রোববার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

প্রবেশ ফি পাঁচগুণ বৃদ্ধি, ঢাকার দুই উদ্যানে দর্শনার্থীর ভাটা

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৯:৩৭ পিএম

শেয়ার করুন:

প্রবেশ ফি পাঁচগুণ বৃদ্ধি, ঢাকার দুই উদ্যানে দর্শনার্থীর ভাটা

এক লাফে দর্শনার্থী প্রবেশ ফি পাঁচগুণ বাড়ানো নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে আলোচনায় ঢাকার মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান (বোটানিক্যাল গার্ডেন) ও পুরান ঢাকার বলদা গার্ডেন। ২০ টাকা থেকে ১০০ টাকা ফি হওয়ার কারণে কমতে শুরু করেছে দর্শনার্থী। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) নতুন প্রবেশ ফি কার্যকর হওয়ার দিনে দর্শনার্থীদের ভাটা দেখা গেছে বলে জানা গেছে।

এদিন দুপুরের পরে পুরো ফাঁকা হয়ে যায় উদ্যোন। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, সকাল থেকে ঝুম বৃষ্টি ও এইচএসসি পরীক্ষার কারণে অন্যদিনের তুলনায় কম মানুষ উদ্যানে এসেছে।


বিজ্ঞাপন


এদিকে তিন কোটি টাকার বেশি দিয়ে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান ইজারা নেওয়া লোকজনও ১০০ টাকা প্রবেশ ফি করায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকরের প্রথম দিন অল্পসংখ্যক দর্শনার্থী দেখে তারা ভবিষ্যতে নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন বলে জানিয়েছেন।

আগে এই দুই উদ্যানে (বোটানিক্যাল গার্ডেন ও বলদা গার্ডেন) সকালে শরীরচর্চার জন্য প্রবেশে কোনো ফি দিতে হতো না। কিন্তু এখন থেকে নির্ধারিত ফি দিয়ে বাৎসরিক প্রবেশ কার্ড করে ঢুকতে হবে পার্কে। থাকা যাবে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত। প্রাতঃভ্রমণের জন্য সময়ও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা এবং এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত উদ্যানে থাকতে করতে পারবেন এই কার্ডধারীরা।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বন অধিশাখা-১ থেকে গত ২১ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপনে ফি বাড়ানোর এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, ১২ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে জনপ্রতি ১০০ টাকা প্রবেশ ফি দিতে হবে। আর এর চেয়ে কম বয়সীদের জন্য প্রবেশে ফি হবে ৫০ টাকা। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এমন টাকা বাড়ানোর ঘটনাকে অযৌক্তিক বলছেন সাধারণ মানুষ।


বিজ্ঞাপন


বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন খোদ বন, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। একই সঙ্গে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, এখানে একটা রাজস্ব চাহিদা আছে। তবে এত বাড়ানো উচিত নয় বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। এটা অযৌক্তিক।

এদিকে নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকরের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার দর্শনার্থীর অবস্থা জানতে বোটানিক্যাল গার্ডেনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওয়াহিদুর রহমানে ঢাকা মেইলকে বলেন, লোক কম আসছে, এটা ঠিক। তবে আগে ১০ জন আসলে যা হতো, এখন ৫ জন আসলে তার চেয়ে বেশি ফি উঠবে। ইজারাদারদের তো ক্ষতি হবে না।

বন্ধের দিনগুলোতে কেমন আর অন্যদিন কেমন দর্শনার্থী আসেন— জানতে চাইলে তিনি বলেন, কম করে হলেও ৫শর বেশি মানুষ আসেন প্রতিদিন। ছুটির দিনে এক হাজারেরও বেশি হয়। আজকে একদিকে ছুটি, আরেকদিকে পরীক্ষা ছিল। লোকজন তাই এমনতিও কম।

জানা গেছে, বোটানিক্যাল গার্ডেন ইজারা নিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম নামে একজন। মিরপুরের স্থানীয় জাহাঙ্গীর এর আগেও ইজারাদার ছিলেন। ৩ কোটি ৭ লাখ টাকায় ইজারা নেওয়ার পাশাপাশি ভ্যাট-ট্যাক্স বাবদ আরও টাকা গুনতে হয়েছে তাকে। চড়া প্রবেশ ফির কারণে দর্শনার্থী কমলে এত টাকা তুলতে পারবেন কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তা।

ইজারাদার মেসার্স সাগর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হঠাৎ করে প্রবেশ ফি বেড়ে যাওয়ায় সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের প্রবেশ নেই বললেই চলে। মানুষের মধ্যে বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় আরও কমেছে।

২০ টাকার টিকিট ৪০ টাকা করা হলে সেটা যৌক্তিক হতো বলে মনে করেন তিনি। তবে কিছুদিন যাওয়ার পর পরিস্থিতি কেমন হয় সেটা বোঝা যাবে বলে জানান জাহাঙ্গীর আলম।

এদিকে মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী প্রবেশ ফি একসঙ্গে এত বাড়ানোর বিষয়টিতে অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করায় গুঞ্জন শুরু হয়েছে, তাহলে কি টাকা কমবে? যদিও বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপরই অনেকটা নির্ভর করে। কারণ নতুন অর্থবছরে পাস হওয়া বাজেটে অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও থিম পার্ক সেবার ক্ষেত্রে কর বাড়ানো হয়েছে। এর আলোকেই ফি বাড়িয়ে নতুন এই প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

Botanical-Baldha_Garden--Inner_1

বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়া হলেও মূলত নির্দেশনা তো এসেছে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে। এখন সামনে কি এটা কমবে না এমনই থাকবে তা অনেকটা ওই মন্ত্রণালয়ের ওপরও নির্ভর করছে। আমাদের মন্ত্রী তো বলেই দিয়েছেন এটা অযৌক্তিক হয়েছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দুই একদিনের মধ্যে মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী দেশের বাইরে যাবেন। বেশ কিছুদিন পর ফিরবেন। ফলে উদ্যানে প্রবেশ ফি কমবে কিনা তা এখনই বলা মুশকিল।

এ ব্যাপারে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, মিরপুর, ঢাকার বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা সোহেলা সরকার বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে প্রবেশ ফি বাড়ানো হয়েছে। আমরা শুধু এটা বাস্তবায়ন করছি। তবে কয়েকদিন গেলে বোঝা যাবে যে এটার প্রভাব কেমন পড়েছে। তবে আজকে বৃষ্টির কারণেও লোকজন কম এসেছে।

অন্যদিকে বলদা গার্ডেনের পরিস্থিতি জানতে সেখানকার কিউরেটার তাসলিমা খাতুনের সঙ্গে কথা বলতে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিয়মিত বিকেলে হাঁটতে যাওয়া ওয়ারীর একজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, অন্যদিনের তুলনায় বলদা গার্ডেনে অনেক লোক কম দেখা গেছে। স্থানীয়দের মধ্যে যারা টিকেট ছাড়াই প্রবেশ করতেন তাদেরও কম দেখা গেছে। অনেকে না ঢুকে ফিরেও গিয়েছেন।

বিইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর