বিশ্ব ধরিত্রী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বায়ু দূষণের লাগাম টেনে ধরতে হলে বাংলাদেশকে দ্রুত নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে অগ্রসর হতে হবে। তারা বলেন, ‘আমরা যেভাবে শক্তি উৎপাদন ও ব্যবহার করি, সেটাই নির্ধারণ করছে আমাদের ভবিষ্যৎ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের চিত্র।’ তাই, জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তির পথে যাত্রা করাই এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাজধানীতে ‘বিশ্ব ধরিত্রী দিবস ২০২৫: বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ‘আমাদের শক্তি, আমাদের পৃথিবী—এই মূল বার্তার আলোকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে সবুজ শক্তির ব্যবহার তিনগুণ বাড়ানোর লক্ষ্যেই আমাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত।’
বায়ু দূষণের বর্তমান বাস্তবতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি রিপোর্ট–২০২৪’ অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দূষিত দেশ এবং রাজধানী ঢাকা রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। IQAir-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১, ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে বাংলাদেশ বারবার বিশ্বের শীর্ষ দূষিত দেশগুলোর তালিকায় ছিল। শুধু ঢাকাই নয়, গাজীপুরের মতো শহরগুলোতে বায়ুতে ক্ষতিকর ধূলিকণার মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানের তুলনায় ১৮ গুণ বেশি পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, বায়ু দূষণের ফলে বাংলাদেশে প্রতিবছর লাখো মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। বিশ্ব ব্যাংকের ২০২২ সালের এক রিপোর্ট অনুসারে, ২০২১ সালে বায়ু দূষণের কারণে দেশে অন্তত ২ লাখ ৩৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সিআরইএ-এর গবেষণায় বলা হয়েছে, দূষণের কারণে প্রতিবছর শিশুসহ প্রায় ১ লাখ ২ হাজার মানুষের অকাল মৃত্যু হয়। সীসা ও অন্যান্য বিষাক্ত বস্তুকণার প্রভাবে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে হুমকির মুখে ফেলছে।
সংবাদ সম্মেলনে বায়ু দূষণ রোধে আট দফা দাবি উত্থাপন করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে— পুরনো ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ করে বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড যানবাহনের প্রচলন, পোড়ানো ইটের বদলে পরিবেশবান্ধব ব্লক ইটের ব্যবহার, বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ করে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার ধীরে ধীরে শূন্যে নামিয়ে আনা এবং নবায়নযোগ্য শক্তির গবেষণা, উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ানো।
বিজ্ঞাপন
এছাড়াও নবায়নযোগ্য শক্তিকে উৎসাহ দিতে আইনি কাঠামো তৈরি, বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতে নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ এবং গ্রাম পর্যায়ে সবুজ জ্বালানির সহজপ্রাপ্তির ওপর জোর দেওয়া হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাপা সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির। এছাড়াও দেশের পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এএসএল/এইউ