলা হয় ‘ঝুঁকিপূর্ণ’। এ সময় স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নেওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে, এবং পুরো শহরের জনগণের জন্য এটি একটি বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বিজ্ঞাপন
দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকা নিয়মিতভাবে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ঘোরাফেরা করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুদূষণ শুধু শ্বাসতন্ত্র নয়, মানুষের হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক এবং অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। তবে শুধু মাস্ক ব্যবহার বা কম সময় বাইরে থাকলেই এই সমস্যার সমাধান হবে না। বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
তাদের মতে— প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, কঠোর নিয়ন্ত্রণ এবং শহরের বাতাস বিশুদ্ধ রাখার জন্য টেকসই পরিবেশবান্ধব নীতিমালা। তবে এখনই উদ্যোগ না নিলে, ভবিষ্যতে এই দূষণ প্রাণঘাতী মাত্রায় পৌঁছে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
এইউ