বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

উৎপাদন বাড়াতে খাদ্যকে অনিরাপদ করা যাবে না: মৎস্য উপদেষ্টা

ঢাকা মেইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২৭ পিএম

শেয়ার করুন:

উৎপাদন বাড়াতে খাদ্যকে অনিরাপদ করা যাবে না: মৎস্য উপদেষ্টা

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, উৎপাদন বাড়াতে সরকার চেষ্টা করছে। কিন্তু উৎপাদন বাড়াতে খাদ্যকে অনিরাপদ করা যাবে না। কীটনাশকের ব্যবহার করে খাদ্যের পুষ্টিগুণ নষ্ট করা যাবে না। মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তা কিংবা সুস্থ থাকা খুবই জরুরি।

রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে কক্সবাজারস্থ সায়মন বিচ রিসোর্টে জেলা পর্যায়ে বহুখাতভিত্তিক পুষ্টিসেবা বাস্তবায়নের সুযোগ, অভিজ্ঞতা ও প্রতিবন্ধকতা বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।


বিজ্ঞাপন


উপদেষ্টা আরও বলেন, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় বাধা শিল্পকারখানার দূষণ। নদী-সমুদ্রেও দূষণ হচ্ছে। মাছের মধ্যেও মাইক্রো প্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে। অনেকে এখন জিঙ্কসমৃদ্ধ চালের কথা বলছেন। কিন্তু কারণ এটা ওভারডোজ। জিঙ্ক ঘাটতি আছে কি না তা না দেখে এই চাল খাওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত। গোল্ডেন রাইসের বিরোধিতা করছি। আমাদের জিঙ্কের ঘাটতি পূরণে অনেক খাবার আছে। সেগুলোর উৎপাদন বাড়াতে হবে। পুষ্টি সচেতনতার লক্ষ্যে তৃণমূল পর্যায়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

ফরিদা আখতার বলেন, পুষ্টি মৌলিক অধিকার। এই অধিকার নিশ্চিত করতে সবাইকে এক সুরে এক হয়ে কাজ করতে হবে। সব দপ্তর ও সংস্থাকে একীভূত করে পুষ্টি সুরক্ষায় সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।  মৎস্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় যোগানদাতা হিসেবে আছে। কিন্তু উৎপাদন বাড়াতে কীটনাশক দিয়ে ক্ষতি করছি। দেশীয় মাছকে গুরুত্ব না দিয়ে চাষের মাছকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ফিড নিরাপদ না মাছ নিরাপদ তা নিয়েও মাঝে মাঝে দ্বিধায় পড়তে হয়। গরুকে ঘাস খাওয়ানোর কথা, অথচ গরুকে অন্য কিছু খাওয়ানো হচ্ছে। মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তা কিংবা সুস্থ থাকা খুবই জরুরি। আমরা দেশীয় মাছ বাড়ানোর দিকে বেশি জোর দিচ্ছি। কারণ আমাদের দেশে প্রচুর বৈচিত্র্য আছে। একেক এলাকায় একেক রকম প্রাণিসম্পদ আছে, সবগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে।

পুষ্টি সচেতনতা বাড়াতে মেয়েদের ক্ষমতায়নের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, দেশের গর্ভবতী নারীদের প্রায় অর্ধেক রক্তস্বল্পতায় ভোগেন। নারীর অধিকারহীনতা ও নারীর অপুষ্টি একসুতায় গাঁথা। আগামী প্রজন্মের স্বার্থে নারী-পুরুষ দুজনকেই সচেতন করতে হবে। তবে নারীরাই মুখ্য। নারী ক্ষমতায়ন হলে নারী রুখে দাঁড়াতে পারে।

সমকালের অনলাইন ইনচার্জ গৌতম মণ্ডলের সঞ্চালনায় এবং নিউট্রেশন ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর সায়কা সিরাজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএনএনসি মহাপরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, বিএনএনসির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. আনজুমান আরা সুলতানা, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ) প্রিম রিজভী, মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক (উপসচিব) মো. মনির হোসাইন, আমান প্রকল্পের সুবিধাভোগী শিক্ষার্থী টুম্পা মনি, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রুবাইয়া আফরোজ, কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. আসিফ আহমেদ হাওলাদার, এএইচ৩৬০ এর কান্ট্রি ম্যানেজার জেবা মাহমুদ, ব্র্যাক স্বাস্থ্য কর্মসূচির সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার সাইহা মার্জিয়া, কক্সবাজারের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ এম খালেকুজ্জামান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলার উপপরিচালক  ড. বিমল কুমার প্রামাণিক, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ডা. মহসিন আলী। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নিউট্রেশন ইন্টারন্যাশনালের ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ম্যানেজার ইফতিয়া জেরিন প্রমুখ।


বিজ্ঞাপন


এদিকে, বিকেলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা কক্সবাজার জেলায় শুটকি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন ( ১ম সংশোধিত) প্রকল্প পরিদর্শন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সুরাইয়া আখতার জাহান, প্রকল্প পরিচালক মো. শামসুজ্জামান। এসময় জানানো হয় প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য কার্যাবলীর মধ্যে রয়েছে দুই হাজার ৫০০ বর্গমিটারবিশিষ্ট অবতরণ শেড নির্মাণ; এক হাজার ৮৬০ বর্গমিটারবিশিষ্ট (৪ তলা) ল্যাব, অফিস, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কাম ডরমেটরি নির্মাণ; ১০০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন কোল্ড স্টোরেজ (২ চেম্বারবিশিষ্ট) নির্মাণ; ২টি ওয়ে ব্রিজ তৈরি করা; ৩৫০টি গ্রিন হাউজ এবং ৩০টি মেকানিক্যাল ড্রায়ার স্থাপন; ৩৬টি শুটকি বিক্রয় কেন্দ্র নির্মাণ; ১০টি ব্রেস্ট ফিডিং রুমসহ রেস্ট রুম নির্মাণ; ইটিপি, এসটিপি ও ডাব্লিউটিপি নির্মাণ; বৈদ্যুতিক সাব ষ্টেশন স্থাপন। এরপর উপদেষ্টা ‘Improvement of Fish Landing Center of Bangladesh Fisheries Development Corporation in Cox's Bazar District’ প্রকল্পের বিভিন্ন সাইড পরিদর্শন করেন।

এসময় জানানো হয় প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য কার্যাবলীর মধ্যে রয়েছে Construction Period-এ মাছ অবতরণের জন্য ১৪৫৭.৩ বর্গমিটার অস্থায়ী শেড নির্মাণ (ইস্পাত কাঠামো); ৩ তলা বিশিষ্ট ৬১৪৯,০০ বর্গমিটার ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টার ভবন নির্মাণ; ব্যবসায়ীদের জন্য ১৯৫.০০ বর্গমিটার অফিস ভবন নির্মাণ; ২টি পন্টুন-গ্যাংওয়ে স্থাপন; ৩১৭৬.৬৯ বর্গমিটার পাড় সংরক্ষণ দেয়াল নির্মাণ; ৭১৪.৬০ বর্গমিটার মৎস্য বাজার ও প্রার্থনা কক্ষ নির্মাণ; সীমানা প্রাচীর নির্মাণ; বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও মাছ ধরার সরঞ্জামাদি ক্রয়। এসময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার সাথে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সুরাইয়া আখতার জাহান, প্রকল্প পরিচালক মো. রাজিবুল আলম প্রমুখ।

এমএইচটি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর