বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

শেষ হয়নি অর্থায়ন নিয়ে কষাকষি, বাড়তে পারে কপের সময়

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০০ এএম

শেয়ার করুন:

শেষ হয়নি অর্থায়ন নিয়ে কষাকষি, বাড়তে পারে কপের সময়

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ নিয়ে এখনো আসেনি চূড়ান্ত ঘোষণা। এদিকে বেশ কয়েকটি সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর প্রাপ্য জলবায়ু ফান্ডের অর্থ ছাড় দেয়া নিয়ে বিশ্বমোড়লদের চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের (কপ২৯) শেষ বেলায় এসেও বিক্ষোভ করছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশও চেয়েছে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।

অন্যদিকে আর্থিক বিষয় নিয়ে দরকষাকষি চলার মাঝেই শোনা যাচ্ছে কপ-২৯ এর সময় বাড়তে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত মেয়াদ না বাড়লে শুক্রবার (২২ নভেম্বর) পর্দা নামবে কপের।


বিজ্ঞাপন


প্লানেট নিয়ে কাজ করা পরিবেশবাদী কোরিয়ান সংগঠন কে-গ্রিন ফাউন্ডেশন, আফ্রিকার কয়কটি দেশের বিভিন্ন সংগঠন ও গ্রিন ওয়ার্ল্ড নিয়ে কাজ করা আজারবাইজানের পরিবেশবাদী সংগঠন ইরাসমাস স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক রয়েছে।

আজারবাইজানের সংগঠনটির দাবি, গ্রিন ওয়ার্ল্ড গড়তে অবশ্যই ফান্ড ছাড়ের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে এই সুন্দর পৃথিবী অবশ্যই ধ্বংসের দিকে ধাবিত হবে।

আর ২০০২ সাল থেকে প্লানেট নিয়ে কাজ করা কোরিয়ান সংগঠনটির দাবি, বাকু সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য দ্রুত ফান্ড ছাড়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ফান্ড ছাড়ে বড় বাধা হলো যুক্তরাষ্ট্র। অথচ বড় বড় দেশগুলো বাতাসে সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড ছাড়ছে। বিক্ষোভে কার্বন ডাই অক্সাইড ছাড়া বন্ধেরও দাবিও জানান সংগঠনটি। 

কে-ফাউন্ডেশনের দাবি, জলবায়ুর অর্থ আমাদের ভবিষ্যৎ চলার পথ। সুতরাং ফান্ডের অর্থ সবাইকে বিলিয়ে দাও।


বিজ্ঞাপন


প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের অধীনে সবচেয়ে বড় আয়োজন এই জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন গত ১১ নভেম্বর আজারাবাইজানের রাজধানী বাকুতে শুরু হয়েছে। শেষ সময় সম্মেলের মেয়াদ না বাড়ার ঘোষণা আসলে আগামী ২২ নভেম্বর সমাপনী ভাষণের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘটবে। তবে এই সম্মেলনের সফলতা কতটুকু আসবে তা নিয়ে এখনো সংশয় রয়েছে।

অন্যদিকে, ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনের তিন-চতুর্থাংশের জন্য দায়ী। ফলে আশা ছিল এ সম্মেলন থেকে অর্থায়নের ইতিবাচক বার্তা আসবে। কিন্তু ধরিত্রী রক্ষায় প্রয়োজনীয় অর্থায়ন ও পদ্ধতি নিয়ে উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের টানাটানির অবসান কিভাবে ঘটবে, এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

জলবায়ু ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মহলকে পাশে চায় বাংলাদেশ 

এদিকে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সক্ষমতা কম থাকায় আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান। 

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশে হওয়া ক্ষতির পূরণে পর্যাপ্ত অর্থ পাওয়া যায় না, তাই অনুদান সহায়তা দরকার। গতকাল বুধবার বাকুতে কপ সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান তিনি। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করারও আহ্বান জানান।

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান নিউ কালেক্টিভ কোয়ান্টিফায়েড গোলের (এনসিকিউজি) আওতায় পর্যাপ্ত ও মানসম্পন্ন জলবায়ু অর্থায়নের ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

উপদেষ্টা ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতি, অনুদানভিত্তিক অর্থায়ন এবং স্বল্প সুদের ঋণের প্রস্তাব করেন।

সরকারি অর্থায়নকে প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি বলেন, অন্তত ২০ শতাংশ অর্থায়ন ইউএনএফসিসির (গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড, অ্যাডাপটেশন ফান্ড) মাধ্যমে হওয়া উচিত এবং জলবায়ু অর্থায়নের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান কপ২৯ সম্মেলনে জানান, ২০২৩ সালের অ্যাডাপটেশন ফান্ড গ্যাপ রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর ৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার অভিযোজন প্রয়োজন। তবে দেশীয় উৎস থেকে মাত্র ৩ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ হচ্ছে, ফলে ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি রয়েছে।

‘ক্ষয়-ক্ষতিপূরণ তহবিল এবং এনসিকিউজির অগ্রগতির ধীরগতি এবং প্রধান দূষণকারী দেশগুলোর উদ্যোগের অভাবে জলবায়ু অর্থায়ন পিছিয়ে রয়েছে,’ বলেন তিনি।

এছাড়া তিনি ওয়ারশ আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ার পর্যালোচনার স্থবিরতা এবং প্রশমন কর্মসূচির অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি উন্নত দেশগুলোকে তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

গ্লোবাল স্টকটেকের (জিএসটি) ফলাফলের ভিত্তিতে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই জ্বালানি অর্জনে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতা তিনগুণ এবং জ্বালানি দক্ষতা দ্বিগুণ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন রিজওয়ানা হাসান।

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য অর্জন করতে প্রস্তুত। তবে এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন— পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ফারজানা মমতাজ, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুল হামিদ এবং পররাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বিইউ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর