শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

বৃষ্টিতে ধান ঘরে তুলতে সীমাহীন দুর্ভোগে কৃষক

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৫ মে ২০২২, ০৮:৩৩ পিএম

শেয়ার করুন:

বৃষ্টিতে ধান ঘরে তুলতে সীমাহীন দুর্ভোগে কৃষক
বৃষ্টিতে ভিজে ধান তুলছেন ময়মনসিংহের ভালুকার কৃষকরা। ছবি: ঢাকা মেইল

নাজির মিয়া (৪৫) বৃষ্টির মধ্যে শ্রমিক নিয়ে ধান কেটে পড়েছেন বিড়ম্বনায়। তার মতো, জুলহাস, আমির মিয়া, খালেক সবাই ব্যস্ত ধান ঘরে উঠাতে। ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার কাচিনা উইনিয়নের এই কৃষকরা বৃষ্টি উপেক্ষা করে ধান কাটছেন। শ্রমিকদের বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে ধান কাটতে দেখা গেছে। ধানের ভেজা আঁটি তারা টেনে তুলছেন ক্ষেত থেকে। সেই ভেজা আঁটির ধান নিয়ে যাচ্ছেন বাড়ির আঙিনায়। যাদের বাড়ি একটু দূরে তারা অটো ভ্যানে তুলছেন সেই ভেজা আঁটি।

মো. আব্দুল হক তার ১২ কাটা জমির ধান কেটেছেন শ্রমিকের মজুরি লেগেছে আট হাজার ৫০০ টাকা। সেই সাথে ধান মাড়াইয়ে লেগেছে ২৫০০ টাকা। তিনি বলেন, ‘শ্রমিকের যে দাম, আবার বৃষ্টিতে ধানও নষ্ট হওয়ার পথে। প্রতিদিনই বৃষ্টি হয়, পাকা ধান না কেটে কোনো উপায় নেই।’


বিজ্ঞাপন


মল্লিকবাড়ি, ইউনিয়নের সোনাখালি গ্রামেও দেখা যায় বৃষ্টির মধ্যেই মানুষের ধান কাটার হিড়িক। শুধু ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামেই নয়, দেশের সমতলের অনেক এলাকার ধান কাটা হচ্ছে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই। কেউ ভিজে ভিজেই কাটছেন সোনার ফসল।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮ লাখ ৭৩ হাজার হেক্টর। এর বিপরীতে বোরো আবাদ হয়েছে ৪৯ লাখ ৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে। এ বছর ১২ লাখ ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতীয় বোরো ধানের আবাদ হওয়ার কথা থাকলেও আবাদ হয়েছে ১৩ লাখ ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে। ৩৬ লাখ ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে উফশী (উচ্চ ফলনশীল) জাতীয় বোরো ধানের আবাদ হওয়ার কথা থাকলেও আবাদ হয়েছে ৩৬ লাখ ১১ হাজার হেক্টর জমিতে। আর ২০ হাজার হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের ধানের আবাদ হওয়ার কথা থাকলেও আবাদ হয়েছে ২১ হাজার হেক্টর জমিতে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ মৌসুমে বোরো আবাদ হয়েছে ৪৯ লাখ ৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে। এর আগের বছর ২০২০-২১ মৌসুমে আবাদ হয়েছিল ৪৮ লাখ ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে। তার আগের মৌসুম ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৭ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে, ২০১৮-১৯ মৌসুমে ৪৯ লাখ ৯ হাজার হেক্টর জমিতে এবং ২০১৭-১৮ মৌসুমে বোরোর আবাদ হয়েছিল ৪৯ লাখ হেক্টর জমিতে। সারাদেশে ৬০ শতাংশের বেশি ধান কাটা শেষ হয়েছে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।

