চলতি বছরে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং চাষিদের অক্লান্ত পরিশ্রমে পঞ্চগড়ে টমেটো ও বাদামের আবাদ খুব ভালো হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ যেন দুঃস্বপ্ন হয়ে আসে কৃষকের ঘরে।
সম্প্রতি বৃষ্টির প্রভাব ও জলাবদ্ধতায় পঞ্চগড়ে টমেটো ও বাদাম চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। যদিও তারা জানিয়েছেন, এ বছর টমেটো ও বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
অসময়ের বৃষ্টিতে জলবদ্ধতায় টমেটোতে কালচে দাগ ও পচন দেখা দিয়েছে। পানি জমে থাকায় গাছ ঝিমিয়ে গিয়ে মরে যাচ্ছে। চাষিরা বলছেন এবার বীজ, সার ও কীটনাশকের কারণে খরচ বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতির শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
জানা গেছে, এক বিঘা জমি প্রস্তুত, চারা রোপণ, কীটনাশক প্রয়োগ ও শ্রমিকের মজুরিসহ কৃষকের প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর লিজের জমি হলে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় দ্বিগুণ। আবহাওয়া ভালো থাকলে প্রতি বিঘায় দেড় থেকে ২০০ মণ টমেটো বিক্রির আশা ছিল কৃষকদের।
এদিকে, বৃষ্টির কারণে টমেটোর গায়ে ছোট ছোট কালচে দাগের পাশাপাশি পচন দেখা দিয়েছে। যার কারণে এখন দামও কম পাচ্ছেন কৃষকরা। বর্তমানে পাইকারি বাজারে টমেটো ১২ থেকে ১৬ টাকা কেজি ও ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এবছর পঞ্চগড়ে ৯৩৫ হেক্টর জমিতে টমোটো ও আট হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে বাদামের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে পঞ্চগড় সদর উপজেলায়।
বিজ্ঞাপন
পঞ্চগড় বিভিন্ন এলাকায় নিম্নাঞ্চলের উঠতি ফসলের মাঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আকস্মিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জমির টমেটো ও বাদামসহ রবি শস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
সরেজমিনে সদর উপজেলার কামাতপাড়া, বোয়ালমারী ও গলেহা পাড়া এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, মাঠজুড়ে রয়েছে টমেটোর ক্ষেত। গাছে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে কাঁচা-পাকা টমেটো। এর মধ্যে সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় অনেক টমেটো গাছ ঝিমিয়ে গিয়ে মারা যাচ্ছে। কৃষকেরা ক্ষেত থেকে পচা টমেটো ফেলে গাছ থেকে পাকা টমেটো ছিড়ে ঝুঁড়িতে রাখছেন।
পুরুষের পাশাপাশি বাড়ির নারীরাও টমেটো তোলার কাজ করছে। এরপর সেই টমোটোর ঝুড়ি মাথায় করে মাঠ থেকে নিয়ে বস্তায় ভরছেন। পরে সেখান থেকে ভ্যানে করে নেওয়া হচ্ছে টমেটোর আড়তে।
এদিকে, অশনির প্রভাবে কয়েক দিনের বৃষ্টিতে পঞ্চগড় সদর উপজেলায় টমেটো, বাদাম, বোরো ধান, মরিচ, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জমিতেগুলোতে জলাবদ্ধতার কারণে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। বিঘাকে বিঘা জমির ফসল নষ্ট হওয়ায় কৃষকের লাখ লাখ টাকা ক্ষতির মুখে পড়ছে।
এবছর পঞ্চগড়ের আবহাওয়া ভালো হওয়ায় টমেটোর আবাদও বেশ ভালো হয়েছে। এর মধ্যে জেলার সদর উপজেলায় বেশি টমেটোর আবাদ হয়। মৌসুমের এই সময়টাতে ভালো দাম পাওয়ায় যায়। জেলার উৎপাদিত এই টমেটো ব্যাপারিদের মাধ্যমে ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রফতানি করা হচ্ছে।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার ৪নং কামাতপাড়া গ্রামের শফিউল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় ৬০ শতক জমিতে কষ্ট করে টমেটো চাষ করেছি। প্রথমবার টমেটো কিছু বিক্রি করলেও অসময়ে বৃষ্টির কারণে গাছ ঝিমিয়ে মরে যাচ্ছে। যদি এই জলাবদ্ধতা না হতো তাহলে দেড় লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু লাভ তো দূরের কথা,বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।
একই গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, এবছর দুই বিঘা জমিতে বাদাম করছি। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষেতে পানি জমে বাদাম ডুবে গেছে। ফলে যে পরিমাণ লাভের আশা করেছিলাম তা আর হবে না।
এই কৃষক বলেন, এখন ১৫ থেকে ১৬ টাকা কেজি দরে টমেটো বিক্রি হচ্ছে। নিজের জমি হলে সব মিলিয়ে প্রতি বিঘায় ৩৫-৪০ হাজার টাকা খরচ হয়।
চাষি অলিয়ার রহমান বলেন, বাদাম লাভজনক ফসল। প্রতি বছরই আগাম জাতের বাদাম আবাদ করি। বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কারণে বাদাম পরিপক্ব হওয়ার আগে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কী করবো ভেবে পাচ্ছি না। ফসল তুলতে না পেরে তাদের বড় ক্ষতি হয়ে গেছে।
আরেক চাষি আশকার আলী বলেন, এই সময়টাতে বৃষ্টির কারণে পানির নিচে বাদাম তলিয়ে গেছে। এখন গাছের বাদাম পরিপক্ব না হওয়ায় তা তুলতে পারছেন চাষিরা। এতে আমার মতো অনেক কৃষক নিঃস্ব হয়ে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, এবছর জেলায় টমেটো ও টমেটোর আবাদ ভালো হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় অশনির কারণে বৃষ্টি হওয়ায় জলাবদ্ধতা টমেটো ও বাদামের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে কৃষকদের। আমরা ইউনিয়ন উপসহকারী কর্তাকর্তাদের মাঠ পরিদর্শন করে কৃষকদের সঠিক পরামর্শ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
প্রতিনিধি/জেবি