জলবায়ুর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো অনুদান চাইলে কৌশলে উন্নত দেশগুলো তাদের ঋণের জালে ফেলছে। তারা দিচ্ছে না লস অ্যান্ড ড্যামেজের অর্থও।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) গ্লোবাল ক্লাইমেট মিডিয়া নেটওয়ার্ক আয়োজিত পোস্ট কপ নিয়ে আলোচনায় বক্তারা এমন কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর ক্লাইমেট জাস্টিস বাংলাদেশের পরিচালক অ্যাডভোকেট হাফিজ খান বলেন, উন্নত দেশগুলো কার্বন নিঃসরণ না কমিয়ে কার্বন বাণিজ্যের দিকে ঝুঁকছে। তারা অর্থ দেবে না এটাই বাস্তবতা। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিভিন্ন ফান্ড থেকে অর্থ আদায় করতে পারছে না। কারণ, বাংলাদেশের দক্ষতা নেই।
তারপরও আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশের পক্ষে লড়াই করা এই নেগোশিয়েটর।
চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের চিফ এক্সিকিউটিভ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ এম জাকির হোসাইন বলেন, অনুন্নত ২০টি দেশের ওপর গবেষণায় করে দেখা গেছে ১৮ দেশই জলবায়ু অর্থায়নের নামে ঋণের ফাঁদে আটকা পড়ছে। দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে যেভাবে জলবায়ু অর্থায়নে ঋণ নেওয়া হচ্ছে, তাতে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশও ঋণের ফাঁদে পড়বে। অর্থাৎ একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে ঋণের ফাঁদে পড়ে আরও ঝুঁকি বাড়ছে অনুন্নত দেশগুলোর।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক আদিল মোহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশ যেভাবে পরিবেশ দূষণ করছে, কার্বন নিঃসরণ করছে তা কমানোর কী কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে? সেটি আমরা দেখতে পারছি না। বাংলাদেশ সরকার এটি নিয়ে তেমন কোনো কথাও বলছে না।
বিজ্ঞাপন
নদী ভাঙ্গনে যারা উদ্বাস্তু হচ্ছে, তা নিয়েও কোনো সঠিক পরিকল্পনা নেই বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ মেহেদী হাসান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় নাগরিকদের একটি পজিশন পেপার তৈরি করতে হবে। শুধু তাই নয়, গণমাধ্যমের পজিশন পেপার, যবদের পজিশন পেপার কী হবে তা নিয়েও কাজ করতে হবে।
এসব করতে না পারলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় জাতিসংঘের কাছে যে ওয়াদা করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে তা বাস্তবায়ন করা যাবে না বলে মনে করে জলবায়ু নিয়ে কাজ করা এই বিশেষজ্ঞ।
ওয়াটার কিপার অ্যালাইন্সের মেম্বার বোর্ড অব ডিরেক্টর শরীফ জামিল বলেন, কার্বন বাণিজ্যের নামে উন্নত বিশ্ব অনুন্নত দেশগুলোকে কৌশলে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছে। তারা নেট জিরোর কথা বলে কার্বন নিঃসরণ বাড়িয়েছে চলছে। স্থানীয় পর্যায়ের যে সমস্যা, তা গুরুত্ব দিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সঙ্গে যুক্ত করতে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হবে।
স্থানীয় পর্যায়ের সংকটকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।
গ্লোবাল ক্লাইমেট মিডিয়া নেটওয়ার্কের কনভেনর হাবিব রহমান বলেন, এই সংকট মোকাবিলা করতে হলে সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। এনজিও, গবেষক, তরুণদের এক প্লাটফর্মে থেকে দেন-দরবার চালিয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি।
পোস্ট কপে অংশ নিয়ে গণমাধ্যমকর্মী আশেকিন প্রিন্স বলেন, কপে শুধু অংশ নিলেই হবে না। এনজিও, পরিবেশ কর্মী, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অন্যান্য দেশের নেগোশিয়েটরদের সঙ্গে কাজের পরিধি বাড়াতে হবে।
গ্লোবাল ক্লাইমেট মিডিয়া নেটওয়ার্কের সদস্য শামীম বলেন, জ্বালানী খাত নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকেই বিশ্ব দরবারে সঠিক তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। এর মানে হয় তাদের কাছে সঠিক তথ্য নেই, নয়তো কপে যাওয়ার শতভাগ প্রস্তুতি নেই।
ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ বলেন, তরুণ শুধু জলবায়ু নিয়ে জোরালোভাবে কথা বললেই হবে না, সংকট মোকাবিলায় নতুন নতুন আবিষ্কারের দিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার।
এছাড়া গণমাধ্যমে জলবায়ু প্রতিবেদনগুলোকে আরও গুরুত্ব সহকারে প্রচার করার বিষয়ে নজর দেওয়ার তাগিদ দেন সাংবাদিকরা।
পোস্ট কপে অংশ নেন যুব জলবায়ু কর্মীরাও। তারা বলেন, তরুণদের মধ্য থেকে যারা কপে অংশ নিচ্ছে তারা যাওয়ার আগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে বা রিমোট এলাকায় কাজ করে জলবায়ু নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলছে না।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ যেসব এলাকায় তরুণরা মাঠে কাজ করে, তাদের কথা শোনারও দাবি জানান জলবায়ু কর্মীরা।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে ক্ষতি বা সংকট দেখা দিয়েছে সেই তথ্য আদান-প্রদান করে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কীভাবে কাজ করা যায় সেদিকে নজর দিতে বলেন কমিউনিকেশন নিয়ে কাজ করা তাহরিম আরিবা। তবে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার অভাবে জলবায়ু ক্ষতির প্রকৃত চিত্র বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে পারছে না অনুন্নত দেশগুলো। তাই ক্ষতিপূরণের অর্থ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই ৩০তম জলবায়ু সম্মেলনে কিভাবে এই সংকটগুলো মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া দরকার বলে মনে করেন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া বিশেষজ্ঞরা।
বিইউ/এমএইচটি