গত আগস্টে বাংলাদেশের ফেনীসহ এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বন্যার ভয়াবহতার দৃশ্য চিত্রায়ন হয়েছে জলবায়ু সম্মেলনে। আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে এবারের কপ-২৯ এ স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত নারী-পুরুষ, শিশুদের উদ্ধার কাজে বিড়ম্বনা, ঝুঁকি মাথায় নিয়ে তরুণদের কাজ করার দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে।
রাষ্ট্রপ্রধানসহ বিশ্বের ১৮০ দেশের মন্ত্রী, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি এনজি প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে এই সম্মেলন হচ্ছে। প্রায় ৮০ হাজার প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন কপ-২৯ এ।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (১৬ নভেম্বর) আজারবাইজানের বাকুতে জলবায়ু সম্মেলনের 'ওয়াটার ফর ক্লাইমেট' প্যাভিলিয়নে আয়োজিত বিশ্ব সংলাপে ফেনীর বন্যার ভিডিও প্রচারিত হয়।
যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে মিশন গ্রিন বাংলাদেশ (এমজিবি), ইয়ুথ প্লাটফর্ম ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট (ওয়াইপিএসডি), বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), ন্যাচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (ন্যাকম) ও চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ।
আশপাশের একাধিক জেলায় বন্যা হলেও এই বন্যায় ফেনী বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শুধু ফেনী জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, বন্যায় আট হাজার ৯৫টি কাঁচাঘর, ২৫০টি আধাপাকা ঘর সম্পূর্ণ ধসে যায়। এতে আনুমানিক ক্ষতি হয়েছে ১৬৩ কোটি ১১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ৫৩ হাজার ৪৩৩টি কাঁচাঘর এবং দুই হাজার ৬৩২টি আধাপাকা ঘরের আংশিক ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ৩৭০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সবমিলিয়ে ৬৪ হাজার ৪১৫টি ঘরবাড়িতে মোট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৫৩৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
বিজ্ঞাপন
অভিযোগ আছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে শুরু থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগ, বিভিন্ন এনজিও এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ব্যাপকভাবে কাজ করেছে। অপর দিকে সরকারের তরফ থেকে খুব বেশি উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যদিও সরকারের ত্রাণ তহবিল বা টিএসসির গণত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রম বেশ সাড়া ফেললেও এখনো পুনর্বাসনের খুব একটা তৎপরতা চোখে পড়েনি।
আরও পড়ুন
পৃথিবীকে বাঁচাতে নতুন সভ্যতা গড়ার বার্তা ড. ইউনূসের
জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা চাইলেন ড. ইউনূস
ক্যাপসের চেয়ারম্যান ড. আহমেদ কামারুজ্জামান মজুমদারের সভাপতিত্ব ও তরুণ জলবায়ুকর্মী ফারিয়া অমির সঞ্চালনায় এই সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের (ন্যাকম) নির্বাহী পরিচালক ও বাংলাদেশ সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. মনজুরুল হান্নান খান। মূল প্রবন্ধে তিনি আগস্টের বন্যার ভয়াবহতা, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও তরুণদের তৎপরতার চিত্র তুলে ধরেন।
সংলাপে প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসাইন খান, ওয়াটারকিপার্স সেনেগালের সমন্বয়ক এম্ব্যাক স্যাক, ক্লাইমেট ফরোয়ার্ড পাকিস্তানের শিশু ও যুব বিষয়ক উপদেষ্টামণ্ডলীর চেয়ারপারসন মাহনুর রশিদ, ইয়ুথ প্লাটফর্ম ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট- ওয়াইপিএসডি'র প্রধান সমন্বয়ক সাইদুল ইসলাম, জাতিসংঘ জলবায়ু কর্মসূচির পানি ও জলবায়ু গবেষক আসিফ ইকবাল, ওয়াটার এইডের প্রোগ্রাম আন্ড পলিসি এডভোকেসি ডিরেক্টর পার্থ হেফাজ শেখ এবং মিশন গ্রীন বাংলাদেশের পরিচালক কেফায়েত শাকিল, আইক্যাড এর যুব প্রতিনিধি আল মামুন রাকিব ও ফুটস্টেফ ফাউন্ডেশনের সভাপতি শাহ রেফায়েত চৌধুরী।
ফেনীর বন্যার সরাসরি ভুক্তভোগী এবং অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের একজন কেফায়েত শাকিল নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ২০২৪ এর আগস্টে ফেনীর বন্যার ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে আমি অন্যতম একজন। বন্যায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ক্ষতিপূরণ পাইনি, কবে পাবো জানিও না। আমি মনে করি তরুণরা আমাদের তাৎক্ষণিক যে সহায়তা করেছে সেটিই আমাদের একমাত্র পাওয়া। তাই তরুণদের আরও সক্ষম করা, বিশেষ করে জল ও বায়ুর ন্যায্যতা নিশ্চিতে তরুণদের ক্ষমতায়ন প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
বিইউ/জেবি