এদিকে, দেশের অনেক এলাকায় এখনও বৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে কারও ক্ষেতে হাঁটু পানি, কারও ক্ষেতে কোমর পানি। বিশেষ করে দেশের উত্তরের জেলাগুলোতে কৃষকদের দুর্ভোগ চরমে। কুড়িগ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। তবে বৃষ্টির পানিতে বোরো ধান ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। জেলার নিম্নাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানের পাকা ও আধা পাকা ধান বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তাড়াহুড়ো করে কেটে তুলছেন তারা। শ্রমিক সংকটের কারণে নিরুপায় হয়ে পরিবারের ছোট বড় সবাই মিলে পানিতে নেমে বোরো ধান কাটছেন। পরে তা নৌকায় করে নিয়ে রাখছেন উঁচু স্থানে।


বিজ্ঞাপন


kk

কুড়িগ্রামের সদর উপজেলা, রাজারহাট কয়েকটি গ্রামে বৃষ্টিতে ধানক্ষেতে হাঁটু পানির উপরে। টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় কু‌ড়িগ্রা‌মের রৌমারী উপজেলার মাদাইডাঙ্গা বিল পানিতে টইটুম্বুর। হাজার হেক্টরেরও বে‌শি আয়ত‌নের এ বি‌লে আবাদ করা বো‌রো ধান নি‌য়ে বিপা‌কে প‌ড়ে‌ছেন কৃষকরা।

স্থানীয় একাধিক কৃষক জানান, মাদাইডাঙ্গা বিলের কিছু অং‌শে মাছের ঘের থাকলেও বেশিরভাগ জমিতে চাষ করা হয়েছে বোরা ধান। বৃষ্টির পানিতে বিলের অনেক জায়গায় বোরো ক্ষেত ডুবে গেছে। অনেকে বাধ্য হ‌য়ে ডুবন্ত ধান কে‌টে নেওয়ার চেষ্টা কর‌ছেন।

সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন মিয়া বলেছেন, টানা বৃষ্টির কারণে তার পাঁচগাছী ইউনিয়নের অধিকাংশ কাচা-পাকাধান তলিয়ে গেছে। অনেকেই বাধ্য হয়ে আধাপাকা ধান কেটে নিচ্ছেন।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আব্দুর রশীদ বলেছেন, দুই দিনের বৃষ্টিপাতে বোরো চাষিরা ধান কাটতে কিছুটা সমস্যার মুখে পড়ছেন। তবে ৭০ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে।
সরেজমিনে টাঙ্গাইল ও গাজীপুর জেলা ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকদের সোনার ফসল ধান নিয়ে নিত্য দুর্ভোগ। বৃষ্টি বিড়ম্বনায় কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ।

টাঙ্গাইলের সখীপুরের আড়াইপাড়া গ্রামের কৃষক জমির মিয়া বলেন, প্রতিদিনই দিনে একবার করে বৃষ্টি আসে। ধান কেটেছি এখন ভিজা ধান শুকাতেও পারছি না। খড় শুকাতে পারছি না। বেশি দিন ভিজা হলে খড় পচে যেতে পারে।

কচুয়া গ্রামের কৃষক নবি মিয়া বলেন, সকালে বৃষ্টি না এলে বিকেলে বা রাতে আসে। একটু রোদে শুকালে আবার ভিজে যায় যা শুকাতে লাগবো দুই দিন। কিছু ধান কাটার বাকি আছে আমার। ভেজা ধান নিয়েও বিপদে আছি।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বৃষ্টি বিড়ম্বনায় পাকাধানের পাশাপাশি যারা দান কেটেছেন তারাও শুকাতে না পারার কারণে আছেন দুশ্চিন্তায়। পাশাপাশি খড় নিয়েও আছেন বিপাকে। কেননা কৃষকরা বেশিরভাগ এই খড় গো খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করেন। অথচ রোদ না থাকায় খড় বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যারা এখনও ধান কাটতে পারেনি তারা শ্রমিক নিয়েও আছেন বিড়ম্বনায়। ধান কাটার মজুরি বেশি হয়ে যাচ্ছে আবার বৃষ্টিতো আছেই।

ডব্লিউএইচ/জেবি



ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর